পুরীর এক কিশোরীর গায়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। ৭৫ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ হয়ে যাওয়া সেই কিশোরীকে প্রথমে ভুবনেশ্বর এমসে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে দিল্লি এমসে স্থানান্তর করানো হয়। দু’সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা চলার পর শনিবার মৃত্যু হয়েছে তার। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছিল ঘটনায় তিন দুষ্কৃতী জড়়িত রয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, ঘটনায় অন্য কারও যুক্ত থাকার প্রমাণ তারা পায়নি। এদিকে নাবালিকার বাবা একটি ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, মানসিক চাপের জন্য তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
শনিবার ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে লেখেন, ‘বালানগা ঘটনায় নির্যাতিতার মৃত্যুর খবরে গভীর শোকাহত। সরকার ও এইমস দিল্লির বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল টিমের অক্লান্ত প্রচেষ্টার পরও ওর জীবন রক্ষা করা গেল না।’
Advertisement
কিশোরীর বাবার বক্তব্য, কেউ গায়ে আগুন ধরিয়ে দেননি তাঁর কন্যার। সে মানসিক অবসাদে ভুগছিল। আর সেই অবসাদের কারণেই আত্মঘাতী হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘যে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে আমার মেয়েটি, দয়া করে ওর মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করবেন না।’ এদিকে কিশোরীর মৃত্যুর পরপরই পুলিশ জানায়, এই মামলায় তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। তদন্তের ভিত্তিতে তারা জানিয়েছে, এই ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত ছিল না। তবে মেয়েটি কিভাবে আগুনে পুড়ে গেল, তা নিয়ে পুলিশ কিছু স্পষ্ট করেনি।
Advertisement
মৃতার বাবার একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমার মেয়ে মানসিক চাপ নিতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। আমি আমার মেয়েকে হারিয়েছি। ও যে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, তা সহ্য সীমার বাইরে ছিল। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই যে ওড়িশা সরকার আমার এবং আমার পরিবারের জন্য অনেক কিছু করেছে। আমি সকলকে অনুরোধ করছি এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করবেন না।’
কিশোরীর মা যখন প্রাথমিক এফআইআর দায়ের করেছিলেন, তাতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে বাড়ি ফেরার পথে ওই কিশোরীকে তিন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি অপহরণ করে এবং গায়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মৃত্যুর আগে শুক্রবার, পুলিশ হাসপাতালে ওই কিশোরীর বয়ান রেকর্ড করে বলেই জানা গিয়েছে।
কিশোরীর বাবার এই দাবির পর একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে, মৃত্যুকালীন অবস্থায় কিশোরী মিথ্যা বলবে কেন? প্রায় ১৫ দিন মেয়ে যখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে সেই সময় কেন মুখ খোলনি তার বাবা? মৃতার মা পুলিশে অভিযোগ জানালেও তিনিও এখন চুপ। তাহলে কি কোনও রকম চাপ দেওয়া হচ্ছে মৃতার পরিবারের উপর? উত্তর অধরা। এই ঘটনা ঘিরে ইতিমধ্যেই ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুলাই পুরীর রাস্তায় অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় কিশোরী রাস্তায় দৌড়ানোর ঘটনায় শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ ওঠে, তিন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী তার রাস্তা আটকেছিল। কিছু ক্ষণ তর্কাতর্কি হওয়ার পরে ওই দুষ্কৃতীরাই তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। পরে অবশ্য একটি সূত্রে জানা যায়, নাবালিকা বয়ান বদল করেছে। সে জানিয়েছে, সে ওইদিন মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত ছিল। সেই কারণেই তিন হামলাকারীর গল্প ফেঁদেছিল।
এক প্রত্যক্ষদর্শী সেই দিন বলেন, ‘রাস্তায় দগ্ধ অবস্থায় দৌঁড়চ্ছিল কিশোরী। মুখে, গলায় বাঁধা কাপড়, হাত বাঁধা। সাহায্য চেয়ে ছুটে এসেছিল তাঁর বাড়ির দিকে। মেয়েটি খুব কষ্টে বলছিল, ওকে তিনজন মিলে আগুন লাগিয়েছে।’ এই ঘটনার পর গত ২০ জুলাই নির্যাতিতাকে ভুবনেশ্বর থেকে দিল্লির এইমসে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।কিশোরীর শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তাঁকে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়। গত শনিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় কিশোরীর।
Advertisement



