ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম পাকিস্তানের হামলার সব প্রচেষ্টাকে রুখে দিয়েছে, সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে এমনই দাবি করল ভারতীয় সেনা। সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিজিএমও দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দেন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ভারতের অভিযান চলবে। অন্যদিকে জঙ্গিদের হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল পাক সেনাই। পহেলগাম জঙ্গি হামলায় ২৬ জনকে জঙ্গিরা হত্যা করার পর পাল্টা জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। নির্দিষ্ট জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে ভারতীয় সেনা হামলা চালিয়েছিল, সে কথা সোমবার ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন ডিজিএমও রাজীব ঘাই। সাংবাদিক বৈঠকে রাজীব ঘাই এদিন বলেন, ‘পহেলগাম জঙ্গি হামলায় পাকিস্তানের পাপের ঘড়া ভর্তি হয়ে গিয়েছিল।’
ভারতীয় সেনার তরফে রবিবারের পর সোমবারও নির্দিষ্ট তথ্য ও ছবি এবং ভিডিও দেখিয়ে ব্যাখ্যা করা হয় কীভাবে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিগুলি বেছে বেছে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। পাল্টা পাকিস্তানের আক্রমণকে প্রতিহত করেছে ভারতীয় ডিফেন্স সিস্টেম। ডিজিএমও জানান, এমনভাবে বহুস্তরীয় সুরক্ষাবলয় তৈরি রয়েছে ভারতের যাতে ওদের যে কোনও ড্রোন বা তার থেকেও আধুনিক অস্ত্রের আক্রমণ আটকানো সম্ভব।সাংবাদিক বৈঠকে ভারতীয় সেনার তরফে জানানো হয়, আগামী দিনে যে কোনও অভিযানের জন্য প্রস্তুত ভারতীয় সেনার তিন বাহিনী। এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভারতের সম্পূর্ণ নিজস্ব। ডিজিএমও এদিন বলেন, ‘আমাদের লড়াই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। পাকিস্তান সেনা এর মধ্যে জঙ্গিদের সাহায্য করছে। আমরা ৭ মে তাই জঙ্গি ঘাঁটিতে আক্রমণ করি। পাকিস্তান সেনা এটাকে নিজেদের লড়াই ভাবে। এতে ওদের যা ক্ষতি হয়েছে তার দায় ওদের। আমাদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম একটা দেওয়ালের মত দাঁড়িয়ে আছে। একাধিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আমাদের আছে। ড্রোন আর ইউএভি ওরা ব্যবহার করেছে। এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আমাদের কাছে আছে।একাধিক রকেট, ইউএভি, ড্রোন ধ্বংসাবশেষ এইসবই আমাদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম প্রতিহত করেছে।’
Advertisement
ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নিয়ে বিস্তারিত জানান৷ তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে জঙ্গিরা তাদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের ধরন বদলেছে৷ সামরিক তো বটেই, পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের উপর হামলা বেড়ে যাচ্ছিল৷ ২০২৪ সালে জম্মুর শিবখোরি মন্দিরে যাওয়ার সময় যাত্রীদের উপর আক্রমণ এবং ২০২৫ সালে পহেলগামে পর্যটকদের উপর হামলা এই বিপজ্জনক ট্রেন্ডের বিশেষ উদাহরণ৷ আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রেখা না পেরিয়েই আমরা পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটিগুলিতে অব্যর্থ হামলা চালিয়েছিলাম৷ আমরা জানতাম এরপর আমাদের উপরেও সীমান্তের ওপার থেকে হামলা ধেয়ে আসবে৷ তাই আমরা আগে থাকতে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে সম্পূর্ণ তৈরি করে রেখেছিলাম৷’
Advertisement
সোমবার রাজীব ঘাই ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন এয়ার অপারেশনের ডিরেক্টর জেনারেল এয়ার মার্শাল একে ভারতী এবং নাভাল অপারেশনের ডিরেক্টর জেনারেল ভাইস অ্যাডমিরাল এএন প্রমোদ৷ এদিনও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিরোধ ব্যবস্থার কথা বিশদে তুলে ধরেন সেনাবাহিনীর এই তিন শীর্ষ কর্তা৷ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কীভাবে পাকিস্তানের একের পর এক ড্রোন, ইউএভি, ইউক্যাভ, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মোকাবিলা করেছে, তা বোঝাতে এয়ার মার্শাল একে ভারতী ক্রিকেটের উদাহরণ দেন৷ এয়ার মার্শাল একে ভারতী বলেন, ‘ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন এবং আনম্যান্ড কমব্যাট এরিয়াল ভেহিকল পাঠাচ্ছিল পাকিস্তান৷ ভারতের নিজস্ব সফ্ট এবং হার্ড কিল কাউন্টার-ইউএএস সিস্টেম এবং সুপ্রশিক্ষিত ভারতীয় বায়ু সেনার আধিকারিকরা তা রুখে দিয়েছেন৷’
তাঁর বক্তব্য, ‘আমরা আগেও বলেছি আমাদের যুদ্ধ শুধুমাত্র জঙ্গিদের বিরুদ্ধে৷ তাই ৭ মে আমরা শুধু জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছি৷ কিন্তু দুঃখের বিষয়, পাকিস্তান সেনা জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মেলানোকেই ঠিক বলে মনে করেছে৷ জঙ্গিদের লড়াইকে তারা নিজেদের লড়াইতে পরিণত করেছে৷ এই অবস্থায় আমাদের জবাব দেওয়াটা অবশ্য প্রয়োজন ছিল৷ এই সংঘাতে ওদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য ওরা নিজেরা দায়ী৷’ভারতের সেনাঘাঁটি ও নাগরিক পরিকাঠামোগুলির নিশানায় পাকিস্তান চিনের পিএল মিসাইল ব্যবহার করেছে বলে জানান বায়ুসেনা আধিকারিক৷ সেই ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষের ছবিও দেখানো হয়৷ চিনে ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়া পাকিস্তান দূর পাল্লার রকেট, লয়টার মিউনিশন, আনম্যানড এরিয়াল সিস্টেম দিয়েও হামলা চালিয়েছে৷ সেই প্রমাণের ছবি তুলে ধরে সেনা৷ তুরস্কে তৈরি কিছু অস্ত্রও ব্যবহার করেছে পাকিস্তান৷ নূর খান এয়ারবেস, রহিম ইয়ার খান বেসে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পরের অবস্থা ভিডিওয় দেখায় সেনা৷ শত্রু দেশের এই সব হামলার মোকাবিলা করেছে ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং সেনারা।
ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতির পরেই শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে ফের তা লঙ্ঘন করে সীমান্তের বেশ কিছু জায়গায় গুলি চালিয়েছিল পাক সেনা। ড্রোন এবং গোলা বর্ষণের খবরও পাওয়া গিয়েছিল। ভারতীয় সেনা এর যোগ্য জবাব দেবে বলে জানিয়েছিলেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি। কিন্তু, এরপর থেকেই শান্ত হয়েছে এলাকা। নতুন করে আর এখনও পর্যন্ত কোনও হামলার খবর পাওয়া যায় নি। এরমধ্যেই সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিজিএমও। তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দেন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ভারতের অভিযান চলবে।
Advertisement



