আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৮০০ জন মানুষ। আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। রবিবার মধ্যরাতে আফগানিস্তানের নানগরহর প্রদেশে ভূমিকম্পের জেরে কেঁপে ওঠে বিস্তীর্ণ এলাকা। ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.৩। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সংস্থার মতে, কম্পনের মাত্রা ছিল ৬। মূল ভূমিকম্পের পর একাধিক আফটারশকে আতঙ্ক ছড়ায় আরও বেশি।
পড়শি দেশের মর্মান্তিক পরিস্থিতি দেখে শোকার্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এসসিও বৈঠক শেষ হতেই এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, ‘আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে এত প্রাণহানি দেখে আমি গভীরভাবে ব্যথিত। এই কঠিন সময়ে স্বজনহারাদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। আফগানিস্তানের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত রকম সাহায্য করতে তৈরি আছে ভারত।’ বিপর্যস্ত দেশের জন্য ইতিমধ্যেই সাহায্য ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজ। সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে একাধিক দেশ।
Advertisement
স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে নানগরহরের জালালাবাদের কাছে ভূমি থেকে ৮ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পের উৎস চিহ্নিত হয়। মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে প্রথম আফটারশক হয়, যার মাত্রা ছিল ৪.৫। পরে আরও তিনটি আফটারশক হয়, যার মধ্যে দু’টির মাত্রা ছিল ৫। আফটারশকগুলোর গভীরতা ছিল ১০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত। পরিস্থিতির ভয়াবহতা এবং ভূমিকম্প-পরবর্তী ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Advertisement
আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশে তিনটি গ্রাম একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে পূর্ব আফগানিস্তানের নুর গুল, সোকি, ওয়াটপুর, মনোগি এবং চাপাদরে জেলা। ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে রাস্তার উপর। ভূমিকম্পের উৎসস্থলের কাছাকাছি অঞ্চলে প্রচুর বাড়ি ভেঙে পড়েছে বলে খবর। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া লাগোয়া সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকাগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাদেশিক তথ্য প্রধান নাজিবুল্লাহ হানিফের কথায়, ‘শয়ে শয়ে আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তবে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’
বর্তমানে আফগানিস্তানে উদ্ধারকাজ চলছে পুরোদমে। ধ্বংসস্তূপের নীচে আরও বহু মানুষ আটকে থাকার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় প্রশাসনের আধিকারিকরা। বিদ্যুৎ ও জল পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়েছে বহু জায়গায়। আন্তর্জাতিক মহলের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে তালিবান প্রশাসন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মুখপাত্র শরাফাত জামান বলছেন, ‘যা মনে হচ্ছে, হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকাগুলিতে উদ্ধারকারী দলকে পৌঁছোতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তাই সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যাচ্ছে না। উদ্ধারকাজ চলছে।’
ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী বেশ কিছু অঞ্চল ও ভারতের উত্তরাঞ্চল। জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও রাজধানী দিল্লি সহ আশপাশের এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়। বহু মানুষ মাঝরাতে আতঙ্কে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। সমাজমাধ্যমে অনেকেই তাঁদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন।
আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, বিশেষত হিন্দুকুশ পর্বতমালা সংলগ্ন এলাকা অত্যম্ত ভূমিকম্পপ্রবণ। কারণ, ওই এলাকা ভারতীয় এবং ইউরেশীয় প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। সেই কারণে আফগানিস্তানে এই ধরনের তীব্র কম্পন নতুন নয়। এর আগেও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। সেই সময় তালিবান সরকার দাবি করেছিল, মৃতের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে, যদিও রাষ্ট্রসঙ্ঘের হিসাবে সেই সংখ্যা ছিল দেড় হাজারের কিছু বেশি।
Advertisement



