রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে ফের কড়া সুরে মন্তব্য করল আমেরিকা। হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো সাফ জানিয়ে দিলেন, রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে হবে ভারতকে। তাঁর দাবি, ‘ভারত যদি আমেরিকার বন্ধু হয়ে থাকতে চায়, তবে তাদের আচরণও তেমনই হতে হবে।’ নাভারোর অভিযোগ, রাশিয়া এবং চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে নয়াদিল্লি। তাঁর কথায়, ‘ভারত রাশিয়ার জ্বালানির জন্য একটি ক্লিয়ারিং হাউস-এর মতো কাজ করছে।’ বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউসের অসন্তোষ স্পষ্ট।
গত তিন বছর ধরে চলা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-আমেরিকা কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। যুদ্ধ থামাতে উদ্যোগী হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের লাভ রাশিয়া ব্যবহার করছে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে। এই কারণ দেখিয়ে নয়াদিল্লির উপরে চড়া হারে শুল্কও চাপিয়েছেন ট্রাম্প। এই পরিস্থিতিতেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। সোমবার তাঁর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। দুই বৈঠকের মাধ্যমে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির কোনও সম্ভাবনা তৈরি হলে, ভারত-আমেরিকা সম্পর্কে শীতলতা কিছুটা কাটতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Advertisement
হোয়াইট হাউসের বক্তব্য, রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ না হলে এই টানাপোড়েন সহজে কাটবে না। ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর ফলে রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়ে ভারতকে কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত করতে পেরেছেন তিনি। তবে নয়াদিল্লির অবস্থান একেবারেই ভিন্ন। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতের তেল আমদানি পুরোপুরি নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করেই হবে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়ালও সাফ জানিয়েছেন, ‘ভারত আজ এক শক্তিশালী রাষ্ট্র, এবং কোনও চাপে মাথা নত করবে না।’
Advertisement
এমন পরিস্থিতিতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে চিনের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক সম্পর্কের উন্নতি। সোমবারই নয়াদিল্লিতে এসেছেন চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। মাসের শেষে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের সম্ভাবনাও রয়েছে। ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পরে এই প্রথম উচ্চপর্যায়ের আলোচনার সম্ভাবনায় কূটনৈতিক মহলের নজর এখন তীব্র। এই প্রেক্ষাপটে পিটার নাভারোর মন্তব্য নতুন করে উত্তেজনা বাড়াল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বন্ধুত্বের দাবি রাখতে গেলে ‘বন্ধুর মতো আচরণ’ করতে হবে – এমন বার্তাই যেন দিয়ে রাখল হোয়াইট হাউস।
Advertisement



