পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মহম্মদের তিন জঙ্গি নেপাল হয়ে বিহারে ঢুকে পড়েছে— এমনই চাঞ্চল্যকর খবর ছড়িয়ে পড়েছে বিহারে। এই ঘটনাকে ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিহার জুড়ে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন। এই রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় তল্লাশি অভিযানও শুরু হয়েছে। কড়া নজরদারি বসানো হয়েছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। কিন্তু শুক্রবার নেপাল প্রশাসনের দেওয়া তথ্যে সেই আশঙ্কা অনেকটাই কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ নেপাল জানিয়েছে, তিন জঙ্গির কেউই সীমান্ত ডিঙিয়ে বিহারে ঢোকেনি, বরং কাঠমান্ডু থেকে বিমানে চড়ে উড়ে গিয়েছে মালয়েশিয়ায়।
বৃহস্পতিবার ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বিহার সরকারকে সতর্ক করে জানায়, জয়েশ-ই-মহম্মদের তিন প্রশিক্ষিত জঙ্গি নেপাল সীমান্ত পেরিয়ে রাজ্যে প্রবেশ করেছে। গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে সন্দেহভাজনদের নামও প্রকাশ করা হয়েছে। এই তিনজনের মধ্যে রয়েছে রাওয়ালপিন্ডির বাসিন্দা হাসনান আলি, উমেরকোটের বাসিন্দা আদিল হুসেন এবং বাহাওয়ালপুরের বাসিন্দা মহম্মদ উসমান। গোয়েন্দাদের সতর্কবার্তার পরই রাজ্যের সব থানায় ওই তিনজনের পাসপোর্টের বিবরণ পাঠিয়ে নজরদারি জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
তবে নেপাল পুলিশের পাশাপাশি অভিবাসন দপ্তর ও কাঠমান্ডু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সন্দেহভভাজন তিন পাকিস্তানি নাগরিক পর্যটক ভিসা নিয়ে নেপালে প্রবেশ করেছিল ঠিকই। হাসনান আলি ও আদিল হুসেন নামে দুই জঙ্গি ৮ অগস্ট করাচি থেকে দুবাই হয়ে কাঠমান্ডুতে পৌঁছিয়েছিল। কিন্তু তারা ১৫ অগস্ট মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ ১১৫ নম্বর বিমানে কুয়ালা লামপুরে রওনা হয়। তৃতীয় জন মহম্মদ উসমান, ১০ অগস্ট করাচি থেকে দুবাই হয়ে নেপালে পৌঁছয় এবং ২৪ অগস্ট নেপাল এয়ারলাইন্সের আরএ ৪১৫ ফ্লাইট ধরে মালয়েশিয়ায় চলে যায়।
Advertisement
নেপাল প্রশাসন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ওই তিনজনের পাসপোর্ট ও ভ্রমণ নথি আন্তর্জাতিকভাবে যাচাই করা হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা বা ইন্টারপোলের পক্ষ থেকে কোনও সতর্কতা না থাকায় তাদের আটক করা হয়নি। নেপাল অভিবাসন দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘যদি কোনও গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে সতর্কবার্তা পেতাম, তবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেপালেই আটকে রাখা হতো।’
প্রসঙ্গত, পহেলগাম হামলার প্রত্যাঘাত স্বরূপ ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে ভারতীয় সেনা পাক পাঞ্জাব ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে অভিযান চালায়। সেই অভিযানে লস্কর-ই-তোইবা, জয়েশ-ই-মহম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিনের একাধিক ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়। সেই ধাক্কা কাটিয়ে পাক সেনা ও আইএসআই-এর মদতে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, প্রতিশোধমূলক হামলার ছক কষছে জয়েশ। আর সেই কারণেই ভারতজুড়ে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তাজনিত সতর্কতা।
তবে নেপালের দেওয়া তথ্যপ্রমাণে আপাতত স্বস্তি পেয়েছে বিহার প্রশাসন। রাজ্যের নিরাপত্তা দপ্তরের এক কর্তা বলেন, ‘নেপালের রিপোর্ট হাতে আসার পর আমরা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছি। তল্লাশি ও নজরদারি আপাতত জারি থাকবে। কারণ গোয়েন্দা সতর্কতা এখনও বহাল আছে।’
Advertisement



