• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

প্রশাসনেও হিন্দুত্ব

ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে হিন্দুত্বের দিকে টেনে আনাই আরএসএস-এর কাজ।

প্রতীকী চিত্র

মধ্যপ্রদেশে বিজেপি শাসনে রামমন্দির নির্মাণ আবহে সেই রাজ্যের পুলিশ প্রশিক্ষণে আবশ্যিক ছিল তুলসীদাসের রামচরিত মানস পাঠ। রামমন্দির নির্মাণের আবহ ফিকে হতেই এবার পুলিস কনস্টেবলদের গীতাপাঠ নিয়ে তেড়েফুঁড়ে নেমেছে বিজেপি সরকার। রাজ্যে খন, ধর্ষণ, দলিত নির্যাতনের মতো অপরাধ বেড়ে চললেও তা দমনে রাজ্যের পুলিস প্রশাসনের কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। রামের পর এবার কৃষ্ণ প্রচারের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যপুলিশের এডিজি রাজা বাবু সিং তাঁর নির্দেশে জানিয়েছেন, অগ্রহায়ণ হলো কৃষ্ণের পবিত্র মাস। এই মাসে কনস্টেবলদের প্রশিক্ষণে প্রতিদিন গীতার একটি করে অধ্যায় পাঠ চালু করতে হবে। গীতাপাঠ মানবজীবনকে সঠিক পথে চালিত করবে।

পাশাপাশি, পুলিশ কনস্টেবলদের গীতাপাঠের সঙ্গে তিন দিনের ধ্যান শিবিরের আয়োজন করছে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন। রাজ্যে আগামী ১৯ থেকে ২১ ডিসেম্বর চলবে এই ধ্যান শিবির। শেষ দিন ২১ ডিসেম্বর হবে আন্তর্জাতিক ধ্যান দিবস পালন। রাজ্যের ধর্মস্থানে হবে এই ধ্যান শিবির। ধর্মস্থানগুলির মধ্যে রয়েছে মহা বালেশ্বর মন্দির (উজ্জয়িনী), আপার লেক (ভোপাল), রাজওয়াদা (ইন্দোর), ধুয়ান্ধর ফলস (জব্বলপুর), খাজুরাহো মন্দির (ছত্তরপুর)। এই ধ্যান শিবিরে নাগরিক দেরও অবাধ প্রবেশাধিকার রয়েছে। রাজ্যে ৫৫টি জেলা থেকে পুলিশ আধিকারিকরা এতে যোগ দেবেন।

Advertisement

প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রদেশে ৮টি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এতে ৪ হাজার পুরুষ ও মহিলা পুলিশ কনস্টেবল প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। সব কেন্দ্রের সুপারদের কাছে গীতাপাঠের নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে। গত জুলাই মাসে কনস্টেবলদের ৯ মাসের এই প্রশিক্ষণের উদ্বোধনে রামচরিতমানস পাঠের নির্দেশ দেওয়া হয়। রাজ্য পুলিশের এডিজি রাজা বাবু সিং ১৯৯৪ সালের আইপিএস ব্যাচ। তিনি ২০১৯ সালে গোয়ালিয়র রেঞ্জের পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে থাকার সময় তিনি একইভাবে পুলিশের মধ্যে গীতাপাঠের প্রচার চালান। বিভিন্ন জেল সুপারদের তিনি গীতা বিলি করে প্রতিদিন গীতাপাঠের নির্দেশ দেন। পুলিশ প্রশিক্ষণের সময় তিনি বলেন, গীতা আমাদের ধর্মগ্রন্থ। কনস্টেবলরা প্রতিদিন পাঠ করলে তাঁরা সঠিক পথে থাকবেন।

Advertisement

মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারের নির্দেশে পুলিশ প্রধানের গীতাপাঠের নির্দেশ জারির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিরোধী দল কংগ্রেস। কংগ্রেসের অভিযোগ হলো, বিজেপি সরকার পুলিশ প্রশিক্ষণে ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে পুলিশ বাহিনীর গৈরিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। পুলিশের প্রশিক্ষণে ধর্মাচরণ সংবিধান বিরোধী আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ। তাই রাষ্ট্র ধর্মাচরণ পালনে থাকতে পারে না। পুলিশের প্রশিক্ষণও তাই ধর্ম পালনের অংশ হতে পারে না।

বিজেপি অবশ্য পুলিশ প্রশিক্ষণে ধর্মাচরণে কোনও অনিয়ম দেখেনি। বিজেপির সাফ কথা ভারতীয় হলে গীতাকে মানতে হবে। সারা বিশ্ব গীতাকে মানে। গীতা মেনে চলায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বগুরু হয়ে উঠবেন বলে বিজেপির দাবি।

বিজেপির নির্দেশে মধ্যপ্রদেশের এডিজি রাজা বাবু সিং সংবাদ চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমাদের কৃষ্ণের পবিত্র মাস অগ্রহায়ণ শুরু হচ্ছে আর কয়েক দিন পরই। আমি সমস্ত পুলিশ সুপারদের জানিয়েছি, তাঁরা পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের সময় তাঁদের গীতাপাঠ আবশ্যিক করুক। কৃষ্ণের পবিত্র অগ্রহায়ণ মাসে প্রতিদিন পুলিশ কর্মীরা ধ্যানে বসার আগে গীতার একটি অধ্যায় বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ করুক।’
গীতা পাঠের ইস্যু তুলে ফের বিজেপির হিন্দুত্ব জিগির তোলার অভিযোগ করেছে বিজেপি-বিরোধী দলগুলি। তারা বলছে, বাবরি মসজিদ ভেঙে ‘গরব সে কহো হাম হিন্দু হ্যায়’ জিগির তুলে যেন হিন্দুত্বের চড়া প্রচার তোলা হয়েছিল, সেই একই কৌশল এবারও নেওয়া হচ্ছে। চলছে মথুরায় কৃষ্ণের জন্মভূমি থেকে গীতাপাঠ ইস্যুকে সামনে রেখে।

ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে হিন্দুত্বের দিকে টেনে আনাই আরএসএস-এর কাজ। প্রকাশ্য রাজনৈতিক মঞ্চে একাজের দায়িত্ব বর্তেছে আরএসএস-এরই রিমোটেই পরিচালিত হয় বিজেপি। রাজনৈতিক ক্ষমতা তথা রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে রাস্তা হিসাবে আরএসএস খুঁজে নিয়েছে হিন্দুত্বকে। ধর্মবিশ্বাস, ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে তারা চায় হিন্দুদের জোটবদ্ধ করে হিন্দুত্বের রাজনৈতিক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে। দেশে হিন্দু জনসংখ্যা যেহেতু তিন চতুর্থাংশেরও বেশি তাই ভারতীয় হিন্দুদের ৭০ শতাংশকে ধর্মান্ধতায় ডুবিয়ে হিন্দুত্বের আফিম গেলানো গেলে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলে আর কোনও বাধা থাকবে না। এটাই আরএসএস তথা বিজেপির রাজনৈতিক অভিমুখ। তাই গীতাপাঠ বাধ্যতামূলক করে হিন্দুত্ব উসকে দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি আরও দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে নেমেছে সঙ্ঘ পরিবার। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংবিধানকে ওরা শেষ করে দিতে চাইছে।

Advertisement