পহেলগামে জঙ্গি হামলার নৃশংস ঘটনা এখনও ভুলতে পারেনি উপত্যকা। ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর দুঃসহ স্মৃতি, দীর্ঘদিন বন্ধ পর্যটন কেন্দ্র— যেন থমকে গিয়েছিল কাশ্মীরের প্রাণস্পন্দন। অপারেশন সিঁদুর সন্ত্রাস রুখলেও কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবসা এখনও অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। পুজোয় লোকসান আরও চিন্তা বাড়িয়েছে। কিন্তু শীতে আগাম তুষারপাত যেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে কাশ্মীরের পর্যটন নির্ভর বাসিন্দাদের।
গত দু’দিনের বরফে ঢেকে গিয়েছে গুলমার্গ ও সোনমার্গ অঞ্চল। পাহাড়-উপত্যকার সেই শ্বেতশুভ্র সৌন্দর্য স্থানীয়দের আবার ভরসা জুগিয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর বলছে, গোটা সপ্তাহ ধরেই তুষারপাত হতে পারে, যা পর্যটন শিল্পের জন্য একটি বড় সুখবর।
Advertisement
পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত বাসিন্দারা বলছেন, মরশুমের এতো আগে বরফ পড়া খুবই আশাব্যঞ্জক। বিজয়ার রাতেই এই মরশুমের প্রথম তুষারপাত হয়েছিল। তার পর ফের বরফ পড়ায় বুকিংয়ের ফোন আসতে শুরু করেছে। বহু ট্যুর অপারেটর বলছেন, ‘এটাই আমাদের জন্য সেই সোনার দিন, পুনরায় পর্যটকদের সমাগমের ইঙ্গিত।’
Advertisement
এদিকে বিদেশি পর্যটকদেরও ভিড় বাড়তে পারে। শীতকালীন স্কি, স্নোবোর্ডিং, ট্রেকিং— কাশ্মীরের শীতের এগুলি মূল আকর্ষণ। এই তুষারপাতের খবর ছড়াতেই সামাজিক মাধ্যমে সাড়া পড়ে গিয়েছে। গুলমার্গ–সোনামার্গের ছবি দেখেই বহু পর্যটক আগাম বুকিংয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও আশাবাদী। অনেকদিন পর পর্যটনশিল্পে জোয়ার আসার সম্ভাবনা দেখছেন সবাই। গুলমার্গে টাট্টু ঘোড়া মালিক হাসান বলেন, ‘বরফ মানেই কাজের সুযোগ।’ বৈসরণ এলাকায় কাওয়া বিক্রেতা ইরশাদ বলেন, ‘এ বছর বিক্রি বাড়বে বলে অনেকটাই নিশ্চিত।’
এদিকে, পর্যটন পরিকাঠামোয় বড় অগ্রগতি হয়েছে। পহেলগামের বৈসরণে ‘কেবল কার’ প্রকল্পে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত অনুমতি দিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা। জঙ্গি হামলার জায়গাতেই যাত্রীনিবাস থেকে বৈসরণের বিস্তৃত তৃণভূমি পর্যন্ত ১.৪ কিমি দীর্ঘ রোপওয়ে নির্মাণ হবে। এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি টাকা।
মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা জানিয়েছেন, কাজ শুরু হলে দেড় বছরের মধ্যেই প্রকল্প সম্পূর্ণ হবে। ৯.১৩ হেক্টর বনাঞ্চলের উপর দিয়ে যাবে এই রোপওয়ে। পর্যটন শিল্পের গতিপথই পাল্টে দিতে পারে এই নতুন উদ্যোগ।
প্রসঙ্গত, জঙ্গি হামলার ক্ষত ধীরে ধীরে সেরে উঠছে। আর সেই ক্ষতে বরফের চাদর বিছিয়ে দিচ্ছে নতুন আশার আলো। কাশ্মীরবাসী বিশ্বাস করছেন, চলতি শীতেই আবার প্রাণ ফিরে পাবে ভূস্বর্গের পর্যটন ব্যবসা।
Advertisement



