প্রায় তিন বছর ধরে থমকে ছিল রাজ্যের ১০০ দিনের কাজ। অবশেষে সেই প্রকল্প নতুন করে গতি পেতে চলেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ হাতে পৌঁছতেই নবান্নে শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ। কর্মসূচি ফের চালুর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি, নথিপত্র যাচাই, জেলা পর্যায়ে প্রস্তুতি— সব কিছুতেই এখন তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। দপ্তর সূত্রের ইঙ্গিত, যে কোনও দিন থেকেই রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় কাজ শুরু হয়ে যেতে পারে।
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে জব কার্ড হোল্ডারদের পরিচয় যাচাইয়ের উপর। বর্তমানে রাজ্যে এই কার্ডধারীর সংখ্যা ২ কোটি ৫৬ লক্ষেরও বেশি। তাঁদের বেশির ভাগের আধার যুক্ত থাকলেও ই-কেওয়াইসি আপলোডে কর্মীরা নানা প্রযুক্তিগত ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে উঠে আসা রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, সার্ভার অনিয়মিত ভাবে ডাউন হয়ে যাওয়ায় কেওয়াইসির গতি বারবার আটকে যাচ্ছে। একটি জেলা প্রশাসনিক সূত্র বলছে, ‘একসঙ্গে বহু কেওয়াইসি আপলোড হওয়ায় চাপ বাড়ছে। কিছুটা সময় দিলেই সমস্যা মিটে যাবে।’ নবান্নের লক্ষ্য, আদালতের নির্দেশ মেনে যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পকে কার্যকর করে তোলা।
Advertisement
গত কয়েক বছরে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লক্ষাধিক শ্রমিক নিয়মিত কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছিলেন। ২০২১ সালে অনিয়মের অভিযোগ তুলে কেন্দ্র অর্থ সরবরাহ বন্ধ করে দিলে প্রকল্প কার্যত অচল হয়ে পড়ে। বহু শ্রমিকের পরিবারে তখন চরম আর্থিক সংকট লক্ষ্য করা যায়। রাজ্য সরকারের দাবি, বারবার চিঠি চালাচালি করেও কেন্দ্রকে তহবিল মুক্তিতে রাজি করানো যায়নি।
Advertisement
অবশেষে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় রাজ্য সরকারকে। চলতি বছরের ১৮ জুন কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, কোনও সরকারি কর্মসূচি অনির্দিষ্টকাল স্থগিত রাখা যায় না। শর্তসাপেক্ষে প্রকল্প চালুর নির্দেশ দেয় আদালত। কেন্দ্র উচ্চ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করলেও ২৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট জানায়, হাইকোর্টের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। এরপরই প্রকল্প পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে সমস্ত আইনি বাধা সরে যায়।
এদিকে এই রায়ের রাজনৈতিক প্রভাবও কম নয়। এই কয়েক বছরে তৃণমূল কংগ্রেস বারবার অভিযোগ করেছে যে, কেন্দ্র ‘বঞ্চনা’র রাজনীতি করছে। এই প্রকল্প বন্ধের প্রতিবাদে দিল্লিতে বিক্ষোভ, গিরিরাজ সিংহের দপ্তরে অভিযান চালানো হয়। সেই লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় শাসকদলের নেতাদের দাবি, আদালতের নির্দেশ প্রকৃত অর্থেই রাজ্যের ন্যায়সংগ্রামের সাফল্য। রাজনৈতিক মহলের মতে, ভোটের আগে প্রকল্প ফের চালু হলে শাসকদলের পক্ষে তা বড় সুবিধা এনে দিতে পারে।
সব মিলিয়ে রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতিকে ফের সচল করতে এই প্রকল্প যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, তা নিয়ে প্রশাসনের কোনও সংশয় নেই। নবান্নের স্পষ্ট বার্তা— শ্রমিকদের হাতে বহু প্রতীক্ষিত ন্যায্য মজুরি পৌঁছে দিতেই দ্রুত প্রকল্পের চাকা ঘোরানো হবে।
Advertisement



