• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

সঙ্কটে হিমালয়

গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ঝুঁকি বৃদ্ধির প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। উন্নয়নশীল দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এই সমস্যা বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।

নিজস্ব গ্রাফিক্স চিত্র

বন্যা-বিপর্যস্ত পাঞ্জাব। একরের পর একর চাষের জমি ভেসে গিয়েছে। হড়পা বান ও ধসে বহু গ্রাম নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে। সর্বশেষ আকাশভাঙা বৃষ্টিতে শারদ উৎসবের আগে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার কলকাতা মহানগর। শুধু ভারত নয়, সাম্প্রতিক কালে ‘প্রবল তাপপ্রবাহের সাক্ষী হয়েছে ইউরোপ, অসময়ে দাবানল লেগেছে আমেরিকায়। এই পরিস্থিতি নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে নেচার ডট কমে। তাতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় আরও ভয়াল চেহারা নেবে। আরও ঘনঘন ঘটতে দেখা যাবে।

গবেষণায় দু’টি সময়কালের উল্লেখ করা হয়েছে। একটি হলো সাম্প্রতিক অতীত অর্থাৎ ১৯৯১ সাল থেকে ২০২০ সাল। অন্যটি অদূর ভবিষৎে—২০২১ সাল থেকে ২০৫০ সাল। জনসংখ্যার পরিসংখ্যানের সঙ্গে তুলনা করে দেখা হয়েছে জলবায়ুর পূর্বাভাস। এতে বেশ কিছু বৈষম্য চোখে পড়েছে। পাশাপাশি, গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, কীভাবে উষ্ণস্রোত ও শীতলস্রোত একে অন্যের সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে কোথাও অতিবৃষ্টি তো কোথাও অনাবৃষ্টি সৃষ্টি করছে। বিজ্ঞানের ভাষায় এই পরিস্থিতিকে বলা হয়— ‘কমপাউন্ড ক্লাইমেট এক্সট্রিমস’।

Advertisement

যে বৈষম্যগুলি চোখে পড়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—বিশ্বজুড়ে মাত্রাতিরিক্ত তাপপ্রবাহের জেরে কোথাও বন্যা, কোথাও অনাবৃষ্টির প্রকোপ বাড়বে। এশিয়া ও আফ্রিকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাহারার নিকটবর্তী অঞ্চলে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এর জেরে ‘কমপাউন্ড ক্লাইমেট এক্সট্রিমস’ ক্রমশ বাড়ছে। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলগুলিতে শৈত্যপ্রবাহের প্রকোপ কমবে। কিন্তু আমেরিকার কিছু অংশ, উত্তর ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ায় শৈত্যপ্রবাহ বাড়বে। ফলে একদিকে তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে দীর্ঘস্থায়ী শৈত্যপ্রবাহের যুগলবন্দি সঙ্কট তৈরি করবে।

Advertisement

গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ঝুঁকি বৃদ্ধির প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। উন্নয়নশীল দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এই সমস্যা বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। কিন্তু ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু অংশে, যেখানে জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা হ্রাসমান, সেখানে এর একমাত্র কারণ জলবায়ু পরিবর্তন।

এদিকে হিমাচল প্রদেশের চলমান জলবায়ু ও পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে এক স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ হলো— ‘শুধু হিমাচলপ্রদেশ নয়, গোটা হিমালয় পর্বতমালা ভয়ঙ্কর পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান সঙ্কটে ভুগছে। এই বছরের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তীব্রতা অভূতপূর্ব এবং অত্যন্ত হিংস্র। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি কেবল হিমাচলেই সীমিত নয়, পুরো হিমালয়ই এই বিপর্যয়ের মুখোমুখি। এবার এর ভয়াবহতা অত্যন্ত বেশি।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ ও সন্দীপ মেহতার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, রাজ্যের রিপোর্টে গাছপালার আচ্ছাদন থেকে শুরু করে খনন, হিমবাহ— সবদিক উঠে এলেও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। হিমবাহের সঙ্কোচন ও গতিবিধি নিয়ে উদ্বেগের কথা বলা হলেও স্পষ্ট পরিসংখ্যান নেই। ২০০১-০২ এবং ২০১৬-১৯ সময়কালের হিমবাহ তুলনামূলক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হিমবাহের সংখ্যা প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও আয়তন কমছে, যা ধীরে ধীরে সঙ্কোচনের ইঙ্গিত দেয়।

অস্বাভাবিক বর্ষণ, মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বান, ভূমিধস, তুষারপাতের ধরনে বিপর্যয়কর পরিবর্তন এবং হিমবাহের পশ্চাদপসরণ জলবায়ু পরিবর্তনেরই প্রমাণ— যা অপ্রতিরোধ্য এক বৈশ্বিক ঘটনা। শিল্পায়ন, গ্রিন হাউস গ্যাসের বৃদ্ধি এবং অস্থায়ী উন্নয়নপন্থাই রয়েছে এর মূলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বনভূমি ধ্বংসের বড় কারণ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, চার লেন রাস্তা, নির্বিচার গাছ কাটা এবং বহুতল ভবন নির্মাণ। উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার আগে ভূতত্ত্ববিদ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়দের মতামত নেওয়া অপরিহার্য বলে মনে করে সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement