দেশে দিনে দিনে বেড়েই চলেছে কৃষকদের আত্মহত্যার ঘটনা। গত বেশ কিছু বছর ধরে মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা জুড়ে চলছে কৃষক আন্দোলন। সরকার কৃষকদের স্বার্থে যত আশাবাদী কথাবার্তাই বলুক না কেন বাস্তবে দেশে কৃষকদের ভালো থাকার কোনও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। নরেন্দ্র মোদী সরকার আসার পর থেকেই সবথেকে বেশি কোনঠাসা হয়ে পড়েছে দেশের কৃষক শ্রেণি।
সারা দেশের মধ্যে কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যা সব থেকে বেশি দেখা যাচ্ছে মহারাষ্ট্রে। সম্প্রতি বিধানসভার অধিবেশনে মহারাষ্ট্রের সরকার জানিয়েছে এই বছর রাজ্যে ৭৬৭ জন কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন। এই হারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে থাকলে চলতি বছরেই গত দু’বছরের কৃষক মৃত্যুর রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রে। জানাগিয়েছে, মৃত কৃষকদের মধ্যে ২০০ কৃষকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করেছে দেবেন্দ্র ফড়নবীসের প্রশাসন।
Advertisement
মহারাষ্ট্রের বিধানসভা অধিবেশনে বিরোধী দল কংগ্রেস ফড়নবীস সরকারের কাছে কৃষকদের আত্মহত্যা বিষয়ে রিপোর্ট চায়। সরকার জানায় রাজ্যে মোট ৭৬৭ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন যাদের মধ্যে ৩৭৬ জনের পরিবারকে সরকারের তরফ থেকে ১ লক্ষ টাকা করে সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। যে কৃষকেরা আত্মহত্যা করেছেন তাঁরা অধিকাংশই বিদর্ভ অঞ্চলের অধিবাসী। ইয়াতমাল, আকোলা, অমরাবতী, ওয়াসিম ও বুলদানা এলাকাগুলিতে ৩ মাসের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৫৭ জন কৃষকের। হাঙ্গোলি জেলায় আত্মহত্যা করেছেন ২৪ জন। ২০২৫-এর মার্চ মাসে সরকার এই রিপোর্ট পেশ করে এবং এর পরে কৃষকমৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Advertisement
বিরোধী দলের অভিযোগ, অসঙ্গত কারণ দেখিয়ে অনেক মৃত কৃষকের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করেনি সরকার। সরকার এর পরিপ্রেক্ষিতে জানিয়েছে, মৃত কৃষকদের পরিবার সরকারের কাছে সাহায্যের জন্য কোনোরকম আবেদন করেনি, তাই তাঁদের সাহায্য করা যায়নি। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে কৃষকদের আত্মহত্যা রুখতে অনেকগুলি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেমন, কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের ৬০০০ টাকা করে দিচ্ছে, রাজ্য সরকারও কৃষকদের বছরে ৬০০০ টাকা করে দিচ্ছে। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য যে সব কৃষকদের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে তাঁদের সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন যে, সরকারিভাবে এই সমস্ত প্রকল্পের কথা বলা হলেও বাস্তবে এইসব সাহায্য পাওয়া যায় না। ফসলের দাম না বাড়ালে এবং কৃষি ঋণ থেকে কৃষকদের অব্যহতি না দিলে কৃষকেরা শস্যের যথেষ্ট দাম পাচ্ছেন না এবং ফলে ঋণের জালে জড়িয়ে আত্মঘাতী হচ্ছেন।
বিরোধীদের প্রবল দাবি সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃষকদের অবহেলা করে চলেছে। একদিকে কৃষকদের ন্যায্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) দাবি মানেনি সরকার। অন্যদিকে, ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রুখতে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে রাজ্য সরকারের এই নির্মম নীতরি কারণেই কৃষকদের সামনে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই বলে মনে করছেন অধিাকাংশ রাজনীতিবিদই।
Advertisement



