• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

প্রযোজক-পরিচালকরা আমাকে ছবিতে নিতে ভুলে যান রুদ্রনীল

রুদ্র ইক্যুয়ালস টু যোগেশ। চ্যাপলিন, ভিঞ্চি দা-র মতো ছবি রুদ্র উপহার দিয়েছে। কিন্তু ধূমকেতুতে তাঁর অভিনয়, অভিনয় না সত্যিই তিনি যোগেশ হয়েছেন, ধরতে পারা মুশকিল। বহুদিন বাদে বড়পর্দায় এসে মানুষের মনে দাগ কেটেছেন তিনি। খোলামেলা আড্ডায় রুদ্রনীল ঘোষের সঙ্গে দেবযানী লাহা ঘোষ।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রশ্ন: ধূমকেতু সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়। যোগেশের চরিত্রে তোমাকে মানুষ এত পছন্দ করছেন। রুদ্র আর যোগেশ এখন একে অপরের পরিপূরক হয়ে গিয়েছে। কী তাই তো?

উত্তর:
অনেকেই ছবিটা দেখে ফেলেছেন আবার অনেকেই ছবিটা দেখবার প্ল্যান করছেন। তাই গল্প বাঁচিয়েই সব প্রশ্নের উত্তর দেব। দেখো অভিনয় আমরা সকলেই করি৷ মানুষ কোন চরিত্রটা রিলেট করতে পারছেন সেটা মানুষের উপর। আমাদের কাজ ১০০ শতাংশ দেওয়া। আমিও সেটাই করেছি।

প্রশ্ন: কোনও কিছু রিভিল না করেই বলছি, যোগেশ-ভানুর বন্ধুত্ব একটা মাইলফলক। মানুষ বহু বহু দিন এই বন্ধুত্বের গল্প মনে রাখবে। দেব এই ছবিতে পাল্লা দিয়ে তোমার সঙ্গে অভিনয় করেছে।

উত্তর:
এটা একটা অদ্ভুত বন্ধুত্ব। দুটো আলাদা মানুষ। একই পটভূমিতে বেড়ে ওঠে। কিন্তু মানুষ দুটো আলাদা। যোগেশ শান্ত। প্রতিবাদ করতে পারে না। আওয়াজ তুলতে পারে না। মানিয়ে নেয়। কিন্তু বন্ধুর জন্য সব করতে পারে। আর ভানু, প্রতিবাদী। অন্যায় দেখলে চোয়াল শক্ত করে। এই ছবিতে সবাই দারুণ অভিনয় করেছে। কৌশিক গাঙ্গুলি এমন চরিত্র লিখেছেন, এটাই প্রশংসার যোগ্য। সেকারণে ছবিকে ভালো করতে নিজেকে যতটা নিংড়ে দেওয়া যায়, চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে যা করণীয় সবটা করেছি। মানুষ ভালোবাসছেন। এটাই তো পাওয়া বলো।

Advertisement

প্রশ্ন: ১০ বছর আগের একটা ছবি। একটু পিছনে যাই। এই ছবির অফার যখন এসেছিল তোমার কাছে, একটু সে সময়ের কথা যদি শেয়ার করো। কেন নিয়েছিলে এই ছবিটা।

উত্তর:
২০১৫ সাল। আমাকে রানা সরকার ফোন করেন৷ জানান, একটা ছবিতে একটা স্ট্রং চরিত্রে তোমাকে ভাবা হয়েছে। কৌশিক গাঙ্গুলির ছবি। আমরা অনেক আলোচনা করে, অনেক অভিনেতার কথা ভেবে অবশেষে তোমার নামটাই লক করলাম। সেই ধূমকেতুর সঙ্গে যুক্ত হওয়া। আমি জানি না, কোন কোন অভিনেতার নাম নেওয়া হয়েছিল সে সময়। তবে এটুকু জানি, তারাও হয়তো উজার করে দিতেন যোগেশকে প্রাণবন্ত করতে। মানুষ হয়তো বলছেন আমি ছাড়া এটা কেউ করতে পারত না। কিন্তু একথা ঠিক এখন আমাকে এই চরিত্র করতে বললে, আমার নিজের অভিনয় নিয়েই আরো ভেবে কাজ করব।
আরেকটা কথা। অভিনয় টিম ওয়ার্ক। সংলাপ যুক্ত। তাই অপর দিকের মানুষটা ভালো কাজ করলে এমনিই অভিনয় সহজ হয়ে যায়। আর আমার দেখা দেবের সেরা কাজ ধূমকেতু।

