সিন্ধুর মতো বাংলাদেশে জল বন্ধের দাবি জানালেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। বাংলাদেশকে বিষধর সাপের সঙ্গে তুলনা করে দুবে বলেন, ‘গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তি এক বিরাট ভুল ছিল। ১৯৯৬ সালে কংগ্রেস সরকার এই ভুল করেছিল। আমরা আর কতদিন এই বিষাক্ত সাপেদের জল সরবরাহ করব? এখন সময় এসেছে এদের পায়ের নীচে পিষে মারার।’ এর পাশাপাশি তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরের সুর মেলান মোদীর মন্ত্রিসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য।
বাংলা ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রীদের বক্তব্য তুলে ধরে নিশিকান্ত দুবে বলেন, ‘বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বারবার বলে এসেছেন, আমাদের বাংলাদেশের সঙ্গে জল ভাগাভাগি করা উচিত নয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও তিস্তা জলবণ্টনের বিরোধিতা করেছেন। এই অবস্থায় যতক্ষণ না এই দেশগুলি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করা বন্ধ করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের উচিত বাংলাদেশের জল বন্ধ করে দেওয়া।’
Advertisement
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারংবার তিস্তা জলবণ্টন চুক্তির বিরোধিতা করেছেন। এই প্রসঙ্গে গত বছর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওরা (বাংলাদেশ) আমাদের ভাইবোনের মতো, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ওদের আমরা ভালোবাসি। কিন্তু জল দিয়ে দিলে উত্তরবঙ্গের মানুষ ভুগবে। কথা ছিল তিস্তার জলবণ্টনের জন্য যা ক্ষতি হবে কেন্দ্র-রাজ্যকে দেবে। এক পয়সা দেয়নি। ফরাক্কার উপর বিশাল সংখ্যক মানুষ নির্ভরশীল। কিন্তু বাংলার স্বার্থ আপস করে আমি কোনও চুক্তিতে যেতে পারব না। আমার নাকের ডগা দিয়ে জল কেটে নিয়ে যাবে আর আমি নাকের জল চোখের জলে এক হব? আমি মানব না।’
Advertisement
তিস্তা নদীর জল শীতকালে পায় না বলে বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ। সেই সময় তাদের চাষের জন্য জলের প্রয়োজন হয়। বদলে বর্ষায় বাংলাদেশে যায় তিস্তার জল, যখন গোটা দেশ বানভাসি। তিস্তার জলের সুষম বণ্টনের প্রস্তাব দিয়েই এর পর একটি চুক্তির কথা বলা হয়। ২০১১ সালে সেই চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা ছিল ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোয়াধ্যায় তাতে বাধা দেন।
ওই চুক্তির প্রস্তাব ছিল, ‘ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তিস্তার জলের ৪২.৫ শতাংশ পাবে ভারত। ৩৭.৫ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ।’ কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, উত্তরবঙ্গের মানুষের ক্ষতি করে তিনি তিস্তার জল দিতে পারবেন না। বাংলাদেশ চাইলে তোর্সা, রঙ্গিত থেকে তিনি কিছু জল দিতে পারেন, শেষ পর্যন্ত যার সমাধান হয়নি। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী জলের উপর রাজ্যের অধিকার স্বীকৃত, তাই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি উপেক্ষা করে তিস্তা চুক্তি রূপায়ণ কার্যত সম্ভব নয় কেন্দ্রের পক্ষে।
ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়েও রবিবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজেপি সাংসদ। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস সরকার লাগাতার লস্কর জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে বলেও অভিযোগ করেছেন নিশিকান্ত। তিনি বলেন, ‘লস্কর-ই-তৈবা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। বাংলাদেশের মাটিতে তাদের মদত দিচ্ছে ইউনূস সরকার। এই অবস্থায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষিত করা একান্ত প্রয়োজনীয়।’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার পহেলগামে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় মোট ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং এক জন নেপালি নাগরিক রয়েছেন। এই ঘটনার পর, পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার পাশাপাশি পাক নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে সরকার। একই ভাবে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশে জল বন্ধের দাবি জানালেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে।
Advertisement



