রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে প্যালেস্তাইনের প্রতি জোরালো সমর্থন জানালেন ১৫৭টি দেশের প্রতিনিধি। রাষ্ট্রসঙ্ঘের ১৯৩টি সদস্য-রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাধীন প্যালেস্তাইনের প্রতি স্বীকৃতির কথা জানিয়েছে ১৫টি দেশ। আমেরিকা ও ইজরায়েলের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে অবিলম্বে গাজায় সংঘর্ষ বিরতি এবং ত্রাণ সরবরাহ শুরু করতে ইজরায়েলের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর কথা জানিয়েছে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, বিদেশমন্ত্রী ও সরকারের শীর্ষ কর্তারা।
গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভায় দৃশ্যত ইজরায়েলকে পুরোপুরি একঘরে করে দেওয়া হয়েছে। স্পষ্টভাবে ইজরায়েলকে ‘গণতন্ত্র হত্যাকারী’ রাষ্ট্র বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। কোণঠাসা হয়ে, গত দিন দুয়েক ধরে সমানে ফাঁপা হুমকি দিয়ে চলেছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি রাষ্ট্রসঙ্ঘের সমস্ত বিধি ভেঙে, সমগ্র ওয়েস্ট ব্যাঙ্ককে ‘ইজরায়েলের জন্মগত অধিকার’ বলে দাবি করে স্বাধীন প্যালেস্তাইনের অস্তিত্ব নস্যাৎ করেছেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
Advertisement
গাজার প্রশ্নে ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডার মতো ‘ঘনিষ্ঠ’ বন্ধুরাও আর আমেরিকার পাশে নেই। পরিস্থিতির চাপ কিছুটা আঁচ করে, পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। নেতানিয়াহুকে তিনি কিছুতেই ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক দখল করতে দেবেন না বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে গাজায় সংঘর্ষ বিরতি নিয়ে ট্রাম্পের দেওয়া প্রস্তাবে কেউই সহমত হননি।
Advertisement
প্যালেস্তাইনে ‘শান্তি ফেরাতে’ বৈঠকে ট্রাম্প বলেছেন, ‘হামাস-মুক্ত’ গাজার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর একমাত্র সমাধান। যথারীতি হামাস এই প্রস্তাব মানতে অস্বীকার করেছে। কাতার ও সৌদি আরবের মতো পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশও এই প্রস্তাব নিয়ে আশাবাদী নয়। ট্রাম্প একদিকে সংঘর্ষ বিরতির কথা বললেও নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়েছেন, গাজা থেকে প্যালেস্তিনীয়দের উৎখাত না করা পর্যন্ত গাজায় হামলা বন্ধ করবে না ইজরায়েল। এই পরস্পর-বিরোধী কথায় ট্রাম্পের ‘প্রস্তাব’কে কেউ বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছে না।
প্রসঙ্গত, হামাস গাজায় সাধারণ মানুষের দ্বারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি রাজনৈতিক দল। তার অস্তিত্ব অস্বীকার করে ও গণভিত্তি নস্যাৎ করে, তার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের নামে গাজায় নৃশংস গণহত্যা চালাচ্ছে ইজরায়েল। এতেই সমর্থন জুগিয়ে চলেছে আমেরিকা। এই পরিস্থিতি না বদলালে কখনওই সংঘর্ষ বিরতি সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকদের এক বড় অংশ।
রাষ্ট্রসঙ্ঘে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি সৌদি আরবের ডাকা এক বৈঠকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ স্বাধীন প্যালেস্তাইনের প্রতি তাঁর দেশের সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ঘোষণা করেছেন। গত মাসেই ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কানাডার সরকার স্বাধীন প্যালেস্তাইনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। ইতিমধ্যেই গত সপ্তাহে রাষ্ট্রসঙ্ঘের অধিবেশনের ঠিক আগে এই ঐতিহাসিক ঘোষণা করেন তিন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। এদিকে ফ্রান্সও এই ঘোষণা করায় আমেরিকা বাদে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সমস্ত স্থায়ী সদস্য স্বাধীন প্যালেস্তাইনকে স্বীকৃতি দিয়ে ফেলেছে। কূটনৈতিক দিক থেকে এই সমস্ত ঘোষণায় প্যালেস্তাইনের শক্তি আরও বেড়েছে। তার জেরে রাষ্ট্রসঙ্ঘের গৃহীত ‘দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের’ পক্ষে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ আরও বেড়েছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ রাষ্ট্রসঙ্ঘের অধিবেশন কক্ষে যখন বলেন, ‘দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের মাধ্যমেই ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সমস্যা মিটবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান পশ্চিম এশিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি।’ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণায় হাততালি ও উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে সাধারণ সভার অধিবেশন কক্ষ। ফ্রান্সের পাশাপাশি ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী আভেট কুপার, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্তনি আলবানিজ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রসিপ তায়িপ এরদোয়ান এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এই অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। গাজার গণহত্যার নিন্দা করে তাঁরা স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন করেন।
Advertisement



