কলকাতায় অনুমোদিত নকশার বাইরে গিয়ে ছোটখাটো বাড়তি নির্মাণ দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং আইনে এমন পরিবর্তনকে ‘মাইনর ডেভিয়েশন’ বলা হয়। কোথাও ছাদের ধারে বাড়তি কার্নিস, কোথাও সিঁড়িঘরে অল্প বিস্তর সম্প্রসারণ, আবার কোথাও পুরো অনুমোদন ছাড়াই ছোট ঠাকুরঘর নির্মাণ। এইসব ‘মাইনর ডেভিয়েশন’ এতদিন পর্যন্ত ভাঙা হবে, নাকি রেগুলারাইজ করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছিল মেয়র ও মেয়র পরিষদের হাতে। কিন্তু ফাইলের চাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এবার সেই কাজের এক বৃহৎ অংশ সরাসরি বিল্ডিং বিভাগের ডিজির হাতে তুলে দিতে চাইছে কলকাতা পুরসভা।
পুরসভা সূত্রের দাবি, সাম্প্রতিক মেয়র পারিষদ বৈঠকেই এই প্রস্তাব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। মেয়র ফিরহাদ হাকিম স্পষ্ট বলেন যে, ছোটখাটো নিয়ম বিচ্যুতির জন্য প্রতি মাসে এত বিপুল সংখ্যক ফাইল পরিষদে আসা উচিত নয়। অধিকাংশ মেয়র পারিষদও তাঁর এই মত সমর্থন করেছেন। তাঁদের যুক্তি, ছোটখাটো বিচ্যুতি নিয়ে পরিষদের মূল্যবান সময় নষ্ট হওয়ায় অন্যান্য পরিকাঠামো ও নীতি-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাচ্ছে না।
Advertisement
গত কয়েক বছরে বেআইনি নির্মাণ দমনে কড়াকড়ি বাড়ানোর ফলে রেগুলারাইজেশনের আবেদন একাধিক গুণে বেড়েছে। পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘মাইনর ডেভিয়েশন’-এর ফাইল এখন এমনভাবে বাড়ছে যে, পরিষদের বৈঠকে আসা মোট নথির প্রায় ‘দুই-তৃতীয়াংশই’ ছোটখাটো অবৈধ নির্মাণকে ঘিরে। ফলে প্রকল্প পরিকল্পনা, রাস্তা-জল-ড্রেনেজ বা পরিকাঠামো উন্নয়নের মতো জরুরি আলোচনায় বাধা তৈরি হচ্ছে।
Advertisement
এই পরিস্থিতিতে ডিজিকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দিলে রেগুলারাইজেশন অনেক দ্রুত সম্পন্ন হতে পারে, এমনটাই মনে করছেন প্রশাসনের একাংশ। তাঁদের মতে, এতে সাধারণ নাগরিকদের কাজও মসৃণ হবে এবং পরিষদের বৈঠকও ‘ফাইলের জট’ থেকে মুক্ত হবে।
তবে সব মত এক নয়। পুর প্রশাসনের অন্য একটি অংশের আশঙ্কা, মেয়র থেকে ডিজির কাছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সরিয়ে দিলে আইনি সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ, পুর-আইন অনুযায়ী এখন ‘মাইনর ডেভিয়েশন’-এর ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অধিকার মেয়র ও মেয়র পরিষদের কাছে। আগের প্রশাসনের সময়ে ব্যক্তিগত সই করে ফাইল পাশ হওয়া নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তা রুখতেই বর্তমান মেয়র সব সিদ্ধান্ত পরিষদের টেবিলে তোলার নিয়ম করেছিলেন। এখন ডিজিকে সিদ্ধান্তের অধিকার দিতে গেলে আইন সংশোধন প্রয়োজন হতে পারে।
এই কারণেই পুরসভা বর্তমানে আইনজীবীদের মতামত নিচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট ধারাগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইনি সমস্যা না থাকলে দ্রুতই নতুন নিয়ম কার্যকর হতে পারে বলে সূত্রের দাবি। তাতে একদিকে যেমন রেগুলারাইজেশন প্রক্রিয়া দ্রুত হবে। অন্যদিকে, মেয়র পরিষদও সময় পাবে বৃহত্তর নীতি-নির্ধারণ সংক্রান্ত আলোচনায়।
সবশেষে, প্রস্তাব কার্যকর হবে কি না, তা নির্ভর করছে আইনি পরামর্শ ও পরিষদের শেষ সিদ্ধান্তের উপর।
Advertisement



