• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

নতুন চাকরিপ্রার্থীদের বিকাশ ভবন অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার

অভিজ্ঞতার জন্য অতিরিক্ত ১০ নম্বর নিয়ে আপত্তি

অভিজ্ঞতার জন্য দেওয়া ১০ নম্বর বাতিল সহ কয়েকটি দাবিতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের এসএলএসটি ২০২৫–এর নতুন চাকরিপ্রার্থীদের বিকাশ ভবন অভিযানকে কেন্দ্র করে সোমবার ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেন্ট্রাল পার্কের সামনে আন্দোলনকারীদের অবস্থান বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশ ও চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ। চ্যাংদোলা করে ও টেনে হিঁচড়ে প্রার্থীদের বিক্ষোভস্থল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। মহিলা চাকরিপ্রার্থীদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুনরায় যাতে আন্দোলনকারীরা অবস্থান বিক্ষোভে না বসতে পারেন সেই কারণে তাঁদের ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যাওয়া হয় মেট্রো স্টেশনের ভিতরে। সেই সময় দরজা আগলে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশ।
গত ৪ সেপ্টেম্বর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসেছিলেন অনেক নতুন প্রার্থীই। তাঁদের মধ্যে অনেকেই লিখিত পরীক্ষায় ৬০-এ ৬০ পেয়েছেন। কারও নম্বর হয়তো ৫৯। কিন্তু তবুও তাঁদের নাম ইন্টারভিউয়ের তালিকায় নেই। অন্যদিকে কম নম্বর পেয়েও চাকরিচ্যুত একাধিক শিক্ষক ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পেয়েছেন। কারণ অভিজ্ঞতার জন্য তাঁদের অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়া হয়েছে। সেই কারণে ফের অনিয়মের অভিযোগে বিকাশ ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন নতুন চাকরি-প্রার্থীরা। তাঁদের দাবি, অভিজ্ঞতার জন্য বাড়তি ১০ নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, শূন্যপদের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর ওএমআর শিট প্রকাশ করতে হবে।
সোমবার দুপুরে করুণাময়ীতে জমায়েত করে প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। তারপর শুরু হয় মিছিল। সেই মিছিলটি সেন্ট্রাল পার্কের সামনে পর্যন্ত পৌঁছালে সেখানে আন্দোলনকারীদের আটকে দেয় পুলিশ। এরপর উন্নয়ন ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। অতিরিক্ত ১০ নম্বর বাতিল করে নতুন তালিকা প্রকাশ করার জন্য ৩ ঘণ্টার ডেডলাইনও বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু সেই সময়সীমা অতিক্রম হওয়ার আগেই পুলিশের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়। পুলিশের দাবি, এই অভিযানের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি।
তারা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এই অভিযান সম্পর্কে জানতে পেরেছে। বিকাশ ভবনে এতজনকে একসঙ্গে যেতে দেওয়া যায় না। কারণ সেখানে বিএনএস-এর ১৬৩ ধারা বলবৎ থাকে। চাকরিপ্রার্থীরা তা মানতে না চাওয়ায় পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও বাদানুবাদ শুরু হয়। এরপর উন্নয়ন ভবনের সামনে রাস্তায় বসে পড়েন চাকরিপ্রার্থীরা। এরফলে যাতায়াতের পথ কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। বারংবার পুলিশের তরফে তাঁদেরকে রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু সেই অনুরোধে কান না দেওয়ায় আন্দোলনকারীদের টেনে হিঁচড়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছে বলে শীর্ষ আদালতের নির্দেশে বাতিল হয়েছে এসএসসির ২০১৬ সালের গোটা প্যানেল। এর ফলে চাকরি হারান প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক। চাকরিহারাদের মধ্যে সকলেই দুর্নীতি করে চাকরি পাননি। এর ফলে প্রকাশ করা হয় যোগ্যদের তালিকা। এই যোগ্যদেরই অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর দেওয়ার কথা ঘোষণা করে স্কুল সার্ভিস কমিশন।
নতুন প্রার্থীদের অভিযোগ, চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার জন্য অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়ায় পুরো নম্বর পেয়েও নতুন প্রার্থীরা ইন্টারভিউতে ডাক পাননি। নতুন প্রার্থীদের সেই অভিজ্ঞতা না থাকায় তাঁদের বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। তাই সেই ১০ নম্বর অবিলম্বে বাতিল করার দাবি তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। নতুন প্রার্থীদের দাবি, একই পরীক্ষায় অংশ নিয়েও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অতিরিক্ত নম্বর প্রদান করা হলে ন্যায্য প্রতিযোগিতা নষ্ট হয়। সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতেই এদিন বিকাশ ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন নতুন চাকরিপ্রার্থীরা। পাশাপাশি শূন্যপদের সংখ্যা বাড়ানো ও প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর ওএমআর শিট প্রকাশের দাবিও তুলছেন তাঁরা।
আন্দোলনকারীদের শূন্যপদ বৃদ্ধির দাবি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি জানিয়েছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হোক। তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শূন্য পদ বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ না পুরো প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে এই নিয়ে আইনিভাবে কোনও কথা বলা উচিত হবে না। তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার বার্তা দিয়েছেন।

Advertisement

Advertisement