বর্তমান সময়ে হৃদ্রোগ বা হার্টের সমস্যা খুব সাধারণ হলেও, তা যথাসময়ে সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে প্রাণঘাতী হতে পারে। বিশেষ করে হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে সময়ের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরা সবচেয়ে আগে যে পরীক্ষাটি করার পরামর্শ দেন, তা হলো এনজিওগ্রাম।
এনজিওগ্রাম কী?
Advertisement
এনজিওগ্রাম হলো এক ধরনের পরীক্ষা, যার মাধ্যমে হার্টের রক্তনালিতে কোনও ব্লক বা প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা, তা নির্ভুলভাবে দেখা যায়। এই পরীক্ষায় বোঝা যায়, রক্তনালির কোথায় এবং কতটুকু ব্লক হয়েছে। এর ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় – রোগীর স্টেন্ট (রিং) লাগবে, না কি বাইপাস সার্জারি প্রয়োজন, নাকি শুধু ওষুধেই চিকিৎসা সম্ভব।
Advertisement
এনজিওগ্রাম কেন দরকার হয়?
হার্ট অ্যাটাক সাধারণত তখনই হয়, যখন হার্টে রক্ত সরবরাহকারী কোনও রক্তনালি হঠাৎ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় যত দ্রুত ব্লক খোলা যায়, তত কম ক্ষতি হয় হার্টের। সেই জন্য তাৎক্ষণিক এনজিওগ্রাম করে স্টেন্ট লাগানো খুবই কার্যকর। অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তির পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে স্থিতিশীল করে পরবর্তী সময়ে এনজিওগ্রাম করা হয়।
এছাড়া যাঁরা নিয়মিত বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভব করেন, বিশেষ করে হাঁটাচলা বা পরিশ্রমের সময়, তাঁদের ক্ষেত্রেও এনজিওগ্রামের প্রয়োজন হতে পারে। আগে ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি কিংবা ট্রেডমিল টেস্ট করে সন্দেহ থাকলে এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দেন হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ।
এনজিওগ্রাম কীভাবে করা হয়?
এটি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া হলেও আধুনিক যন্ত্রপাতি ও দক্ষ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করা হয়। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে হাতে (কবজি) বা কুঁচকির রক্তনালির ভেতর দিয়ে একটি সরু নল (ক্যাথেটার) ঢোকানো হয়। সেই নলের মাধ্যমে হৃদ্রক্তনালিতে বিশেষ রঞ্জক পদার্থ (ডাই) প্রবেশ করানো হয়। এরপর এক্স-রে মেশিনে ছবি তুলে দেখা হয়, কোথায় ব্লক রয়েছে।
যদি দেখা যায় স্টেন্ট লাগানোর প্রয়োজন আছে, অনেক সময় একই সময়েই সেটি করা যায়। আবার কেবল ওষুধে চিকিৎসা দিলেও চলবে কি না, তা-ও নির্ধারণ করা হয়।
এনজিওগ্রামের ঝুঁকি কতটা?
অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে এই পরীক্ষা সাধারণত নিরাপদ। তবে কিডনি রোগী বা জটিল হৃদ্রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। এনজিওগ্রাম করার আগে চিকিৎসক ও রোগীর পরিবারকে বিস্তারিত আলোচনা করে সম্ভাব্য সব দিক জেনে নেওয়া উচিত, যেমন: স্টেন্ট লাগাতে হতে পারে কি না, খরচ কত হতে পারে, পরে কী ধরণের চিকিৎসা লাগবে।
পরামর্শ ও সচেতনতা
হার্টের সমস্যা দেখা দিলেই ভয় না পেয়ে, যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এনজিওগ্রাম শুধু রোগ নির্ণয়ের জন্য নয়, চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রেও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য উপায়। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে হৃদ্রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
Advertisement



