ভোটার তালিকার জন্য বিশেষ সমীক্ষায় আধার কার্ড, ভোটার কার্ড এবং রেশন কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপত্তি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে একথা জানিয়েছে কমিশন। বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য বিশেষ সমীক্ষা চালাচ্ছে কমিশন। তাতে নথি হিসাবে দেখাতে হচ্ছে নিজের এবং বাবা-মায়ের জন্মের শংসাপত্র। আধার কার্ড বা রেশন কার্ডের মতো নথি এক্ষেত্রে বিবেচিত হচ্ছে না।এই নিয়ে মামলা হয় শীর্ষ আদালতে। কমিশন জানিয়েছে, আধার কার্ড কেবলই পরিচয়পত্র। এই তিন ধরনের নথি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কেন আপত্তি রয়েছে তাদের, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছে কমিশন। তবে তালিকা থেকে বাদ পড়লেও এক্ষেত্রে কারোরই ভারতীয় নাগরিকত্ব খারিজ হবে না বলে জানিয়েছে কমিশন।
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য সমীক্ষা চালানোর সময় নথি হিসাবে নিজের এবং বাবা-মায়ের জন্মের শংসাপত্র দেখাতে হচ্ছে। আধার কার্ড বা রেশন কার্ডের মতো নথি এক্ষেত্রে বিবেচিত হচ্ছে না। এই নিয়ে মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। গত ১০ জুলাই শুনানিতে কমিশনের সমীক্ষার কাজে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। তবে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড এবং রেশন কার্ড এ ক্ষেত্রে নথি হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, তা বিবেচনা করে দেখতে কমিশনকে বলেছিল বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ। আদালত আরও জানায়, নির্বাচন কমিশনই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।যদি কমিশন ওই নথিগুলি গ্রহণ না করে, তবে তার উপযুক্ত কারণ দর্শাতে হবে। সেই নির্দেশ মাফিক সোমবার বিকেলে হলফনামা জমা দেয় নির্বাচন কমিশন। হলফনামায় দাবি করা হয়, আইনবিরুদ্ধভাবে বা ভোটারদের অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনও প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে না। এসআইআর-এর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা খারিজেরও আবেদন জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
Advertisement
হলফনামায় কমিশন ৩ ধরনের নথিতে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে। কমিশনের বক্তব্য, বিশেষ সমীক্ষার মাধ্যমে ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য ভোটার কার্ডকে গ্রহণযোগ্য নথি হিসাবে বিবেচনা করা যায় না। কারণ, ভোটার তালিকার ভিত্তিতেই ভোটার কার্ড তৈরি হয়।আর যেহেতু এখন ভোটার তালিকাই সংশোধন করা হচ্ছে, তাই ভোটার কার্ডকে নথি হিসেবে দেখানোর কোনও অর্থ নেই। কমিশন হলফনামায় আরও জানিয়েছে, ভোটার কার্ডটি হল আসলে পূর্ববর্তী কোনও ভোটার তালিকার অংশ। তাই শুধুমাত্র ভোটার কার্ডের ভিত্তিতে এই তথ্য যাচাই করা যায় না।
Advertisement
হলফনামায় কমিশন আরও জানিয়েছে, আধার কার্ড শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির পরিচয়ের প্রমাণ। কিন্তু এটি কোনও ভাবেই নাগরিকত্ব প্রমাণ করে না। তাদের বক্তব্য, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে যে আধার কার্ডগুলি দেওয়া হয়েছে, সেখানে এই সংক্রান্ত বিষয়ে স্পষ্ট বলা রয়েছে। ভোটার হওয়ার যোগ্যতা প্রমাণে আধার কার্ডের ভূমিকা নিয়ে ৩২৬ ধারায় বিধিনিষেধ রয়েছে। পাশাপাশি আধার কার্ড সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন হাইকোর্টের পুরনো পর্যবেক্ষণের কথাও উল্লেখ করেছে কমিশন।
রেশন কার্ড নিয়ে সমস্যার ক্ষেত্রে কমিশনের বক্তব্য, দেশে প্রচুর ভুয়ো রেশন কার্ড ছড়িয়ে রয়েছে। তাই এটিও সম্পূর্ণভাবে ভরসাযোগ্য নয়।
তবে রেশন কার্ড-সহ যে সকল নথি কমিশনের আধিকারিকদের কাছে জমা পড়বে, সবগুলিই তাঁরা বিবেচনা করে দেখতে বাধ্য। তবে সেগুলি গৃহীত হবে কি না, সে বিষয়টি নির্ভর করছে ওই নথিগুলিতে কমিশনের আধিকারিক সন্তুষ্ট হচ্ছেন কি না তার ভিত্তিতে। ক্ষেত্রবিশেষে যাবতীয় আইন মেনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র হিসাবে মোট ১১টি নথির তালিকা দিয়েছে কমিশন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশ সত্ত্বেও সেই তালিকায় আধার কার্ড, ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ডকে অন্তর্ভুক্ত করেনি কমিশন। সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২৮ জুলাই।
Advertisement



