• facebook
  • twitter
Thursday, 18 December, 2025

আগামী মাসে শুরু হতে পারে এসআইআর, কী কী নথি লাগবে জেনে নিন

বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের হওয়া বৈঠক থেকে এই ইঙ্গিত মিলেছে বলে খবর

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই শুরু হতে চলেছে রাজ্যে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের হওয়া বৈঠক থেকে এই ইঙ্গিত মিলেছে বলে খবর। ছাব্বিশে বিধানসভা ভোট হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ–সহ পাঁচ রাজ্যে। বাকি রাজ্যগুলি হল অসম, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি এবং কেরল।

পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ নিবিড় সংশোধন নিয়ে কমিশনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। সূত্রের খবর চলতি বছরের মধ্যেই তালিকা সংশোধনের কাজ শেষ করতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। এসআইআরের চূড়ান্ত তালিকা ধরেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন করা হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। আগামী তিন মাসের মধ্যেই কমিশনকে যাচাই করতে হবে রাজ্যের প্রায় ৩.৫ কোটি ভোটারের তালিকা।

Advertisement

কমিশন সূত্রে খবর, ২০০২ সালের তালিকা এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। দু’টি তালিকা মিলিয়ে দেখা গেছে প্রায় ৫২ শতাংশ ভোটারের তথ্য মিলে গিয়েছে।  বর্তমানে রাজ্যের মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৭.৬ কোটি। সেক্ষেত্রে প্রায় অর্ধেকের বেশি ভোটারের তথ্য মিলছে না। এখনও জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলার তালিকা যাচাই বাকি রয়েছে বলে খবর। দুই জেলা মিলিয়ে প্রায় ৪০ লক্ষ ভোটারের তালিকা যাচাই করতে হবে। ফলে  ভোটার যাচাইয়ের মোট সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৩.৫ কোটি। কমিশন সূত্রে খবর, বিহারে ২ কোটি ভোটারকে এই প্রক্রিয়ায় যাচাই করেছিল নির্বাচন কমিশন।

Advertisement

প্রতি বছরই ভোটার তালিকা সংশোধন করা হয়। নতুন নাম যেমন নথিভুক্ত করা হয় তেমনি মৃত এবং অবৈধ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ এবং নিবিড় নয় বলে মনে করছে কমিশন। নাম তোলা এবং বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় গলদ থাকছে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। এসআইআরের মাধ্যমে ভোটার তালিকাকে আরও নিঁখুত করতে চাইছে কমিশন। আর এই প্রক্রিয়া দু’টি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কোনও বৈধ ভোটার যেন বাদ না পড়ে এবং একজনও অবৈধ ভোটার যেন তালিকায় না থাকে।

এ রাজ্যে ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় শেষ বার এসআইআর হয়েছিল। গত ১০-১৫ বছরে সারা দেশে এসআইআর হয়নি। কমিশন জানিয়েছেন, এসআইআরের জন্য নির্দিষ্ট কোনও দিনক্ষণ নেই। প্রয়োজন অনুযায়ী এই প্রক্রিয়া করা হয়। তবে এসআইআর নিয়ে বিরোধীরা বিজেপি নিশানা করেছেন। এসআইআরে বিজেপির ভাবনা কাজ করছে বলে মনে করছেন বিরোধীরা। অন্যদিকে বাংলাদেশ এবং মায়ানমার থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের রুখতে এসআইআর চাইছে বিজেপি। কমিশনকে দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের নাম বাদ দিতে মরিয়া গেরুয়া শিবির।

 বিশেষ নিবিড় সংশোধনে মোট ১১টি নথির উল্লেখ রয়েছে। বিহারে এসআইআর নিয়ে মামলায় সুপ্রিম কোর্ট আধার কার্ডকে ১২তম নথি হিসেবে যুক্ত করার কথা বলেছে। যদিও আধার কার্ড নাগরিক প্রমাণপত্র নয়। পরিচয়পত্র হিসেবে দেখার জন্য বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। এসআইআরের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘এনুমারেশন ফর্ম’  পৌঁছে দেবেন বুথ লেভেল অফিসারেরা।

দু’একটি পরিবর্তন ছাড়া বিহারের মতো পশ্চিমবঙ্গেও একইভাবে এসআইআর হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রাজ্যে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে তাঁদের কোনও নথিই দিতে হবে না বলে খবর। ওই তালিকায় নাম দেখাতে পারলেই এসআইআরে তাঁদের নাম উঠে যাবে। কমিশন জানিয়েছে, ওই ১১টির মধ্যে যে কোনও একটি নথি এবং ২০০২ সালের তালিকায় বাবা অথবা মায়ের নাম দেখাতে পারলেই নতুন তালিকায় নাম উঠবে।

