• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

দিল্লির দূষণ নিয়ে রাজনৈতিক তরজা, কাঠগড়ায় রেখা

আম আদমি পার্টির দিল্লির প্রধান সৌরভ ভরদ্বাজ কার্যত বিদ্রুপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তকে

ফাইল চিত্র

দীপাবলি উপলক্ষে সবুজ বাজি ফাটানোয় অনুমতি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে পাশাপাশি প্রশাসনকেও সতর্ক করে বলা হয়েছিল কড়া নজরদারি চালানোর জন্য। সেই মতো আদালত ২ দিন সকাল ৬টা থেকে ৭টা এবং রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু তবুও মঙ্গলবার দুষণে ভারী রাজধানীর আকাশ। দিল্লির পরিবেশকে আরও দূষিত করে তোলা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
 
দীপাবলির পরের দিনই ‘অত্যন্ত খারাপ’ থেকে ‘ভয়াবহ’ রাজধানীর একিউআই। ৩৮টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫টিই ছিল লাল অঞ্চলে। দূষণ রুখতে সুপ্রিম কোর্টের কড়া নির্দেশ ও আদালতের দেওয়া সময়সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে পারস্পরিক দোষারোপের পালা।

 
আম আদমি পার্টির দিল্লির প্রধান সৌরভ ভরদ্বাজ কার্যত বিদ্রুপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তকে। তিনি বলেছেন, ‘সরকার কী করেছে জানি না। মুখ্যমন্ত্রী একিউআই বানানই জানেন না। উনি আইকিউ, কিউকিউ বলে থাকেন। একিউআই উচ্চারণও করতে পারেন না। এসবের কিছু বোঝেনও না। সরকার দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ।’ তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম বৃষ্টি নিয়েও দিল্লির বিজেপি সরকার সঠিক কথা বলছে না। তাঁর কথায়, ‘দীপাবলির পর কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি ঘটিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছিল। তা হয়েছে কি ?
কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টি ঘটানোর উপায় থাকলে তা করা হল না কেন ? মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ুন এটাই কি তাঁরা চান ?’একই অভিযোগ করেছেন আম আপ-এর বিধায়ক গোপাল রাই। তিনি বলেন, ‘এই সরকার কিছুই করছে না শুধু অজুহাত দেওয়া ছাড়া। অন্য রাজ্যকে দোষ দিতে পারলেই হল। উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, সব  জায়গায় তো বিজেপিই ক্ষমতায়!’
 
দিল্লির দূষণ নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেসও। কংগ্রেসের মুখপাত্র শামা মহম্মদ বলেছেন, ‘দিল্লির বেশিরভাগ জায়গায় একিউআই ৪০০ ছাড়িয়েছে। দূষিত বাতাসে মানুষের শ্বাসরোধ হয়ে আসছে। তাঁরা বাইরে বেরোতে পারছেন না। নরেন্দ্র মোদী গত ১১ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী। এখন আবার দিল্লিতেও বিজেপি-র মুখ্যমন্ত্রী. বাজির ছাড়পত্র জোগাড় করতে তিনি আবার আদালতে গিয়েছিলেন। রেখা গুপ্ত এবং দিল্লি পুলিশ আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে। মধ্যরাত পর্যন্ত বাজি যথেচ্ছভাবে পোড়ানো হয়েছে। এই বাতাস শিশু ও প্রবীণদের জন্য মারাত্মক। দিল্লিবাসী হতাশ।’
 
যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি শিবির। দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী মনজিন্দর সিং সিরসা বলেছেন, ‘পড়শি রাজ্যের দূষণের দায় দিল্লির। সুপ্রিম কোর্টের নিষেধের পরও ফসলের গোড়া পোড়ানো হচ্ছে।’ বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যর বক্তব্য, ‘অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পাঞ্জাব সরকার ফসলের গোড়া পোড়ানো বন্ধ না করলে শ্বাসরোধ হবেই। আপ-এর দোষ ঢাকতে দীপাবলিকে দায়ী করা বন্ধ করুন। ওদের ধোঁয়াতেই রাজধানী অন্ধকার। বাজির ধোঁয়ায় নয়।’
 
দিল্লির আর এক মন্ত্রী আবার সাধারণ মানুষকেই এর জন্য দায়ী করেছেন। মন্ত্রী আশিস সুদ বলেছেন, ‘বাজি পোড়ানো হয়েছে। একিউআই বেশি ছিল। তবে বাজি পোড়ানোই একমাত্র কারণ নয়। দিল্লিবাসীর উচিত ছিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলা। পরের দীপাবলিতে যেন এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।’ 
 
রাজধানীতে যখন দূষণের কারণে জরুরি অবস্থার পরিস্থিতি, তখন বিজেপি নেতারা উল্টে সাধারণ মানুষকে বাজি পোড়ানোয় ইন্ধন জুগিয়েছেন, বিরোধীদের দাবি এমনটাই। তবে বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও সচেতনতার অভাব রয়েছে। সেইসঙ্গে রয়েছে প্রশাসনের গা ছাড়া মনোভাব। পাশাপাশি প্রতিবেশী রাজ্যগুলির মধ্যেও দায়িত্বজ্ঞানের অভাব রয়েছে। সব স্তরে সচেতন না হলে দূষণ রোধ অসম্ভব বলে মনে করছেন তাঁরা।            

Advertisement

Advertisement