• facebook
  • twitter
Monday, 8 December, 2025

খুনের ঘটনায় মা–মেয়েকে সাহায্য করেছিলেন তৃতীয় এক ব্যক্তি

খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ

নিজস্ব চিত্র

মধ্যমগ্রামে পিসিশাশুড়িকে খুন করে খণ্ড করা দেহ ট্রলিতে ভরেছিলেন ফাল্গুনী ঘোষ ও তাঁর মা আরতি ঘোষ। গত মঙ্গলবার কুমারটুলি ঘাটের কাছে সেই ট্রলি গঙ্গায় ফেলতে এসে ধরা পড়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। এই হাড় হিম করা ঘটনায় তৃতীয় এক ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। সেই ব্যক্তিই মঙ্গলবার ভোরে ফাল্গুনী ও আরতির বেরোনোর জন্য রিকশা ভাড়া করতে গিয়েছিলেন। প্রতিবেশীদের অনুমান, ওই ব্যক্তির সঙ্গে ফাল্গুনীর বিবাহ–বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। এবার সেই ‘প্রেমিক’-এর খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

জানা গিয়েছে, রিকশার চালকের কাছ থেকে প্রথম সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির বিষয়ে জানতে পারে পুলিশ। তিনি তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোরে ৪০–৪৫ বছর বয়সি এক ব্যক্তি তাঁর রিকশা ভাড়া করতে এসেছিলেন। আরতিদের বাড়িতে রিকশা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তিনি চলে যান। তিনি এও জানিয়েছিলেন, ভাড়া আরতিরাই দিয়ে দেবেন। ওই ব্যক্তি সাদা জামা ও ট্রাউজার্স পরে ছিলেন বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে রিকশা চালকের বক্তব্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তৃতীয় ব্যক্তিই ট্রলি কিনে এনেছিলেন। এমনকী তিনিই দেহ কাটার কাজেও ফাল্গুনীদের সাহায্য করেছিলেন। রিকশা চালক জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তিকে আগে কখনও এলাকায় দেখেননি তিনি।

Advertisement

জানা গিয়েছে, মধ্যমগ্রামের বীরেশপল্লিতে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন অভিযুক্ত মা ও মেয়ে। সেই বাড়িতে অনেক অচেনা মানুষরা আসতেন। এলাকাবাসীদের সঙ্গে ফাল্গুনী ও আরতির সম্পর্ক একেবারেই ভালো ছিল না। নিত্যদিন ঝামেলা লেগেই থাকত। তাই অভিযুক্ত তৃতীয় ব্যক্তি এলাকার কেউ নয় বলেই ধারণা প্রতিবেশীদের। জানা গিয়েছে, স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে ফাল্গুনীর। তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ক একেবারেই ভালো ছিল না। ফাল্গুনীর স্বামী শুভঙ্কর ঘোষ অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্ত্রী অতিরিক্ত মদ্যপান করতেন।

Advertisement

পাড়ার পুজো উপলক্ষে এক বার এতই মদ খেয়েছিলেন যে, তাঁকে কাঁধে তুলে বাড়ি নিয়ে যেতে হয়েছিল। পাশাপাশি তাঁর জীবনযাত্রাও ছিল খুব উচ্ছৃঙ্খল। শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ফাল্গুনী। তাঁর শ্বশুর সুবল ঘোষের অভিযোগ, সম্পত্তি হাতাতেই পূর্ব পরিকল্পনামাফিক বোন সুমিতা ঘোষকে খুন করেছেন ফাল্গুনী ও তাঁর মা। জানা গিয়েছে, ফাল্গুনীর সোনার প্রতি প্রবল আসক্তি রয়েছে। তিনি নিজের একটি ফ্ল্যাট কিনতে চাইছিলেন। সেই সব শখ পূরণ করতেই তিনি নিজের পিসিশাশুড়িকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিলেন কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

গত মঙ্গলবার সকালে কুমোরটুলি গঙ্গার ঘাটের কাছ থেকে আটক করা হয় অভিযুক্ত ফাল্গুনী এবং আরতিকে। তাঁদের কাছে একটি ট্রলি ব্যাগ ছিল। সেই ব্যাগের ভিতর থেকে ফাল্গুনীর পিসিশাশুড়ি সুমিতার টুকরো করে কাটা দেহ উদ্ধার করা হয়। পরে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জানা যায়, মধ্যমগ্রামের ভাড়াবাড়িতে সুমিতাকে খুন করে দেহ টুকরো করে ট্রলিতে ভরা হয়েছিল। এরপর সেই ট্রলি গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। সেই কারণে বাড়ি থেকে প্রথমে রিকশা ও তারপর ট্যাক্সি ভাড়া করে কুমোরটুলি পৌঁছেছিলেন তাঁরা। তবে দেহ গঙ্গায় ভাসানোর আগেই এলাকাবাসীরা তাঁদের ধরে ফেলেন। এই ঘটনায় এবার এক তৃতীয় ব্যক্তির জড়িত থাকার কথা জানতে পেরেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত মা–মেয়েকে বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে আরতি ও ফাল্গুনী জেল হেফাজতে রয়েছেন। এই ঘটনায় ফাল্গুনীর ‘প্রেমিক’ ছাড়াও আর কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Advertisement