এসআইআর–এর নামে রাজ্যে সুপার এমার্জেন্সির মতো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে সোমবার ফের ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন নিয়ে সুর চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে অনুপ্রবেশের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দায়ী করে তাঁর ইস্তফার দাবি জানিয়েছেন মমতা। তিনি আরও জানিয়েছেন, এত কম সময়ে এসআইআর করা সম্ভব নয়। কোটি কোটি মানুষ এখনও এনুমারেশন ফর্ম পাননি। তাই অবিলম্বে এসআইআর প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিত। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা। তাঁর মতে, জিএসটি মেনে নেওয়া বড় ব্লান্ডার হয়েছিল।
দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবার উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। এদিন বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে মুখ্যমন্ত্রী চলে যান উত্তরবঙ্গের সচিবালয় উত্তরকন্যায়। সেখান থেকেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন। তারপর সাংবাদিক বৈঠকে বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন মমতা।
তিনি জানান, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ১০০ দিনের কাজ চালু হয়নি। আবাস যোজনার টাকাও দেয় না কেন্দ্র। ২০২১ সালের পর থেকে বাংলায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা রেখেছে। পশ্চিমবঙ্গকে ভাতে মারার চেষ্টা চলছে। এছাড়াও জিএসটি নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মমতা। জিএসটি পুনর্বণ্টনের দাবি তুলে তিনি জানিয়েছেন, জিএসটি মেনে নেওয়া বড় ব্লান্ডার হয়েছিল। এভাবে রাজ্যের হকের টাকা কেড়ে নেওয়া যাবে না। জিএসটির টাকা রাজ্যকে ফেরত দিতে হবে।
তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র যখন জিএসটির প্রস্তাব রেখেছিল তখন রাজ্য সরকার সমর্থন জানিয়েছিল। রাজ্যের এই পদক্ষেপকে ‘বড় ব্লান্ডার’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন মমতা। কারণ জিএসটির শেয়ারের টাকা অন্য রাজ্যকে দেওয়া হলেও বাংলাকে দেওয়া হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, রাজ্যের প্রাপ্য ট্যাক্স রাজ্যকে ফেরত দেওয়া উচিত। রাজ্যে কোনও দুর্যোগ হলে ন্যূনতম ক্ষতিপূরণ কেন্দ্রের কাছ থেকে পাওয়া যায় না।
ভারত সরকারকে ‘দালালদের সরকার’ বলে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেন্ট্রাল গভর্মেন্টের ডিফেন্স আর বর্ডার ছাড়া রাজ্যে আর কোনও মুভমেন্ট নেই। আমাদের টাকা ধ্বংস করবে, আবার আমাদেরই অপপ্রচার চালাবে। টোটাল লুট, আর বলছে ঝুট। টাকা তো দেয়ইনি উল্টে রাজ্য থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। মানুষ হেলথ ইন্স্যুরেন্স থেকে সুবিধা পাচ্ছে, এর জন্য আমাদের ফান্ড থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা চলে গিয়েছে। কিন্তু এর জন্য মিরজাফর, গদ্দারদের কোনও ভূমিকা নেই।’
এসআইআর আতঙ্কে রাজ্যে একের পর এক মৃত্যু হচ্ছে। এর জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করেছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, নোটবন্দির পর এসএসআইআর হল ভোটবন্দি। এই প্রক্রিয়ার জন্য ২ বছর সময় নেওয়া যেত। এসআইআর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এত তাড়াহুড়ো কেন করা হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি এদিন অনুপ্রবেশ ইস্যুতেও কেন্দ্রকে তোপ দাগেন মমতা। তিনি জানান, সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রের বিএসএফের হাতে। তাই অনুপ্রবেশের দায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিতে হবে। এদিন ফের একবার অমিত শাহের ইস্তফার দাবি তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা আরও জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যে নির্বাচন ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগে এত কম সময়ের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিলি ও ফর্ম ফিলআপ করিয়ে জমা নেওয়া কার্যত অসম্ভব। মমতার কথায়, ‘এই তিন মাস যাতে রাজ্য কোনও কাজ করতে না পারে, তাই সুপার এমার্জেন্সির মতো অবস্থা তৈরি করে অফিসারদের আটকে রেখেছে। শিক্ষকদের স্কুল করতে হচ্ছে, আবার বিএলও-র দায়িত্বও সামলাতে হচ্ছে। ২ ঘণ্টায় কত বাড়ি যেতে পারবে?’ ফের একবার মমতা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ভোটার তালিকা থেকে একজন বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলে তিনি ছেড়ে কথা বলবেন না। আঘাত করলে প্রত্যাঘাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
জনগণমন বিতর্কেও এদিন মুখ খোলেন মমতা। বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছেন। কখনও শিক্ষাব্যবস্থা, সংবিধান, আম্বেদকরের নামে বিতর্ক। যা ইচ্ছে তাই করছেন। বন্দেমাতরম ও জনগণমন নিয়ে ঝগড়া বাঁধাচ্ছেন? লজ্জা করে না? আমাদের কাছে বন্দেমাতরম এবং জনগণমন সমান সম্মানের।’
Advertisement