নবপ্রজন্মের সঙ্গীত প্রতিভূদের নিয়ে আই.টি.সি. সঙ্গীত রিসার্চ আকাদেমির অনুষ্ঠান আয়োজিত হল বিড়লা সভাঘরে (১লা ও ২রা মার্চ)। বিভাস সাংঘাই (তবলা) ও গৌরব চ্যাটার্জীর (হারমোনিয়ম) সুন্দর সহযোগিতায় দরাজ, বলিষ্ঠ সুকণ্ঠে প্রথমদিনের প্রারম্ভিক শিল্পী কস্তুরী যোশীর আত্মবিশ্বাসপূর্ণ পরিবেশন শ্রী (বিলম্বিত/দ্রুত একতাল) ও বাহার (দ্রুত ত্রিতাল)। গায়নশৈলীতে বোল-বাট-তানকারী পরিবেশন ছিল অনায়াস ও পরিচ্ছন্ন। বংশীবাদক ও শিক্ষক পরমানন্দ রায়ের চিত্তগ্রাহী পরিবেশন বসন্ত (ঝাঁপতাল/ত্রিতাল)। বাদনকৌশলে বরাবরের মতই শিল্পী বোল-বাণী ও স্বরবিন্যাসের মিষ্টত্বে শ্রোতাদের অনুভব করালেন গায়কী অঙ্গের মাধুর্যময় অনুভূতি। তানকারীও ছিল সাবলীল এবং বৈচিত্র্যময়। শেষে অজয় চক্রবর্তীর রচনা মাজ খাম্বাজ ও মধ্যম সে পিলু আধারে ঠুমরিটি লীলায়িত হয়ে ওঠে বংশীবাদনের নৈপুণ্যে।
আরেক উজ্জ্বল প্রতিভা দেবর্ষি ভট্টাচার্যর খোলা গলায় ধীর, আত্মপ্রত্যয়ী ও পরিণত পরিবেশন দরবারী কানাড়া (বিলম্বিত একতাল, মধ্যলয় ত্রিতাল) ও দ্রুত ত্রিতালে তরানা। বড়হত, পরিষ্কার তানকারী, স্বরক্ষেপণ ইত্যাদিতে সুতালিমপ্রাপ্ত দেবর্ষি দেখিয়েছেন পারদর্শিতা এবং তরানাটিও ছিল আকর্ষণীয়। দ্বিতীয়দিনের প্রথম শিল্পী ভবিষ্যতের অতি উজ্জ্বল সম্ভাবনা সড়জ আইয়ার। সুরেলা, গাম্ভীর্যময়, সুমিষ্ট, দরাজ কণ্ঠে বারোয়া (বিলম্বিত একতাল/দ্রুত ত্রিতাল) এবং পরজ-কালেংগ্রা (ত্রিতাল) এক শ্রুতিনন্দন উপস্থাপনা। আগ্রা ঘরানার পরম্পরা অনুযায়ী ‘নোম-তোম’ আলাপ, কণ্ঠের মডিউলেশন, পুকার, স্বর-জমানো, বিলম্বিত ও ত্রিতালে কহন্কৌশল, মীড়যুক্ত বড়হত, গমক বোলতান, তানকারীর পারদর্শিতা লক্ষণীয়। পরজ-কালেংগ্রায় সঠিকভাবে প্রকাশিত দুটি রাগের রূপ। অভিজ্ঞ অশোক মুখার্জীর যথার্থ তবলা সহযোগিতায় তরুণ শৌনক রায়ের সরোদে গাওয়া গেল কেদারের এক সুন্দর রূপ।
Advertisement
গাম্ভীর্যময়, বলিষ্ঠ স্ট্রোকে মধ্যলয় বিলম্বিত ও ত্রিতাল বন্দীশে ছন্দোময় বোলবাণী, বাদনকৌশলে রবাব অঙ্গ, শব্দনিয়ন্ত্রণ ও তানকারীতে মুনসিয়ানা এবং সাবলীলতা প্রশংসনীয়। শেষ শিল্পী একাদেমির গুরু ওমকার দাদরকরের পরিবেশন জয়জয়ন্তী (বিলম্বিত ও দ্রুত ত্রিতাল), সোহিণী (দ্রুত ত্রিতাল) এবং ভৈরবী ভজন। পরিবেশনে বরাবরের মত গুণগত মান বজায় রেখে জয়জয়ন্তীর বড়হতে মীড় ও কহন্যুক্ত আলাপ, বোলবাট, বৈচিত্র্যময় বোলতান ও দাপটের তানকারী ইত্যাদিতে আকর্ষণীয় ছিল পরিবেশন। সোহিনীর দুটি মনোগ্রাহী ত্রিতাল বন্দীশের পর অনুষ্ঠান শেষ হয় ভৈরবী ভজনে। অন্যান্য সহযোগী শিল্পীদের মধ্যে তবলায় অশোক পল, চিরঞ্জিত মুখার্জী, হারমোনিয়ামে জ্যোতির্ময় ব্যানার্জী, সারেঙ্গীতে সরবর হুসেন দেখিয়েছেন পারদর্শিতা।
Advertisement
Advertisement



