অভিশপ্ত বিমান দুর্ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি। দেহ শনাক্ত করার জন্য একমাত্র ভরসা ডিএনএ রিপোর্ট। মৃতদের পরিবার-পরিজনেরা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিচ্ছেন। কিন্তু কবে আসবে সেই রিপোর্ট? কবেই বা প্রিয়জনের দেহাংশ শেষবারের মতো দেখতে পাবেন তাঁরা? সেই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে। শোনা যাচ্ছে, রিপোর্ট আসতে লাগবে ৭২ ঘণ্টা। এত দেরির জন্য সরকার ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন মৃতদের আত্মীয়-পরিজনেরা। হাসপাতালের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
মুম্বইয়ের বাসিন্দা জাভেদ বিমান দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হারিয়েছেন। রীতিমতো দিশেহারা অবস্থা তাঁর। তাঁর স্ত্রীর দেহ শনাক্তের জন্য নমুনা দিয়েছেন স্ত্রীর কাকা। নেওয়া হয়েছে রক্ত ও অন্যান্য নমুনা। খোঁজখবর নিয়ে তিনি জেনেছেন, ৭২ ঘণ্টার পর সেই রিপোর্ট আসবে। ফোন করে মৃতের আত্মীয়দের সেই খবর জানানো হবে। সেই ফোন কবে আসবে তা নিয়ে সন্দিগ্ধ জাভেদ। ফোন এলেই অবশ্য দেহ মিলবে না। তারপরও নানা নিয়ম রয়েছে। বিভিন্ন নিয়ম মানার পর দেহ হাতে পাবেন মৃতদের আত্মীয়-পরিজনেরা।
Advertisement
জাভেদের কাকাশ্বশুরও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘এতগুলো মানুষের প্রাণ চলে গেল। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কেন লাগবে এতটা দীর্ঘ সময়?’ দ্রুত দুর্ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে রিপোর্ট প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন জাভেদ ও তাঁর পরিবার। বিভিন্ন কাজে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনও সহযোগিতা করছেন না বলেও অভিযোগ তুলেছেন মৃতের আত্মীয়রা।
Advertisement
কিন্তু কেন এত সময় লাগবে? জানা যাচ্ছে, মৃতদের আত্মীয়ের থেকে নমুনা সংগ্রহের পর তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে গান্ধীনগরের গবেষণাগারে। সেখান থেকে ৭২ ঘণ্টা পরে রিপোর্ট এসে পৌঁছবে আহমেদাবাদের বিজে হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে। সেখান থেকে তা পৌঁছবে সিভিল হাসপাতালের কাসৌটি ভবনে। তারপর একে একে ফোন করে জানানো হবে মৃতের আত্মীয়দের। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া নিয়েই ক্ষুব্ধ মৃতদের আত্মীয়-পরিজনেরা।
এদিকে বিমান দুর্ঘটনার তৃতীয় দিনের মাথায় সাংবাদিক বৈঠক করলেন অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রামমোহন নাইডু। তিনি জানান, বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত করবে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। সেই কমিটির নেতৃত্বে থাকছেন স্বরাষ্ট্র সচিব। কমিটিতে থাকবেন বায়ুসেনার ডিজি, সিভিল অ্যাভিয়েশনের ডিজি, আহমেদাবাদের পুলিশ কমিশনার, বিদেশ মন্ত্রকের সেক্রেটারি, ফরেনসিক বিভাগের আধিকারিক, আইবি-র স্পেশাল ডিরেক্টর এবং গুজরাট সরকারের কয়েকজন কর্তা। এই কমিটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করবে।
শুক্র এবং শনিবার ধ্বংসস্তূপ থেকে বেশ কয়েকজনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দঁড়িয়েছে ২৭৯। আরও দেহ উদ্ধার হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি তদন্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করছেন তদন্তকারী দলের প্রতিনিধিরা। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দুপুরে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর ছেড়ে ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ বিমানটি নিকটবর্তী বিল্ডিংয়ে ধাক্কা খায়। সংঘর্ষের পরেই তীব্র শব্দে বিস্ফোরণ হয় এবং বিমানে আগুন ধরে যায়। বিমানে থাকা ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যে ঘটনার দিনই ২৪১ জনের মৃত্যু হয়। এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রে জানা গিয়েছে, বিমানে ২৪২ জনের মধ্যে যাত্রী ছিলেন ২৩০ জন। বাকিরা পাইলট এবং বিমানের ক্রু সদস্য।
Advertisement