 এসআইআরে যে সব নথি লাগবে সেগুলি হল-  ১) কেন্দ্রীয় অথবা রাজ্য সরকারের কর্মী হিসাবে কাজ করেছেন অথবা পেনশন পান এমন পরিচয়পত্র। ২) ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, এলআইসি, স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া যে কোনও নথি। ৩) জন্ম শংসাপত্র। ৪) পাসপোর্ট। ৫) মাধ্যমিক বা তার অধিক কোনও শিক্ষাগত শংসাপত্র। ৬) রাজ্য সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দেওয়া বাসস্থানের শংসাপত্র।

৭) ফরেস্ট রাইট সার্টিফিকেট। ৮) জাতিগত শংসাপত্র। ৯) কোনও নাগরিকের ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার। ১০) স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া পারিবারিক রেজিস্ট্রার। ১১) জমি অথবা বাড়ির দলিল। এ ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী পরিচয়পত্র হিসাবে আধার কার্ড দেখানো যাবে। তবে তা দেখিয়ে নাগরিকত্বের দাবি করা যাবে না। কমিশন জানিয়েছে, আধার কার্ডের সঙ্গে এই ১১টি নথির যে কোনও একটি দিতে হবে। এই ১১টি নথির বাইরে কোনও নথি যদি নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারে, তবে তা-ও গ্রহণ করা হবে।

এসআইআর ঘোষণার পরেই দিল্লি থেকে এনুমারেশন ফর্মের ‘সফ্ট কপি’  ইআরও-দের পোর্টালে পাঠিয়ে দেবে কমিশন।  ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা সকলেই এনুমারেশন ফর্ম পাবেন। প্রত্যেক ভোটারের এনুমারেশন ফর্ম আলাদা। ভোটারের এপিক নম্বর, নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ-সহ ৯০ শতাংশ তথ্য ফর্মে ছাপা থাকবে।

একজন ভোটার প্রতি দু’টি করে এনুমারেশন ফর্ম ছাপবে কমিশন। এখন পশ্চিমবঙ্গের ভোটার সংখ্যা প্রায় ৭.৬৫ কোটি। তার দ্বিগুণ ফর্ম ছাপা হবে। ওই ফর্মগুলি প্রত্যেক ভোটারের বাড়িতে পোঁছে দেবেন বিএলও-রা। ফর্মের বাকি অংশ পূরণ করে উপযুক্ত নথি-সহ ফর্ম জমা দিতে হবে। একটি ফর্ম ভোটারের কাছে থাকবে এবং অন্যটি থাকবে বিএলও-র কাছে।

২০০২ সালের ভোটার তালিকায় পরিবারের কারও নাম নেই এবং ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে ব্যর্থ, তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে কমিশন। আধিকারিকদের একাংশের অনুমান, এক কোটির কাছাকাছি নাম বাদ পড়তে পারে। কোনও ভোটার তালিকায় নাম নেই, এমন ব্যক্তিদের নতুন করে ভোটার তালিকায় নাম তোলাতে হবে। তাঁরা এনুমারেশন ফর্ম পাবেন না। তাঁদের কমিশনের ৬ নম্বর ফর্মে আবেদন করে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। কমিশনের আগের বেঁধে দেওয়া নিয়মেই নাম তোলা যাবে।

এসআইআর হলে ২০২৬ সালে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। কোনও ভোটার এসআইআরে অংশ না নিলে নতুন তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ যাবে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না তাঁরা। নতুন ভোটার তালিকায় নাম রাখতে গেলে যে কোনও উপায়ে এসআইআর প্রক্রিয়ায় আসতেই হবে। ২০০২ সালে রাজ্যে ভোটার ছিল ৪.৫৮ কোটি। এখন তিন কোটি বেড়ে মোট ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭.৬৫ কোটি। যার উপর ভিত্তি করে বিশেষ সংশোধন করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন।

২০০২ সালের সঙ্গে ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। দুই তালিকাতেই যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা ম্যাপিংয়ের আওতায় আসবেন। ২০০২ সালে এসআইআরের তালিকা সিইও দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা আছে। কেউ দেখতে চাইলে সেখানে থেকে আগের তালিকা দেখতে পারবেন।  তখনকার বিধানসভা এলাকা অনুযায়ী তালিকা প্রকাশিত করা আছে। ভোটগ্রহণ কেন্দ্র মিলিয়ে নাম রয়েছে কি না তা যাচাই করতে পারবেন ভোটারেরা। প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলের বুথ লেভেল এজেন্টদের সাহায্য নিতে পারবেন ভোটাররা।

Advertisement