• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

কেন্দ্রের বঞ্চনার স্বীকৃতি

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার প্রবীণ সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় জানিয়েছেন, ‘মিথ্যে তথ্য দিয়েছে কেন্দ্র। বকেয়ার পরিমাণ আরও অনেক বেশি।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

অনেক দিন এড়িয়ে যাওয়ার পর অবশেষে কেন্দ্র মানতে বাধ্য হলো যে, ১০০ দিনের কাজ (মনরেগা) প্রকল্পে বাংলাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এই প্রকল্প খাতে ২০২২ সালের মার্চ থেকে বাংলার তিন হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আটকে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অবশ্য বক্তব্য, কেন্দ্রের নির্দেশাবলি পালন না করার অভিযোগে এই টাকা আটকে রাখা হয়েছে। যদিও তৃণমূলের স্পষ্ট বক্তব্য, যে অঙ্কের কথা বলা হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি বকেয়া রয়েছে রাজ্যের। তাছাড়া অ-বিজেপি রাজ্যে এসে মোদীর বিজয়রথ বারবার মুখ থুবড়ে পড়ায় প্রতিশোধ নিতেই ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাকে বঞ্চনা করা হচ্ছে। অথচ বাংলার থেকে অনেক বেশি দুর্নীতির অভিযোগ আসা বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার একেবারে ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকায়।

কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য ডেরেক ও’ব্রায়েন জানতে চেয়েছিলেন, ‘একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কোন কোন রাজ্যের কত টাকা আটকে আছে। সেই তালিকায় বাংলার উল্লেখ না করলেও একশো দিনের কাজে বাংলার বকেয়া সম্পর্কে আরেক তৃণমূল সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইকের প্রশ্নের লিখিত জবাবে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কমলেশ পাসওয়ান জানিয়েছেন, কেন্দ্রের নিয়মাবলি পালন না করায় আইন মেনে ২০২২ সালের ৯ মার্চ থেকে আটকে রাখা হয়েছে একশো দিনের কাজে বাংলার বকেয়া টাকা। শুধু তাই নয়, বকেয়ার নিরিখে গোটা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা আটকে রাখা হয়েছে বাংলায়। টাকার অঙ্কে তা ৩ হাজার ৩৮ কোটি। এই তালিকায় দেশের বাকি রাজ্যগুলির বকেয়া বাংলার তুলনায় সামান্যই। অন্ধ্রপ্রদেশের বকেয়া ১,৬৮৪.৩৯ কোটি টাকা, বিহারে ৮৯৩.৫৭ কোটি টাকা, উত্তরপ্রদেশে ৬৯৪.৭৬ কোটি টাকা এবং তেলেঙ্গানায় ৪৫৬.৩১ কোটি টাকা।

Advertisement

বাংলার বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে প্রতিবাদ আন্দোলনের পাশাপাশি দিল্লিতে গিয়েও বিষয়টি নিয়ে বারবার সরব হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। এই ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ উঠেছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। এত কিছুর পরেও একশো দিনের বকেয়া মেটানোর কোনও উদ্যোগ নেয়নি সরকার। এদিকে, গত মাসে শিবরাজ চৌহানের মন্ত্রকের আওতায় থাকা ১০০ দিনের কাজ, আবাস-সহ একগুচ্ছ প্রকল্প সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠকে রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন সচিব পি উলগানাথন হাজির ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের অর্থসচিব প্রভাত মিশ্রও। ওই দিনই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব শৈলেশ কুমারের সঙ্গে পৃথকভাবে বাংলা নিয়ে আলোচনার কথা ছিল বাংলার দুই সচিবের। কিন্তু সেই বৈঠক হয়নি।

Advertisement

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার প্রবীণ সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় জানিয়েছেন, ‘মিথ্যে তথ্য দিয়েছে কেন্দ্র। বকেয়ার পরিমাণ আরও অনেক বেশি। রাজ্যের তরফে সামান্য যে ভুলত্রুটি পাওয়া গিয়েছিল, তাও সংশোধন করে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রের শতাধিক পরিদর্শক দল এসেছিল রাজ্যে। অন্য কোথাও তা কিন্তু হয়নি। এর থেকেই কেন্দ্রের আসল উদ্দেশ্য বোঝা যায়। টাকা বন্ধ করে গরিবদের ভাতে মারা, পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা বাড়ানোই কেন্দ্রের উদ্দেশ্য। অথচ উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলার তুলনায় তিন-চার গুণ বেশি ত্রুটি রয়েছে। তবু একদিনের জন্যও ওদের ১০০ দিনের টাকা বন্ধ হয়নি, ৫০টা টিমও যায়নি ওইসব রাজ্যে। বাংলার মানুষ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এর সমুচিত জবাব দেবে।’

Advertisement