• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

আজ যুবভারতীতে শিল্ড ডার্বি

ম্যাচ জিতে হ্যাটট্রিক করতে চান কোচ অস্কার মধুর প্রতিশোধ নিতে চান কোচ মোলিনা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

অলিভিয়া সরকার

ডার্বি ম্যাচ বলতেই উত্তেজনার পারদ সব সময় শহর কলকাতাকে উত্তপ্ত করে তোলে। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুই প্রধানের সমর্থকরা উৎসাহ আর উদ্দীপনায় গ্যালারিতে ছুটে আসেন। তাঁদের প্রিয় দলের জয় দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। পুরো স্টেডিয়াম গমগম করতে থাকে সমর্থকদের চিৎকারে। সেই উৎসাহে খেলোয়াড়রা ফুটবলের রণক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। আর হয়তো সেই কারণেই ডার্বির চেহারা একেবারেই বদলে যায়। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি থাকেন না। তাই ফুটবলের লড়াইটা এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়, যা কল্পনার বাইরে। তাই তো ডার্বি ম্যাচে সাক্ষী থাকার জন্য ময়দান যেন উত্তাল হয়ে ওঠে। আজ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে সেই ছবি দেখতে পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস। আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে কঠিন লড়াইয়ে দুই প্রধানের ফুটবলাররা যেন টগবগ করে ফুটবেন।

Advertisement

ডার্বি বলতেই চির প্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান সুপার জায়েন্ট। তবে এবারের ডার্বির চরিত্রটা একেবারেই আলাদা। একদিকে, কলকাতা লিগ ও ডুরান্ড কাপের পর শিল্ডেও জিতে ডার্বি জয়ের হ্যাটট্রিক করতে মরিয়া ইস্টবেঙ্গল। পাশাপাশি, চলতি মরসুমে সাতটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলে ছ’টিতেই জিতেছে তারা। সেজন্য, ফাইনালের আগে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাসী ইস্টবেঙ্গল শিবির। তবে, প্রতিপক্ষকেও যথেষ্ট সমীহ করছে তারা। বিষয়টি নিয়ে ম্যাচের আগেরদিন ইস্টবেঙ্গলের সহকারী কোচ বিনো জর্জ বলেন, মোহনবাগান যথেষ্ট শক্তিশালী দল। প্রতিটি বিভাগে তাদের দু- তিনজন করে খেলোয়াড় রয়েছে। গত মরসুমে লিগ ও শিল্ড দুটোই জিতেছে তারা। তবে, ডার্বি সবসময় আলাদা ম্যাচ। তাই আগে থেকে কিছু বলা যায়না। বিনো এদিন আরও জানান, শেষ তিনদিন দল যথেষ্ট ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। খেলোয়াড়রা সবাই এই ম্যাচ জেতার জন্য তৈরী। বিনো আশাবাদী, ইস্টবেঙ্গল ভালো খেলে শনিবার নিজেদের ৩০ তম শিল্ড ট্রফিটা জিততে পারবে। তবে, মোহনবাগান শিবিরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাইলেন না তিনি। কিছুটা মজার ছলেই জানালেন, যদি মোহনবাগানের সমর্থক কম আসে, তাহলে ইস্টবেঙ্গল সমর্থক বেশি আসবে। যা তাঁদের সুবিধা দেবে বলেই মনে করছেন তিনি।

