পহেলগামে জঙ্গি হামলার ঘটনায় তাদের কোনও হাত নেই বলে দাবি করল পাকিস্তান। তাঁর দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও সম্পর্ক নেই। পাল্টা তিনি প্রতিবেশী দেশে অস্থিরতার জন্য ভারতকেই দায়ী করেছেন। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ দাবি করেছেন, ‘একটি-দুটি নয়, নাগাল্যান্ড থেকে কাশ্মীর, দক্ষিণে, ছত্তিশগড়, মণিপুর সমস্ত স্থানে ভারতীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চলছে।’ এই হামলাকে ভারতের বিরুদ্ধে ‘বৃহত্তর বিদ্রোহের’ অংশ হিসাবে বর্ণনা করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
পহেলগামের হামলা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে তারা জানিয়েছে, ২৬ জনের মৃত্যুতে তাঁরা উদ্বিগ্ন। শুধু তা- নয়, নিহতদের পরিবারের প্রতি শোকজ্ঞাপন করেছেন পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র শফকত আলি।
Advertisement
পাকিস্তানের এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খোয়াজা বলেন, ‘পহেলগামের হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও যোগসূত্র নেই।’ আসিফের আরও বক্তব্য, ‘এগুলো নিজ দেশে তৈরি, মানুষ তাঁদের অধিকারের জন্য দাবি করছে। সেই কারণেই সেখানে এই ধরনের কার্যকলাপ ঘটছে।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘এতে কোনও সন্দেহ নেই যে আমাদের জাতীয় নীতি নিরীহ মানুষদের লক্ষ্যবস্তু করার অনুমতি দেয় না।’ আসিফ বলেন, ইসলামাবাদ অনেকবার পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য ভারতের জড়িত থাকার প্রমাণ দিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘আমাদের কাছে প্রায় প্রতিদিন প্রমাণ রয়েছে, যা আমরা দিয়েছি – একবার নয়, অনেকবার – যে ভারত, বেলুচিস্তান এবং পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য ভারতের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার পহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করেছে টিআরএফ। টিআরএফের উত্থান ২০১৯ সালে। ওই বছরেই জম্মু ও কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’-র অবলুপ্তি হয়। ঠিক সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝেই পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবার ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে আসে টিআরএফ। সেই সংগঠনেরই পাঁচ-ছ’জন আচমকাই মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগামে হামলা চালায় বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। অনেকেই এই হামলার নেপথ্যে পাকযোগের তত্ত্ব তুলে ধরছেন। যদিও ভারত এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে কারও দিকে আঙুল তোলেনি।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, পহেলগাম হামলার নেপথ্যে রয়েছেন সইফুল্লা খালিদ ওরফে সইফুল্লা কাসুরি। তাঁর নির্দেশেই, পাঁচ-ছয় জন জঙ্গি মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় নির্বিচারে গুলি চালায়।
পহেলগাম হত্যাকাণ্ডে পাক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত মিলেছিল সপ্তাহখানেক আগে পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের বক্তব্যে। এমন দাবি করেছেন অনেকেই। তাঁদের দাবি, আসিম মুনিরের ওই ভাষণেই লুকিয়ে ছিল পহেলগাম হামলার বীজ। কাশ্মীর প্রসঙ্গে পাক সেনাপ্রধান সেদিন বলেন, ‘কাশ্মীর আমাদের জিউগুলার ভেন ছিল, আছে, থাকবে। কাশ্মীরের বীর ভাইরা যে সংগ্রাম চালাচ্ছেন, আমরা তাঁদের ছাড়ব না। কাশ্মীরকে কোনওদিন ভুলবে না পাকিস্তান।’ পাক সেনাপ্রধান দাবি করেন, ‘আমরা ১৩ লক্ষ ফৌজের ভারতীয় সেনাকে ভয় পাই না।’
দ্বিজাতি তত্ত্বও উসকে দিয়েছিলেন পাত সেনাপ্রধান। সেদিন তিনি বলেন, ‘আমরা হিন্দুদের থেকে আলাদা। কোনওদিন আমাদের মধ্যে কোনও মিল ছিল না। আর ছিল না বলেই দুটো আলাদা দেশের প্রয়োজন পড়েছে।’ পাক সেনাপ্রধানের বক্তব্য ছিল, ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা মনে করেছিলেন হিন্দু এবং মুসলমান সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের রীতিনীতি, সংস্কৃতি আলাদা, চিন্তাভাবনা, আশা-আশঙ্কা আলাদা। আর সেটাই দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তি।’
ঘটনাচক্রে পাক সেনাপ্রধানের সেই বক্তব্যের পরই মঙ্গলবারের পহেলগামে হামলার ঘটনা ঘটেছে। মনে করা হচ্ছে, এই হামলার নেপথ্যে যে পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্র রয়েছে যা পাক সেনাপ্রধানের বক্তব্যেই স্পষ্ট।
Advertisement



