সুতপন চট্টোপাধ্যায়
১
মাসের প্রথম সপ্তাহ। অফিসে গত মাসের ফলাফলের একটা লম্বা প্রেজেন্টেশন ছিল অতনুর। সেটা শেষ করে নিজের চেম্বারে ফিরে, ল্যাপটপ রেখে জলের গ্লাসে চুমুক দিয়েছে, কি দেয়নি, ফোনটা বেজে উঠল।
উল্টো দিকে নন্দিনী। ‘তুমি এক মিনিট ওয়েস্ট না করে সোজা বসন্তকুঞ্জ থানায় এসো। আমি বাড়ি হয়ে থানায় যাচ্ছি। কুইক।’
Advertisement
থানায় কেন? কার কী হয়েছে? চমকে প্রশ্ন করল অতনু।
বুম্বা ইস্কুল থেকে বাড়ি ফিরে, খেয়ে পিঠে একটা ব্যাগ নিয়ে কোথায় চলে গেছে। কেউ জানে না।
চলে গেছে মানে? মাকে বলেনি?
না।
গেটের সিকিউরিটিও দেখেনি?
অতসব বলতে পারছি না। বাকিটা দেখা হলে বলব। বলে লাইনটা কেটে দিল নন্দিনী।
Advertisement
হঠাৎ অফিসটা ভূমিকম্পে যেন থরথর করে কেঁপে উঠল। কখন হলো? কী করে হলো? মাথার মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন এলোমেলো এসে জড়ো হচ্ছে। একবার মনে হল, কাছাকাছি গেছে কোথাও, এসেও পড়বে, কিন্তু তা তো নয়? ঘড়ি দেখল অতনু। না, বুম্বার বাড়ি ফেরার সময় তো অনেকক্ষণ পেরিয়ে গেছে। তাহলে? না বলে চলে যাবার ছেলে তো বুম্বা নয়! তাহলে তাকে কি কেউ ডেকেছে? এমন সে করেনি কোনোদিন? আত্মবিশ্বাসহীন এলোমেলো পা পড়ছে মাটিতে। তাড়াতাড়ি ড্রাইভার পবনকে ফোন করল অতনু। বলল, এখুনি বেরোতে হবে। নীচের পার্কিং থেকে গাড়ি আনতে পবনের পাঁচ মিনিট লাগবে। সে নিজের চেম্বার থেকে বেরিয়ে লিফটের কাছে গিয়ে দেখল, লিফট চলে গেছে নীচে। আবার ন’তলা আসতে সময় লাগবে। তাহোক, সিঁড়ি দিয়ে সে দৌড়ে নামতে পারবে না। মাথা ঘুরে পড়ে যাবার প্রবল সম্ভবনা। অগত্যা।
গাড়িতে উঠেই বলল, স্পিডে চালাবি। কাউকে না বলে বুম্বা চলে গেছে, কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না অতনু। তাকে কি কেউ প্রলোভন দেখিয়ে গেটের বাইরে ডেকেছে? স্বভাবে বুম্বা সহজ সরল, মানুষকে সহজে বিশ্বাস করে। সেই দুর্বলতার সুযোগে কেউ কিডন্যাপ করেছে? তাই বা এত সহজ নাকি? গেটের সিকিউরিটি আছে। তাদের চোখের সামনে তা অসম্ভব। তাদের আবাসনের আশেপাশে দুপুরবেলায় লোকজনের চলাচল, তাদের সামনে থেকে? তাহলে কি সে বসন্তকুঞ্জ মলের দিকে গেছে? মাথার মধ্যে কিলবিল করছে নানান সম্ভাবনা। কোনোকিছুই অতনুর বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। দিল্লির আউটার রিং রোড দিয়ে তীর বেগে ছুটে চলেছে গাড়ি। বাইরে গরম। রাস্তায় সিগন্যালে গাড়িটা থামলেই ধৈর্যচ্যুতি হচ্ছে। বিরক্ত হচ্ছে অথচ কিছুই করার নেই তার। লোদী রোড থেকে বসন্তকুঞ্জ থানার সামনে আসতেই অতনু দেখল, নন্দিনী তখনও আসেনি। সে ফোন করল। নন্দিনী বলল, আমি বাড়ি হয়ে আসছি তো। আর চার মিনিট।
নন্দিনী অতনুকে দেখেই বলল, মা অফিসে ফোন করেছিল। লাইন পায়নি প্রথমে অনেকক্ষণ। পেয়ে ধরা গলায় আমাকে খবর দিল। মা বুম্বার কাছে জানতে চেয়েছিল, কোথায় যাচ্ছো? কোনও উত্তর দেয়নি। প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেছে, ফেরেনি। আমি বাড়ি ফিরে সিকিউরিটিকে জিজ্ঞেস করেছি।
–কী বলল,
–বলল, তারা বুম্বাকে বেরিয়ে যেতে দেখেনি।
–মানে? ঘুমোচ্ছিল নাকি? তাহলে মাসে মাসে এত টাকা দিয়ে কীসের সিকিউরিটি? রাগ ও হতাশামিশ্রিত ঝাঁঝালো গলা বেরিয়ে এল অতনুর।
–হয়ত অন্য গেট দিয়ে বেরিয়ে গেছে! হতে পারে। চলো, থানায় ডায়রি করতে হবে। দেরি হলে হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।
অতনু ও নন্দিনী থানার ভিতরে ঢুকল। দারোগার চেয়ারটা ফাঁকা। কোথাও গেছে। অপেক্ষা করতে হবেই।
(ক্রমশ)
Advertisement



