দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছর যাবত যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর অবশেষে নতুন বিজ্ঞাপন নীতি আনতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। পুরসভা সূত্রে খবর, চলতি জুন মাসের শেষ সপ্তাহ বা আগামী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেই এই নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। পুরসভার দাবি, শহরের আর্থ-সামাজিক কাঠামো মজবুত করা এবং বিজ্ঞাপন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরানোই এই নীতির মূল লক্ষ্য।
নতুন বিজ্ঞাপন নীতির অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক হল – কলকাতা শহরে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থার/মন্ত্রকের যেসব বিজ্ঞাপন বসানো হয়, সেগুলি থেকে অর্জিত আয়ের ৫০ শতাংশ ভাগ এবার থেকে দিতে হবে কলকাতা পুরসভাকে। এর ফলে রেল, মেট্রো রেল, জাহাজ পরিবহণ মন্ত্রক-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার বিজ্ঞাপন আয়ের একটি বড় অংশ পুরসভার কোষাগারে প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Advertisement
এতদিন পর্যন্ত এই বিজ্ঞাপনগুলি থেকে অর্জিত সমস্ত অর্থ সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থারই ঘরে ঢুকত। এবার সেই প্রথার ইতি ঘটতে চলেছে। নতুন নীতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, শহরের যে কোনও বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের ক্ষেত্রে পুরসভা অন্যতম অংশীদার হবে। শুধু কেন্দ্র নয়, রাজ্য সরকারের অধীন দপ্তর, সংস্থা ও পর্ষদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম কার্যকর হবে। বিজ্ঞাপন দিতে হলে নিতে হবে পুরসভার অনুমতি।
Advertisement
বর্তমানে শহরে যেসব হোর্ডিং এখনও পুরসভার আওতার বাইরে রয়েছে, সেগুলির কাঠামোও এবার পুরসভার নিয়ন্ত্রণে আসবে। পাশাপাশি, সমস্ত বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং ধাপে ধাপে ‘মনোপলি’ ভিত্তিতে পরিচালনার পরিকল্পনা নিচ্ছে পুরসভা। এই ‘মনোপলি’ ব্যবস্থা কেমন হবে, তা নির্ধারণ করবে পুরসভাই। কিছু হোর্ডিং ডিজিটাল রূপে রূপান্তরিত করা হবে।
পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ‘শহরের সৌন্দর্যবৃদ্ধি এবং বিজ্ঞাপন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের লক্ষ্যেই এই নীতি আনা হচ্ছে। আয়ও বাড়বে, শৃঙ্খলাও আসবে।’ ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এই নীতিতে। পাশাপাশি, পরিবেশবান্ধব বিজ্ঞাপনের বিষয়টিকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। পুনর্নবীকরণযোগ্য উপাদান ব্যবহার করে হোর্ডিং তৈরি করলে মিলবে বিশেষ ছাড়।
পরিবেশ সংরক্ষণের কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু কড়া নিষেধাজ্ঞাও জারি হচ্ছে। শহরের কোনও ব্রিজ, উড়ালপুল বা ফুট ওভারব্রিজের বিমে বিজ্ঞাপন বসানো যাবে না। সেই সমস্ত স্থান সবুজায়নের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। পাশাপাশি, শহরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা পুরোপুরি বেসরকারি বিজ্ঞাপন মুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও শহরের ল্যাম্পপোস্ট, সিগন্যাল পোস্টে আর কোনও বিজ্ঞাপন লাগানো যাবে না। সরকারি হোর্ডিংয়ের সংখ্যাও ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে পুরসভার। পুর আধিকারিকদের মতে, এই নতুন নীতি কার্যকর হলে শহরের বিজ্ঞাপন ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটবে। একই সঙ্গে, শহরের আর্থিক ভিতও হবে শক্তপোক্ত।
Advertisement



