মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিরক্ষা দপ্তরকে দ্রুত পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করার যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা আন্তর্জাতিক মহলে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এই পদক্ষেপকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে আখ্যা দিয়েছে ইরান। প্রসঙ্গত, ইরান–আমেরিকা দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে বরাবরই ছিল পরমাণু শক্তি নিয়ে আমেরিকার আগ্রাসী মনোভাব। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে অস্ত্রপরীক্ষা শুরুর নির্দেশকে ইরান সরাসরি বিদ্রুপ করেছে।
ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছেন, আমেরিকা একদিকে বিশ্ববাসীকে পরমাণু অস্ত্র পরিত্যাগের বার্তা দিচ্ছে, অন্যদিকে নিজেরাই আবার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রকল্পে বাধা দিতে আমেরিকা সক্রিয় থাকলেও নিজেদের ক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণ করছে। আরাঘচির মতে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই নয়, বিশ্বশান্তির ক্ষেত্রেও গভীর বিপদের ইঙ্গিত।
Advertisement
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উত্তেজনার আবহ নতুন নয়। গত সপ্তাহেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেন, পরমাণু অস্ত্রবহনকারী ‘বুরেভেস্টনিক’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে। পাশাপাশি ‘পোসাইডন’ নামের পরমাণু শক্তিচালিত টর্পেডোর পরীক্ষাও সফল হয়েছে বলে জানিয়েছিল মস্কো। আরও উন্নত সারমাট ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। এমন অবস্থায় আমেরিকার তরফে নতুন পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা আন্তর্জাতিক উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে উল্লেখ করেন যে, আমেরিকার পরমাণু অস্ত্র–ভাণ্ডার বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। তিনি দাবি করেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর পদক্ষেপে আমেরিকার পরমাণু অস্ত্র আধুনিকীকরণ সম্ভব হয়েছে। যদিও তিনি বলেন, পরমাণু শক্তি ধ্বংসাত্মক বলে তিনি এই অস্ত্র পছন্দ করেন না। তবুও রাশিয়া এবং চিনের ক্রমবর্ধমান শক্তির মুখে তাঁর কাছে কোনও বিকল্প ছিল না।
ট্রাম্পের মতে, পরবর্তী পাঁচ বছরে রাশিয়া ও চিন পরমাণু শক্তির নিরিখে আমেরিকার সমসাময়িক হয়ে উঠতে পারে। তাই আমেরিকার অস্ত্রভাণ্ডার পরীক্ষা ও শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত জরুরি। অন্যদিকে ইরান স্পষ্ট জানিয়েছে, আমেরিকার সামনে তারা মাথা নত করবে না। নিজেদের শর্তে চুক্তি হলে তবেই তারা স্বাক্ষর করতে আগ্রহী। এই বিরোধ বহুদিনের, আর ঠিক সেই সময়েই ট্রাম্পের পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলল।
Advertisement



