ঐতিহাসিক লর্ডসের মাঠে তৃতীয় টেস্ট ম্যাচে ভারতকে এইভাবে ইংল্যান্ডের কাছ হার মেনে নিতে হবে, তা কেউই উপলব্ধি করতে পারেননি। তার প্রধান কারণটা হল, দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড শিবিরে যেভাবে ভারতের বিধ্বংসী বোলাররা ধস নামিয়ে দিয়েছিলেন, তখনই ক্রিকেটপ্রেমীরা জেতার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে ইংল্যান্ডের ১৯২ রানকে তাড়া করাটা ভারতের পক্ষে খুব কঠিন ব্যাপার ছিল না। জেতার লক্ষ্যে বোলাররা যে মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন, সেখানে দাঁড়িয়ে ব্যাটসম্যানদের সাহসী ভূমিকা দরকার ছিল। যে দলে যশস্বী জয়সওয়াল, ঋষভ পন্থ, লোকেশ রাহুল ও অধিনায়ক শুভমন গিলের মতো ব্যাটসম্যানরা রয়েছেন, সেখানে এই ভাবনা কোনও অমূলক ছিল না। অবশ্য কোচ গৌতম গম্ভীরের পছন্দের করুণ নায়ারকে দলে রেখে কোনও বাড়তি সুবিধা পেলেন না। ঘরোয়া ক্রিকেটে করুণ নায়ার যতই বড় অঙ্কের রান করুন না কেন, আন্তর্জাতিক আঙিনায় স্বাভাবিকভাবে তিনি ব্যর্থ।
প্রথম দু’টি টেস্টে করুণ নায়ারের রান দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে তাঁর আর প্রয়োজন নেই তৃতীয় টেস্টে প্রথম একাদশে থাকার। সেই ভাবনাকে আমলই দেননি কোচ গৌতম গম্ভীর। লর্ডসের মাঠে তিনি হতাশ করেছেন। সাধারণত যে কোনও ক্রিকেটেই ব্যাটসম্যানদের ভূমিকাটা থাকে সবচেয়ে বড় জেতার তাগিদে। সেখানে দেখা গেল লর্ডসের মাঠে বোলারদের দাপট। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা কী করলেন? ভারতের স্কোরবোর্ডে তাঁদের নামটা প্রায় অন্ধকারেই থেকে গেল।
Advertisement
ইংল্যান্ডের ১৯২ রানকে তাড়া করতে ভারতীয় দল যখন খেলতে নামল, তখন দেখা গেল শেষ দিনে ভারতীয় দলের শিবিরে অমাবস্যা গ্রাস করেছে। সেই খান থেকে কিছুটা ধরে খেলার জন্য অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা একাই লড়ে গেলেন। ক্রিকেটের পরিভাষায় একটা শব্দ বার বার ব্যবহার করা হয় অলরাউন্ডার দলের সম্পদ। সত্যিই তাই।
Advertisement
অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা যেভাবে দলকে টেনে নিয়ে গেলেন তা অবিশ্বাস্য। উইকেটে কীভাবে টিকে থাকতে হয়, তার উদাহরণ হয়ে থাকবেন লর্ডসের মাঠে রবীন্দ্র জাদেজা। ৮ উইকেটে ১১২ রান। সেই জায়গা থেকেই ভারতের আকাশে তখন সূর্যের নাম রবীন্দ্র জাদেজা। যশপ্রীত বুমরাকে পাশে নিয়ে জাদেজা ধীর গতিতে উইকেটে খেলে চলেছেন। বোলিংয়ে চমক দিয়েছেন যশপ্রীত বুমরা। তিনিও মাঝেমধ্যে ঝলসে উঠতে জানেন। তাই কোনও কোনও সময় যশপ্রীত বুমরাকেও অলরাউন্ডার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে থাকে।
বুমরাকে রান করতে দেননি জাদেজা। একটাই লক্ষ্য ছিল উইকেটে টিকে থাকা। হয়তো উইকেটের মাঝপথে দাঁড়িয়ে জাদেজা বলে দিয়েছিলেন বুমরাকে তুমি বল লক্ষ্য করে শুধু খেলে যাও, রান করার চেষ্টাটা আমার উপর ছেড়ে দাও। সেই কথা মতোই দু’জনে ভালো জুটি বেঁধে ফেলেছিলেন। কিন্তু বেন স্টোকসের একটা বল খেলতে গিয়ে ভুল করে ফেললেন বুমরা। ক্যাচ চলে যায় ইংল্যান্ডের পরিবর্ত খেলোয়াড়ের হাতে। বুমরা বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন উইকেটের দিকে। চোখ মুছে নিয়ে তিনি প্যাভিলিয়নের দিকে পা বাড়ান। তিনি নিজেও ভাবতে শুরু করলেন, ভারত হয়তো এই টেস্টে পিছিয়ে পড়বে। তাঁর ভাবনা সত্যি হলেও রবীন্দ্র জাদেজা দেখিয়ে দিলেন কঠিন সময়ে কীভাবে বুক চিতিয়ে খেলতে হয়। তাই তো মহম্মদ সিরাজকে নিয়েও শেষ উইকেটে ভারতের আকাশে আশার আলো ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছিলেন। হয়তো পারলেন না। কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজা যে খেলাটা খেললেন, তার জন্য কুর্নিশ তোলা থাকবে।
এটা তো সবারই জানা আছে, বোলার মহম্মদ সিরাজের কাছ থেকে সেই অর্থে কোনও রান পাওয়া যাবে না। কিন্তু বুমরা সাহস দিয়ে চলেছেন সিরাজকে। সিরাজ তুমি খেলো, আমি আছি এই মনোভাবে হয়তো আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন না থাকায় জাদেজার ইচ্ছা পূরণ হল না। সিরাজ আউট। ভারতের আকাশে অন্ধকার নেমে এল। ভারত পরাস্ত। তবুও ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা রবীন্দ্র জাদেজার সাহসী ভূমিকাকে যেভাবে অভিনন্দন জানান, তা লর্ডসের মাঠে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।
Advertisement