Advertisement

এদিকে শুক্রবার, ইস্টবেঙ্গলের শেষমুহূর্তের প্রস্তুতিতেও যথেষ্ট হালকা মেজাজে দেখতে পাওয়া গেল খেলোয়াড়দের। প্রায় ৪৫ মিনিট হালকা অনুশীলন সারলো তাঁরা। তবে, এদিনও মূল দলের সঙ্গে অনুশীলন করলেন না নন্দকুমার, প্রভাত লাকরা ও রেমসাঙ্গা। তাছাড়া, বাকি দল পুরো ফিট বলেই জানিয়ে গেলেন বিনো। চলতি মরসুমে দুটি ডার্বিই জিতেছে ইস্টবেঙ্গল। সেটা হয়তো তাদের এই ম্যাচের আগে মানসিক দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। যদিও, সেই কথা একেবারেই মানতে রাজি নয় বিনো। তাঁর মতে, ফাইনালে যে দল ভালো খেলবে তাঁরাই ম্যাচ জিতবে। নতুন বিদেশি হিরোশিকে নিয়েও পরিষ্কার করে কিছু বললেন না তিনি। জানালেন, ইস্টবেঙ্গল – মোহনবাগান খেলোয়াড়দের সবাই ডার্বি ম্যাচের বিষয়ে ধারণা আছে। বড় ক্লাবে খেললে সবসময় একটা চাপ থাকে। সেটা হিরোশি নিজেও জানে। তবে, কোচ চাইলে তাঁকে ডার্বি ম্যাচে খেলাতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিলেন তিনি। আসলে কোচ অস্কার ব্রুজো এই ডার্বি ম্যাচ জিতে হ্যাটট্রিক করতে মরিয়া।

অন্যদিকে, মরসুমের দ্বিতীয় ডার্বির আগে কিছুটা হলেও চাপে রয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়েন্ট। এফসি’র ম্যাচ খেলতে ইরানে না যাওয়ায় প্রায় প্রতি ম্যাচেই সমর্থক বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। দল ফাইনালে উঠলেও সেই অবস্থা এতটুকুও বদলায়নি। বরং, ফাইনাল ম্যাচ বয়কটের ডাক দিয়েছে সবুজ -মেরুন সমর্থকদের একাংশ। বিষয়টি নিয়ে ম্যাচের আগেরদিনও প্রশ্নের মুখে পড়তে হল বাগান কোচ হোসে মোলিনাকে। তবে, ফাইনালের আগে এইসব নিয়ে বিশেষ ভাবতে চান না তিনি। জানালেন, তিনি এএফসি কাপের ম্যাচটা ভীষণভাবে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে খেলোয়াড়রা যেতে না চাওয়ায় ইরান সফর বাতিল করতে হয়েছে। একইসঙ্গে, গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে সমর্থকদের পাশে থাকার অনুরোধও শোনা গেল মোলিনার গলায়। তিনি বলেন, এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল এই ম্যাচে তাদের সমর্থকদের সম্পূর্ণ সমর্থন পাবে।

মোলিনার মতে, যা কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখবে লাল-হলুদ শিবিরকে। তিনি আশা করছেন, মোহনবাগান সমর্থকরাও গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে তাদের দলকে সমর্থন করবে। চোটের জন্য এই ম্যাচেও সবুজ মেরুন শিবির পাচ্ছে না মনবীর সিংকে। মরসুমের শুরু থেকেই চোট – আঘাত সমস্যায় ভুগছেন তিনি। যা নিয়ে বেশ বিরক্তই দেখালো কোচ মোলিনাকে। তিনি স্পষ্টই জানালেন, ডার্বিতে মনবীরের প্রথম একাদশে থাকার সম্ভবনা প্রায় নেই। পাশাপাশি, সমর্থকদের এই বিক্ষোভে তিনি ব্যথিত। মোলিনা এদিন বলেন, ফুটবলাররা সমর্থকদের আনন্দ দেওয়ার জন্যই খেলে। তাই, সমর্থকদের উচিত খেলোয়াড়দের পাশে থাকা। প্রায় একই কথা শোনা গেল মোহনবাগান ফুটবলার শুভাশিস বোসের গলায়। তিনি বলেন, সমর্থকরাই তাঁদের অনুপ্রেরণা। তাই, কোচের মতোই ডার্বি ম্যাচে সমর্থকদের মাঠে আসার অনুরোধ জানালেন তিনি।

তবে শুভাশিস মনে করছেন, বাইরের ঘটনা দলের খেলায় খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। দলের সবাই মরসুমের প্রথম ফাইনাল খেলার জন্য যথেষ্ট উত্তেজিত। কোচ হোসে মোলিনা চাইছেন এই ডার্বি ম্যাচে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে সবুজ-মেরুন শিবিরে শিল্ড শোভা পাক।

Advertisement