• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

মুজিবের মাজার রক্ষায় প্রাণ গেল ৩ জনের, মৃতদের একজনের নাম দীপ্ত সাহা

বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি ক্রমশ অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। সুত্রের খবর, সেখানে জামাতের ছাত্র শাখা ছাত্র শিবির পুলিশের পোশাক পরে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

গোপালগঞ্জে মুজিবের মাজার রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ গিয়েছে তিনজনের। এঁদের মধ্যে একজনের নাম দীপ্ত সাহা। তিনি গোপালগঞ্জের বাসিন্দা। তাঁর দাদা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। বাকি দুইজনের নাম এখনও আওয়ামী লিগ জানাতে পারেনি। নিহতদের দেহ বর্তমানে গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে।

মঙ্গলবার গোপালগঞ্জের আওয়ামী লিগ নেতারা ঘোষণা করেছিলেন, প্রয়োজনে রক্তের বিনময়ে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার তথা স্মৃতিসৌধ  রক্ষা করবেন তাঁরা। বুধবার সেই স্মৃতিসৌধের ত্রি-সীমানায় যেতে পারেনি এনসিপি ও জামাতের ক্যাডার বাহিনী। তবে তাঁদের আটকাতে গিয়ে প্রাণ গিয়েছে তিনজনের।

Advertisement

প্রসঙ্গত, ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দেশের একের পর এক ঐতিহাসিক সৌধ ও স্থাপত্য ভেঙে দিচ্ছে। মূল উদ্দেশ্য, মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস বাংলাদেশের মানুষের মন থেকে মুছে দেওয়া। সম্প্রতি মুজিবের মূর্তি ভাঙা থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকার শাহবাগে ‘প্রজন্ম চত্বর’ ভেঙে  ‘জুলাই মনুমেন্ট’ তৈরির সিদ্ধান্ত তার কয়েকটি জ্বলন্ত উদাহরণ। এবার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, এবার কি তাহলে গোপালগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে মুজিবের মাজারেও ভাঙচুর করতে পারে বর্তমান সরকার ও তার সমর্থকরা?

Advertisement

এই আশঙ্কায় গোপালগঞ্জে  রাত জেগে মুজিবের মাজারে পাহারা দিতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগের কর্মী ওরফে ‘হাসিনা বাহিনী’। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে, হাজার হাজার নারী-পুরুষ মুজিবের ছবি দেওয়া পতাকা হাতে গোপালগঞ্জের রাস্তায় জড়ো হয়েছেন। নারী-পুরুষ উভয়ের হাতেই লাঠি, বাঁশ, লোহার রড় রয়েছে। আওয়ামী লিগ তাঁর দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের আহ্বান জানান, অবিলম্বে গোপালগঞ্জে পৌঁছে যাওয়ার জন্য। এনসিপি ও জামাত বরিশাল ও ঢাকা থেকে লোকজনকে গোপালগঞ্জে জড়ো করছে খবর পেয়ে দলের অনুগামীদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছে, ‘আসুন সকলে মিলে জাতির পিতার স্মৃতিসৌধ রক্ষা করি।’ সেই মতো হাসিনার দলের সেনারা দলে দলে গোপালগঞ্জে গিয়ে পাহারা দিতে শুরু করেন।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি ক্রমশ অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। সুত্রের খবর, সেখানে জামাতের ছাত্র শাখা ছাত্র শিবির পুলিশের পোশাক পরে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছে। এই ঘটনায় ১৩জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। যদিও এখনও পর্যন্ত এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেনি পুলিশ-প্রশাসন। তবে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, পথে এবং ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে হেলমেট পরা বহিরাগত লোকজনকে দেখা যাচ্ছে। অনেকে দাবি করেছেন, তাঁরা গুলির শব্দ শুনেছেন। বুধবার সকালেই ছাত্র লিগ সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের এক দফা সংঘর্ষ হয়। পুলিশ তাঁদের  সরিয়ে দিতে গেলে দলবদ্ধ কর্মীরা পাল্টা হামলা চালায়। প্রাণ বাঁচাতে গাড়ি ফেলে পালায় পুলিশ। ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করার পর তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়। আওয়ামী লিগের জেলা পর্যায়ের কোনও নেতাকেই রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না। মূলত আওয়ামী পন্থী ছাত্র-জনতাই প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। এনসিপির মিছিল বেলা ১১’টায় গোপালগঞ্জ পৌঁছনোর কথা থাকলেও প্রশাসনের পরামর্শে তাঁরা ধীরে ধীরে এগচ্ছেন বলে সূত্রের খবর।

গত বছর অক্টোবরে ছাত্র লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তা সত্ত্বেও নিষিদ্ধ সেই সংগঠনের পতাকা হাতে কয়েক হাজার মানুষ ঢাকা-গোপালগঞ্জ-বরিশাল হাইওয়ে দখল করে রেখেছে। একদিকে বরিশাল থেকে গোপালগঞ্জের দিকে এগচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টির পদযাত্রা, অন্যদিকে আওয়ামী লিগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লিগ গোপালগঞ্জগামী রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ব্যারিকেড তৈরি করেছে। এই গোপালগঞ্জেই রয়েছে শেখ মুজিবর রহমানের মাজার, যা এখন জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতি সৌধে হামলা চালাতে পারে এনসিপি ও জামাত। এমন আশঙ্কায় ছাত্র লিগের কর্মীরা টুঙ্গিপাড়া দখল করেছে। যদিও সেখানে সেনা ও পুলিশের টহল রয়েছে, তা সত্ত্বেও আলাদা করে নজরদারি চালাচ্ছে ছাত্র লিগ।

Advertisement