আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালে শুধুমাত্র সাড়ে তিনশোর বেশি করোনায় মৃত্যু হয়েছে। গুজরাতের মতো রাজ্যে কোনও একটি নির্দিষ্ট হাসপাতালে মৃত্যুর ঘটনা এখানেই সবচেয়ে বেশি। তারপর এই হাসপাতালকে অন্ধকূপের সঙ্গে তুলনা করে ভৎসনা করল গুজরাত হাইকোর্ট।
আদালতের বক্তব্য, গরিব অসহায় মানুষগুলোর কাছে এই হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথায় যাওয়ার সম্বল নেই। আর এদিকে এই হাসপাতালের অবস্থা হয়েছে অন্ধকূপের মত। গুজরাত হাইকোর্টের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে, আমরা আগেই জানিয়েছি সিভিল হাসপাতাল মানে সেখানে গরিব মানুষের চিকিৎসা হবে। কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে এটা একটা অন্ধকূপ।
Advertisement
গরিব ও অসহায় মানুষের দুর্ভাগ্য যে তাদের আর কোথাও যাওয়ার সম্বল নেই। সেই সঙ্গে বিচারপতিদের বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, আমরা যদি সপ্তাহের হিসাব ধরি এই হাসপাতালে সবথেকে বেশি করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। বেশির ভাগ রোগী চারদিন বা তারও বেশি চিকিৎসা পাওয়ার পরই মারা যাচ্ছেন।
Advertisement
এতেই বোঝা যাচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসাতে যথেষ্ট গলদ রয়েছে। এখানেই থেমে থাকেনি হাইকোর্টের বিচারপতিরা। নিজেদের নির্দেশিকায় গুজরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নীতীনভাই রতিলাল পটেলকে ভৎর্সনাও করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট সরকারের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে।
আমরা খুব দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালের হাল খুবই খারাপ। সাধারণত গরিব মানুষরা এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। তার মানে এই নয়, মানুষের প্রাণের কোনও দাম নেই। প্রতিটি মানুষের জীবনের দাম খুব মূল্যবান। এভাবে সিভিল হাসপাতালের মতো জায়গায় সেই প্রাণ হারাতে দেওয়া চলবে না।
আমরা জানি না, রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কতবার এই সিভিল হাসপাতালে গিয়েছেন। কিংবা সেখানকার পরিষেবার দিকে নজর দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত রোগী, ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা কি সমস্যার মধ্যে রয়েছেন, সেই বিষয়টি গুজরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কোনও নজর রয়েছে? এমনটাই জানিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতিরা।
এশিয়ার মধ্যে সব থেকে বড় সিভিল হাসপাতাল আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতাল। শুধুমাত্র করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ১২০০ শয্যা রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ রোগীকে জেনারেল ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। এবিষয়ে আদালত জানিয়েছে, ‘কোভিড ১৯ রোগীদেরও এখানে জেনারেল ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। এদিকে বেশির ভাগ ঘর ফাকাই রয়েছে। অথচ কৃত্রিমভাবে জায়গার অভাব তৈরি করা হয়েছে।’
আহমেদাবাদের কংগ্রেস বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন শেখ এই সিভিল হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেই সঙ্গে তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন। এরপর গুজরাত হাইকোর্টে এই হাসপাতাল নিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের হয়। সেই শুনানিতে এমনটাই জানিয়েছে বিচারপতিরা।
উল্লেখ্য, গুজরাতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজারেরও বেশি। শুধুমাত্র আহমেদাবাদেই আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। রাজ্যের ৮২১ জন মৃতের মধ্যে এই শহরে ৬৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহমেদাবাদের এই সিভিল হাসপাতালকে ঘিরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আমজনতা বলাবলি করছে, এই হাসপাতালে একবার ঢুকলে আর ফেরার রাস্তা নেই। গুজরাত হাইকোর্টের ভৎসনার পর এই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার হাল ফেরে কিনা এখন সেটাই দেখার।
Advertisement



