• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম পর্বের ফলপ্রকাশ, মেধাতালিকার ৬৯ জনের মধ্যে ৫৫ জনই রামকৃষ্ণ মিশনের

মেধাতালিকায় জয়জয়কার রামকৃষ্ণ মিশনের পড়ুয়াদের

ফাইল ছবি

প্রকাশিত হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম পর্বের ফলাফল। পরীক্ষার ঠিক ৩৯ দিনের মাথায় শুক্রবার ফল প্রকাশ করল পর্ষদ। এদিন বিদ্যাসাগর ভবন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম পর্বে পাশের হার ৯৩.৭২ শতাংশ এবং প্রথম দশে রয়েছে ৬৯ জন। পাশের নিরিখে প্রথমস্থানে আছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং দ্বিতীয় স্থানে নদিয়া। ১২ নম্বরে রয়েছে কলকাতা। তবে এই ফল শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পর্ষদ। মেধাতালিকায় জয়জয়কার রামকৃষ্ণ মিশনের পড়ুয়াদের।
এবার উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন নরেন্দ্রপুর ও রামকৃষ্ণ মিশন পুরুলিয়ার ছাত্ররা। মেধাতালিকায় ৬৯ জনের মধ্যে ৫৫ জন এই দুই স্কুলের ছাত্র। এর মধ্যে ২৪ জন পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ এবং ৩১ জন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের ছাত্র। এই সাফল্যের কারণ জানিয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। তিনি জানিয়েছেন, রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্রদের আগে থেকেই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অর্থাৎ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা, জেইই মেনস, জেইই অ্যাডভান্স, নিট ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হয়। সেই কারণে ওএমআর শিট ভিত্তিক এই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফল হতে তাদের অসুবিধা হয়নি।
এবারই প্রথম দেশের মধ্যে প্রথম কোনও রাজ্যে সেমেস্টার পদ্ধতিতে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিল। এই প্রথম ওএমআর শিটে পরীক্ষা দিয়েছে রাজ্যের পড়ুয়ারা। ছাত্রছাত্রীরা যাতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে পারেন সেই বিষয়টি মাথায় রেখে এই পরীক্ষায় ৫–১০ শতাংশ প্রশ্ন করা হয়েছিল। এই প্রশ্নগুলি ছিল যথেষ্ট কঠিন।
পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ ও রেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক বেশি চর্চা করে। আগে থেকেই তাদের এই সব পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হয়। সেই কারণে এই দুই স্কুল থেকে এত বেশি সংখ্যক ছাত্র মেধাতালিকায় জায়গা করে নিতে পেরেছে। এবার যুগ্মভাবে যে দুই জন ছাত্র প্রথম স্থানাধিকারী হয়েছেন তাঁরাও রামকৃষ্ণ মিশন পুরুলিয়ার ছাত্র। তাদের নাম প্রীতম বল্লভ এবং আদিত্য নারায়ণ জানা৷ দুজনের প্রাপ্ত নম্বর ৯৮.৯৭ শতাংশ। এবার পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন থেকে ৬৪ জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল। তার মধ্যে ২৪ জনই মেধাতালিকায় রয়েছেন।
 উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথমপর্বের পরীক্ষা শেষ হয়েছিল ২২ সেপ্টেম্বর। নতুন নিয়ম অনুযায়ী এবছর থেকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে মোট ৪টি সেমেস্টারে পরীক্ষা হবে। তৃতীয় ও চতুর্থ সেমেস্টার নিয়ে হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম পর্যায় অর্থাৎ তৃতীয় সেমেস্টার হয়েছে সেপ্টেম্বরে। দ্বিতীয় পর্যায় অর্থাৎ চতুর্থ সেমেস্টার হবে আগামী বছর মার্চ মাসে। দু’টি পর্যায়ের পরীক্ষার নম্বর একসঙ্গে যোগ করে উচ্চ মাধ্যমিকের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা হয়েছে ওএমআর সিটে এবং প্রশ্ন ছিল এমসিকিউ ধরনের।
উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম পর্যায়ের সেমেস্টারে প্রথম দশে রয়েছে ৬৯ জন। তাদের মধ্যে ৬৮ জনই বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়া। মাত্র ১ জন কমার্সের পড়ুয়া। সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, গোলাম ফয়জল বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র। এই বিভাগ থেকে সে–ই একমাত্র প্রথম দশে স্থান পেয়েছেন। অন্যদিকে প্রথম দশে রয়েছে মাত্র তিন জন ছাত্রী। দীপান্বিতা পাল মেয়েদের মধ্যে প্রথম হলেও সার্বিকভাবে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৯৮.৪২ শতাংশ।
দীপান্বিতা দক্ষিণ দিনাজপুর দৌলতপুর হাই স্কুলের ছাত্রী। মেধাতালিকায় মেয়েদের কম উপস্থিতির পাশাপাশি ৬৯ জনের মধ্যে মাত্র ১জন ছাত্র বাণিজ্য বিভাগের। অন্যদিকে কলা বিভাগ থেকে কোনও পড়ুয়াই প্রথম দশে স্থান পায়নি। মেধাতালিকা অনুয়াযী, দ্বিতীয়স্থানে রয়েছে ১০ জন পড়ুয়া। তারা হলেন পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়, সৃজন পরিচা, সৌমাল্য রুদ্র, ত্রিদেব চক্রবর্তী, সিউড়ির তপোব্রত দাস, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের অর্কদ্যুতি ধর, অরিত্র সরকার, ঐতিহ্য পাঁচাল, প্রত্যুষ পাল। তারা প্রত্যেকে ৯৮.৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। তৃতীয়স্থানে রয়েছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের সোহম ভৌমিক। সে ৯৮.৯২ শতাংশ নম্বর পেয়েছে।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এবার বেস্ট অফ ফাইভ অর্থাৎ সর্বাধিক নম্বর প্রাপ্ত যে কোন পাঁচটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে রেজাল্ট তৈরি করা হয়নি। পরীক্ষার্থীদের বাছাই করা প্রধান পাঁচটি বিষয়ের উপরেই নির্ভর করে রেজাল্ট তৈরি হয়েছে। পরীক্ষার্থী যে বিষয়টিকে অপশনাল বলে বেছে নিয়েছিল সেটির নম্বর বেশি হলেও তা যোগ করা হয়নি। তবে সেই বিষয়ের নম্বর রেজাল্টে উল্লেখ আছে। বেস্ট অফ ফাইভ ধরে রেজাল্ট প্রকাশ করা হলে মোট নম্বর আরও বৃদ্ধি পেত বলে জানিয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য।
পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক স্বামী জ্ঞানরূপানন্দ মহারাজ বলেন, ‘এবার এই বিদ্যাপীঠ থেকে মোট ৬৪ জন ছাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল। তারমধ্যে ২৪ জন মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে। ছাত্ররা আমাদের গর্বিত করেছে। বিদ্যাপীঠের সমস্ত সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারী, শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই ফলাফল। অবশ্যই আমাদের সবার মাথার উপর রয়েছে ভগবান শ্রী রামকৃষ্ণ দেব, মা সারদামণি ও  স্বামী বিবেকানন্দের আশীর্বাদ। আমরা আশা করব চতুর্থ সেমিস্টারে ছাত্ররা এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে বা এর থেকেও ভালো ফল করবে। এই ফলাফল আমাদের সকলের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল। ছাত্র ও শিক্ষকদের কাছে আমার আবেদন চতুর্থ সেমিস্টারে ফলাফল এর থেকেও যেন ভালো হয়।’

Advertisement

Advertisement