Advertisement

প্রশ্ন: এই ছবিতে দেব আর শুভশ্রীকে নিয়ে তুমি কী বলবে?

উত্তর:
দেব শুভশ্রীকে মানুষ ভালোবাসেন। কমার্শিয়াল ছবি করেই মানুষের মনে জায়গা করেছেন দুজন। কিন্তু সেই সময় কৌশিক গাঙ্গুলির ঘরানার সিনেমার অভিনয় করার জন্য রাজি ছিলেন ওনারা এটাই তো বড় বিষয়। পেশাদার অভিনেতা হয়তো একেই বলে। ধূমকেতু ছবিতে দেব শুভশ্রী সেটাই প্রমাণ করেছেন। ১০ বছর আগের শুটিং করা ছবি হলেও, এই ছবিতে দেব শুভশ্রী আদতে দেব শুভশ্রী নন। ভানু-রূপা হয়ে গিয়েছেন। এটাই তো জিতে যাওয়া। এই ধক বা সাহস সবার থাকে না।

প্রশ্ন: আজ তুমি সফল। তবে তোমার জীবনের স্ট্রাগলটা অশেষ। আজ যেখানে তুমি দাঁড়িয়ে আছো সেখানে আসতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।

উত্তর:
এই বাড়িটা ইন্দ্রপুরী স্টুডিওর অপজিটে। আগে স্বপ্ন দেখতাম এখানে বাড়ির। তালে টাকা বেঁচে যাবে। এই সামনের রাস্তার প্রতিটা পাথর জানে ইন্দ্রপুরীর অপজিটে ফ্ল্যাট নিতে আমাকে কী কী স্ট্রাগল করতে হয়েছে। কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে, মানুষ সফল হলে তার কথার দাম বেশি দেওয়া হয়। আমি নিশ্চিত অশেষ মানুষ আছেন, যাদের স্ট্রাগল আরও অনেক অনেক কঠিন। তাই আমাকে মানুষ যখন বলেন তোমার স্ট্রাগল নিয়ে বলো, আমি বলি কিছু না।

প্রশ্ন: একটা কথা বলো, তোমার মনে হয় না পৃথিবীটা দ্রুত বদলে যাচ্ছে।

উত্তর:
নিশ্চয়। এ তো হওয়ারই কথা। ইন্টারনেট। আমরা এখন এক ক্লিকেই পৃথিবীর সব দেশ, তাদের সংস্কৃতি কালচার, যাপন সব কিছুই জানতে পারি। আমাদের যাপন বদলেছে। তবে আমাদের দেশের একটা শিকড় রয়েছে। সেটা ভুলে গেলে চলবে না। আমরা অনেকেই অনেক কিছু জানি না। আর্যভট্ট শূন্য আবিস্কার করেছিলেন, চিকিৎসা শাস্ত্রে আমাদের দেশ কোন কাল থেকে পথ দেখিয়েছে। আসলে আমরা নিজেদের সংস্কৃতি যেন ভুলে না যাই। নিজেদের শিকড় মনে রাখা জরুরি। আর বদল বা পরিবর্তনই তো অবসম্ভবী।

প্রশ্ন: নেতা রুদ্রকে তো আমরা পাই। অভিনেতা রুদ্রকে এত কম পাই যে আক্ষেপ থাকে। তুমি তো আরও বেশি অভিনয় করতে পারো।

