• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

খুলে পড়ল মুখোশ

কন্যা সুরক্ষার নামে বিজেপির যেসব কর্মসূচি হয় তাও যে পুরোপুরি নাটক তা ফের প্রমাণ হলো অপরাজিতা বিল ফেরতের ঘটনায়।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

আরজি কর কাণ্ডের জেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা রুখতে বিধানসভায় পাস হওয়া ‘অপরাজিতা’ বিলটি ফেরত পাঠাল কেন্দ্রীয় সরকার। মূলত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর দপ্তরের আপত্তির আজুহাতে ধর্ষণ-খুনের মামলায় কঠোরতম শাস্তি হিসাবে ‘মৃত্যুদণ্ড’ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ‘সর্বসম্মতিতে’ পাস হওয়া বিলটিতে সম্মতি না দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।

বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তির ক্ষেত্রে অপরাজিতা বিল ফেরত পাঠিয়ে গেরুয়া শিবিরের মানসিকতা আরও স্পষ্ট করে দিল। অপরাজিতা বিল ফেরত পাঠানোর ঘটনা তীব্র আপত্তিকর, নিন্দনীয় এবং প্রতিবাদযোগ্য। প্রমাণ্ হয়ে গেল ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তির ক্ষেত্রে কঠোরতম ব্যবস্থা চালু করতে প্রস্তুত নয় বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকার। আসলে সোনার মেয়ে সাক্ষী মালিকদের শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযুক্ত সাংসদকে যাঁদের পাশে বসতে দেখা যায় সংসদে তাঁরা তো অপরাজিতা বিলকে কোনওভাবেই সমর্থন করতে পারেন না। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিজেপির মুখোশ এতেই খুলে গেল।

Advertisement

আরজি কর কাণ্ডের পর গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় কঠোরতম শাস্তির আইন করতে বিধানসভায় বিল আনা হবে। এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বিধনাসভায় আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বিলটি পেশ করেন। দীর্ঘ আলোচনা হয়। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নারী সুরক্ষায় রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার নানা উদাহরণ তুলে ধরে ঐতিহাসিক বক্তব্য রাখেন। এরপর ‘অপরাজিত বিল ২০২৪’ সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়ে যায়। দীর্ঘদিন রাজভবনে বিলটি ফেলে রেখেছিলেন রাজ্যপাল। রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল কংগ্রেসের চাপে শেষ পর্যন্ত বিধানসভায় পাস হওয়া বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হন রাজ্যপাল। কিন্তু, কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিলটি রাষ্ট্রপতি ভবনে পড়েছিল। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশে দলের সাংসদরা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করে দ্রুত নারী সুরক্ষার এই বিলটিতে তাঁর সম্মতির আবেদন জানান। পরে তৃণমূলের মহিলা সাংসদরাও অন্য এক অনুষ্ঠানে গিয়ে রাষ্ট্রপতিকে একই অনুরোধ জানান। তখন রাষ্ট্রপতি সরাসরি কোনও মন্তব্য না করলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর দপ্তরের তরফে নানা আপত্তির অজুহাত দিয়ে বিলটি রাজভবনে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের আপত্তির অজুহাত দিয়ে রাজ্যপাল বিলটি বিধানসভার সচিবালয়ে ফেরত পাঠাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার যে সমস্ত বিষয় তুলে রাজ্যপালের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, সেগুপলি নিয়ে রাজা সরকারের বক্তব্য জানতে চাওয়া হবে। রাজভবনের দাবি, প্রস্তাবে আপত্তি রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। কারণ, প্রস্তাবিত শাস্তিকে নিষ্ঠুর ও সামঞ্জস্যহীন বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রদপ্তর। অভিযোগ, অপরাজিতা বিল পাস হলে ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারার সঙ্গে সরাসরি বিরোধ তৈরি হবে। বস্তুত নাবালিকা ধর্ষকৈর শাস্তির ক্ষেত্রেও অপরাজিতা আইনের প্রস্তাব ন্যায় সংহিতার ধারার সঙ্গে অসামঞ্জস্য হচ্ছে বলে রাজভবন সূত্রে জানানো হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অপরাজিতা বিল বিধানসভায় পাস করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ করে দিয়েছেন, নারী নির্যাতনের ঘটনায় তিনি কতটা উদ্বিগ্ন এবং নারীদের সুরক্ষা নিয়ে কেন্দ্র যতটা লোকদেখানো নাটক করে, তা পুরোপুরি ভাঁওতা। কন্যা সুরক্ষার নামে বিজেপির যেসব কর্মসূচি হয় তাও যে পুরোপুরি নাটক তা ফের প্রমাণ হলো অপরাজিতা বিল ফেরতের ঘটনায়।

Advertisement