• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

বিল ফেলে রাখার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের যুক্তিই মেনে নিল সুপ্রিম কোর্ট

রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির সময়সীমা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

বিধানসভায় বিল পাশ হওয়ার পর তা যদি রাজ্যপাল অনির্দিষ্ট সময় ফেলে রাখেন এবং সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না জানান, তাহলে আদালত কি নীরব থাকবে? এই প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে রাজ্যপালকে সময়সীমা বেঁধে দিলে সাংবিধানিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের এই যুক্তির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুললেও রাষ্ট্রপতির বাধ্যবাধকতার প্রশ্নে কেন্দ্রের যুক্তি মেনে নিল সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছিল, রাজ্যপাল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও বিল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে যদি তিনি তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেন, সেক্ষেত্রে বিলের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করতে রাষ্ট্রপতির উচিত সুপ্রিম কোর্টের মতবাদ নেওয়া। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সওয়াল করতে গিয়ে কেন্দ্র যে যুক্তি দেখিয়েছে, তা মেনে নিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ।

প্রসঙ্গত, তামিলনাড়ু বিধানসভায় পাশ হওয়া দশটি বিল তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের এই আচরণকে বেআইনি উল্লেখ করে বিল ছাড়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। সেই নির্দেশে রাজ্যপালকে একমাস এবং রাষ্ট্রপতিকে তিনমাসের মধ্যে বিল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকারও রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে বিধানসভায় পাশ হওয়া একাধিক বিল আটকে রাখার অভিযোগ তুলেছিল।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল, তা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলে কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁদের প্রশ্ন, সুপ্রিম কোর্ট কি এভাবে নির্দেশ দিতে পারে রাষ্ট্রপতিকে? অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও ওই বিষয়ে ১৪টি সাংবিধানিক প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টের মতামত জানতে চেয়েছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট, যাতে বিষয়টির দ্রুত মীমাংসা করা যায়। এই পাঁচ বিচারপতি হলেন, প্রধান বিচারপতি বি আর গাবাই, বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি পি এস নরসিনহা এবং বিচারপতি এ এস চান্দুরকর।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ আগে যে নির্দেশ দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে সওয়াল করেছিল কেন্দ্র। কেন্দ্রের বক্তব্য, রাজ্যপাল কোনও বিলে সই করবেন বা করবেন না, অথবা সে বিল তিনি ফিরিয়ে দেবেন, নাকি রাষ্ট্রপতিকে পাঠানোর জন্য রেখে দেবেন, এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারে না আদালত। এগুলি একান্তভাবেই রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না বিচারব্যবস্থা। কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, রাজ্যপাল এবং রাজ্যের মধ্যে  এ বিষয়ে অচলাবস্থা তৈরি হলে তার সমাধান হওয়া উচিত রাজনৈতিকভাবে। যদি রাজ্যপালকে কোনও সময়সীমার ব্যাপারে নির্দেশ দিতেই হয়, সে সিদ্ধান্ত নেবে সংসদ।

কিন্তু প্রধান বিচারপতিও কেন্দ্রকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের রক্ষক। তাই কোনও রাজ্যপাল যদি রাজ্য সরকারের কাজকর্ম অচল করে দেয়, সুপ্রিম কোর্ট তা হতে দিতে পারে না। তবে তিনি এ কথাও বলেন যে, বিচারব্যবস্থা যেন বিচার সন্ত্রাসে পরিণত না হয়, তাও দেখতে হবে। তবে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের যুক্তি মেনে নিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যদি সব বিলের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে থাকে, তাহলে বিচার বিভাগের বাকি কাজকর্মের কী হবে? কেননা, প্রতিটি বিলের ক্ষেত্রেই তো তাহলে  পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করতে হবে। তাছাড়া সংবিধান অনুসারেই, রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেবেন কিনা, সে সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নেবেন।

Advertisement