• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

দেশে ৩১ মে পর্যন্ত বাড়ল লকডাউন

প্রত্যাশা মতই তৃতীয় দফার লকডাউনের শেষ দিন চতুর্থ দফার লকডাউন ঘোষণা করে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। লকডাউনের মেয়াদ বাড়ল আরও ১৪ দিন।

দেশে ৩১ মে পর্যন্ত বাড়ল লকডাউন। (File Photo: AFP)

প্রত্যাশা মতই তৃতীয় দফার লকডাউনের শেষ দিন চতুর্থ দফার লকডাউন ঘোষণা করে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। লকডাউনের মেয়াদ বাড়ল আরও ১৪ দিন। ৩১ মে পর্যন্ত দেশজুড়ে লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব যায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। এরপরই চতুর্থ লকডাউন পর্বে কোথায় কি বিধিনিষেধ থাকছে, কি কি ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হচ্ছে তার বিস্তারিত নির্দেশিকা জারি করা হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে।

বিমান পরিষেবার পাশাপাশি মেট্রো রেলও যে আপাতত বন্ধ থাকছে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই নির্দেশিকায়। তবে বাস চালানোর বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের ওপরে। যদিও মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু কেন্দ্রেীয় সরকারের নির্দেশিকা আসার আগেই ৩১ মে পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা জানিয়ে দেয়।

Advertisement

করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। রবিবার সারা দেশে করোনা সংক্রমণ ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪,৯৮৭ জন নতুন করে সংক্রামিত হয়েছে, যা রেকর্ড। ফলে সবদিক বিবেচনা করেই চতুর্থ দফার লকডাউনের মেয়াদ আরও দু’সপ্তাহ বাড়ানো হল।

Advertisement

লকডাউন নির্দেশিকা আসতে অনেক দেরি হওয়ায় রবিবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে উষ্ণা প্রকাশ করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিকেল পর্যন্ত কেন্দ্র কোনও নির্দেশিকা জারি করেনি লকডাউন সম্পর্কে। তাই স্থিতাবস্থা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে ওই টুইটে আরও বলা হয়, সোমবার দুপুরে রাজ্য একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করবে।

এদিন সন্ধ্যায় লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সারি ঘোষণার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গাইডলাই প্রকাশ করে জানায়, এই দফায় কি কি খোলা হবে, আর কি কি বন্ধ থাকবে। কি কি পরিষেবা বন্ধ থাকবে তাও জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।

দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। একমাত্র চিকিৎসার প্রয়োজনে পরিষেবা বা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোনও যাত্রীবাহী বিমান চলবে না। মেট্রোরেল পরিষেবা বন্ধ থাকবে। স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টার সমস্ত বন্ধ থাকবে। তবে অনলাইন পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা চালু থাকবে। বন্ধ থাকবে হোটেল, রেস্তোরাঁ।

কেবলমাত্র যেসব হোটেল, গেস্টহাউসে চিকিৎসা কর্মীদের রাখা হয়েছে বা কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলি খোলা থাকবে। সব সিনেমা হল, শপিং কমপ্লেক্স, সুইমিং পুল, জিমন্যাশিয়াম, অডিটোরিয়াম, এন্টারটেনমেন্ট পার্ক, বার, থিয়েটার খোলা থাকবে, কিন্তু দর্শক ঢোকানো যাবে না। কেবলমাত্র সেগুলি মেনটেনেন্সের জন্য খোলা যাবে।

সমস্ত রকম সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও বিনোদন সংক্রান্ত বড় জমায়েত বন্ধ রাখতে হবে। বিয়ের অনুষ্ঠান করা যাবে, তবে তাতে ৫০ জনের বেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না। সবরকম ধর্মস্থান বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

কি কি পরিষেবা শুরু করা যাবে তাও জানিয়েছে কেন্দ্র। আন্তঃরাজ্য বাস চলাচলে রাজ্যগুলি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে অনুমতি দিতে পারে। একইভাবে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে রাজ্যগুলির মধ্যে গাড়িও চলতে পারে। কোনও রাজ্য সরকার চাইলে নিজের রাজ্যের মধ্যে বাস ও অন্যান্য গাড়ি চলাচলে অনুমতি দিতে পারে কিন্তু সেক্ষেত্রে কি নিয়মনীতি মেনে হবে তা রাজ্য ঠিক করবে। এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর রয়েছে তা মেনে রাজ্যের মধ্যে যাতায়াত করা যাবে।

তৃতীয় দফার লকডাউন ঘোষণার সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছিল যে, সরকারি ও বেসরকারি অফিস ৩৩ শতাংশ কর্মী নিয়ে খোলা যাবে। সেই সঙ্গে চার চাকার গাড়িতে দু’জন এবং মোটরসাইকেলে একজন যাতায়াত করতে পারবেন, এমনটাই জানানো হয়েছিল। সেই নিয়ম চতুর্থ দফার লকডাউনে অপরিবর্তিত থাকছে। এবার থেকে শুরু হল ‘নাইট কার্ফু’।

কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চতুর্থ দফার এই লকডাউনে সকাল ৭’টা থেকে সন্ধ্যা ৭’টা পর্যন্ত কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় মিললেও সন্ধ্যা ৭’টা থেকে সকাল ৭’টা পর্যন্ত জারি থাকবে নাইট কার্ফু। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বেরোতে পারবেন না, এই ১২ ঘণ্টা।

এই বিশেষ প্রয়োজন কি, কতটা জোরদারভাবে পালন করা হবে এই নাইট কার্ফু তা ঠিক করবে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসন। যদি প্রশাসন মনে করে সুরক্ষার স্বার্থে জারি করতে পারে ১৪৪ ধারার। কোন কোন জরুরি কাজে কতক্ষণের জন্য কারা কারা বেরোতে পারবেন, তার বিধিনিষেধ থাকবে এই নাইট কার্ফু চলার সময়।

তবে, বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ১০ বছরের নিচে কোনও বাচ্চা এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক এই সময় বেরোতে পারবে না। বেরোতে পারবেন না অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ এসব রোগের বাহকরা।

অনলাইন কেনাকাটায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়াও অনলাইনে কেনা যাবে অন্যান্য জিনিস। তবে কনটেন্টমেন্ট জোনের ক্ষেত্রে অনলাইন ডেলিভারিতে অনুমতি দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার।

কেন্দ্রীয় সরকার যে নির্দেশিকা জারি করেছে তাতে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রশাসনের হাতে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কোনও রাজ্য যদি কনটেন্টমেন্ট জোনের বাইরে ও অন্য সংক্রমণপ্রবণ এলাকায় অনলাইন ডেলিভারি বন্ধ রাখতে চায় তাহলে তা করতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের গাইডলাইন মেনে রাজ্যে রেড, অরেঞ্জ এবং গ্রিন জোন কোনওগুলি হবে তা নির্দিষ্ট করবে রাজ্য।

রেড এবং অরেঞ্জ জোনের মধ্যে কনটেন্টমেন্ট জোন এবং বাফার জন নির্দিষ্ট করবে স্থানীয় প্রশাসক। কনটেন্টমেন্ট জোনের মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিষেবা ছাড়া বাকি সমস্ত নিষিদ্ধ। চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা ছাড়া মানুষের যাতায়াতও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

Advertisement