উত্তর:
রাজনীতি করলে, জনসেবার কাজে নিয়োজিত থাকলেই যে অভিনয় করতে পারব না তা তো নয়। আমি অভিনেতা। প্রযোজক পরিচালকেরা কেন আমার কথা ভাবেন না আমাকে নেন না, সেটা তারা বলতে পারবেন। কেন তারা ভাবেন আমি ব্যস্ত আমি জানি না। এ উত্তর তারা দেবেন। তবে তারা আমার প্রশংসা করেন। তালে কেন ছবি কম করি এ উত্তর আমার কাছে নেই। ব্রাত্য বসু শিক্ষামন্ত্রী। দেব এমএলএ। রাজও তাই। এত ব্যস্ত থেকে তারা কাজ করতে পারছেন আমি কেন পারব না। আসলে সকলে প্রশংসা করেন। কিন্তু আমাকে ছবির অফার দেন না। তাই আমার ছবির সংখ্যা কম।

প্রশ্ন: তালে কী রাজনীতির রঙের কারণ এর জন্য দায়ী?
উত্তর: হতে পারে। আমার মনে হয় রাজনীতি থাকুক সর্বত্র। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ থাকুক। কিন্তু শিল্পে কোনও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ থাকাটা খুব সমস্যার।

প্রশ্ন: এখন অভিনয়ের খিদে থাকলে কী প্রযোজক হওয়া প্রয়োজন আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে? তোমার মনে হয়? এটা একদমই দেবকে নিয়ে বললাম। কারণ, পর পর এত অন্য ধারার ছবি আমরা পেতাম না দেব প্রযোজনায় না এলে।

উত্তর:
পেতাম না হয় তো। আসলে মানুষ তো আনন্দ পেতে ছবি দেখতে আসেন, কিন্তু এই একটা ছবির পিছনে অনেক মানুষের অনেক কষ্ট থাকে। প্রযোজক পরিচালক, অভিনেতা অভিনেত্রী থেকে শুরু করে টিমের সকলের। সবটা বেধে কাজ করা সহজ নয়। দেব দারুণ কাজ করছে। প্রশংসার যোগ্য। অন্যধারার ছবি করছে। আসলে ছবি হলে বাংলা সিনেমার আরও উন্নতি হবে বলেই আমার মনে হয়।

প্রশ্ন: রিজিওনাল ছবি নিয়ে একটা খুব ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে তুমি কী বলবে।

উত্তর:
বাংলা ছবির জন্য সময় বরাদ্দ এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সরকারের ১৫ বছর সময় লাগলো। বাংলার সিনেমা বিশ্বে সমাদৃত। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের সিনেমা বিশ্বদরবারে মান পেয়েছে। এদিকে বাংলা সিনেমা বাংলায় হল পায় না। তবে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা প্রশংসনীয়। আর আরেকটা কথা ভালো বাংলা সিনেমা আরও বেশি করে হওয়া প্রয়োজন। আর কাজের পরিকাঠামো প্রয়োজন। বিবাদ মিটে কাজ হোক। ১০ লাখেও ভালো সিনেমা বানানো যায়। নির্ভয়ে কাজ হোক। বাংলার হলে বাংলা সিনেমা চলবে একটা নির্ধারিত সময়ে অন্যান্য রাজ্যের মত, এর থেকে ভালো কী হতে পারে।

প্রশ্ন: আচ্ছা রুদ্রকে আবার কবে নতুন কোন ভূমিকায় আমরা দেখতে পাব?

উত্তর: পরিচালক যেহেতু কাহিনী অসমাপ্ত রেখেছেন, অনেকেই ভাবছেন সিক্যুয়েল হবে। আমি জানি না সে বিষয়ে। তবে কৌশিক গাঙ্গুলির সঙ্গে আরেকটা ছবি হচ্ছে। পাশাপাশি আবার হাওয়া বদল। মানে হাওয়া বদলের সেকেন্ড পার্ট আসছে। আরও দুটো ছবি আগে করা ছিল। সেগুলো। এইসব আছে আর কী (হাসি)।

Advertisement