নির্মাণ বিনির্মাণে
সপ্তর্ষি রায়
আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার মাঝেই
বেঁচে থাকে আমার যত আমি
যেমন করে একটি ঢেউ
আর এক ঢেউয়ের হাত ধরে
চেনা আলোর বিন্দুগুলি গড়ে।
Advertisement
শোকের আগুন পুড়িয়ে অন্ধকারে
একসাথে দৌড় পথের উপর সুদীর্ঘ পথ
সমস্ত রাতভোর গ্রীষ্মের নীল হাওয়া
ভাঙা পাথর টুকরোগুলো জোড়া লাগে
মানুষজনের অবেলার ঘুম ভাঙে।
Advertisement
আলিঙ্গনের তাপে বেঁচে থাকার মাঝেই
বেঁচে থাকে আমার যত বিষণ্ণ রাতদিন
দিগন্তহীন রৌদ্র হাওয়ার ঘনিষ্ঠ আকাশ
বুকের ভিতর জাগায় মাছের স্থির চোখ
মহাকাশের দিকে হরধনুর টান প্রবল টংকার।
একতারা এবং
অচেনা দুঃখগান
অনিন্দিতা মিত্র
পৃথিবীর সব ফুলের বাগিচা এসে মেশে তোমার আমার সম্পর্কের নভেলায়। শিলাইদহের কল্পভূমি পেরিয়ে নরম ধানজমির মহাদেশে আঁকিবুঁকি কাটে ঝিমানো রোদের স্রোত। কপোতাক্ষ নদের অমসৃণ ঊরুতে ছেঁড়া ছেঁড়া ঝরা পাপড়ির আশ্চর্য সব কারুকার্য! কুয়াশার জঙ্গল ছাড়িয়ে মেঘেরা উড়ে চলে সীমানাহীন গন্তব্যে। একতারার উদাসী সুরে মানিনীর বেদনযাপনের বিক্ষিপ্ত আলোছায়া, আজন্মের মায়াজাল ভেদ করে প্রেম ফুটে ওঠে অলৌকিক নক্ষত্র হয়ে, দূরের আকাশে জ্বেলে দেয় ছায়াসুখের মৃৎপ্রদীপ। অপ্রস্ফুটিত ইচ্ছেকুঁড়িরা বারবার ফিরে আসে কালের অভিমুখে…
ব্যক্তিগত বিপর্যয়
অর্কপ্রভ ভট্টাচার্য
ব্যক্তিগত বিপর্যয়ে কোথায় এসে দাঁড়াব?
দাঁড়াবার রাস্তায় ভিড় জমেছে
ধাক্কা খেতে খেতে
ব্যক্তিগত মুখের আড়াল প্রয়োজন।
সমষ্টি নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে
ছবি গড়ে উঠছে যদিও
এখানে ওখানে গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়েছে খবর
ব্যক্তিগত বিপর্যয়ে কোথায় এসে দাঁড়াব?
একজন নিস্পৃহ মানুষের গল্প
রূপায়ণ ঘোষ
বাবা আমাদের কখনো কোনো সাহায্য করেননি
রক্তের নদীতে সাঁতরাচ্ছি আমরা
তিনি পাড়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন চুপচাপ
তাঁর গোড়ালিতে গোলাপ-পাপড়ির মতো জন্মদাগ ছিল
সে ছাপ তিনি রেখে গেছেন সারা মরুভূমি জুড়ে…
বাবা কারোর কাছে জুতোর জন্য সুপারিশ করেননি
যাতে আমরা তাঁর
গোলাপ-চিহ্নিত রক্তাক্ত পায়ের ছাপ দেখতে পাই
তিনি ঈশ্বরের কাছে কখনো প্রার্থনা করেননি
সন্তানরা অবলীলায় জিতে যাক—
তিনি ভরাট নদী আর তপ্ত মরুভূমির ধারে দাঁড়িয়ে থেকেছেন
তিনি আমাদের হাত ধরেননি কখনো
গান শোনাননি, গল্প করেননি, চুমু খাননি
আমাদের বাবা, ভালো থাকাকে কঠিন করে দিয়ে গেছেন
বাবা, আমাদের বেঁচে থাকাকে সহজ করে দিয়ে গেছেন…
অন্তহীন পথ
দেবাশিস মণ্ডল
পথ থামে না,
দূরে হারিয়ে যায় ঝাপসা ছায়ায়।
পিছনে পড়ে থাকে
অবিকল মুখ, ভাঙা হাসি,
দৃশ্যহীন এক শহর—
যেখানে আমরা দুজনেই
নিঃসঙ্গ পথিক।
বাঁক
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
যে নদীর বাঁক নেই—
সে নদী নদীই না।
যে জীবন মৃত্যু দেখেছে,
কিন্ত মৃত্যকে বরণ করেনি—
সে-ই তো আসল জীবন!
আলপথে হেঁটে যায় যে বালক
সে আগেই শরীরে কাদা মেখে নেয়।
তারপর শুধু হাঁটা—
যেমন নদী, যেমন জীবন।
সে যেন রোদ হয়ে উঠছে
গীতশ্রী সাহা
সে যেন রোদ হয়ে উঠছে
ছুঁলেই তাতিয়ে দিচ্ছে হাত
হাতের সাথে হাতের সাহচর্য
বাড়িয়ে দিচ্ছে চাপ।
সে যেন আকাশ হয়ে উঠছে
বুকের ওড়নায় ছুটে আসছে মেঘ
লাল মেঘ, নীল মেঘ, সাদা মেঘ, কালো মেঘ,
বাড়িয়ে দিচ্ছে জেদ।
সে যেন বিদ্যুৎ হয়ে উঠছে
আকাশ চিরে টেনে দিচ্ছে সীমা
শিরার ভেতর ছুটছে হাজার ভোল্ট
বাড়িয়ে দিচ্ছে ক্ষোভ।
সে যেন আগুন হয়ে উঠছে
দাবানল হয়ে গ্রাস করছে সব
শক্ত মুঠো উঠছে আকাশ মুখে
বাড়িয়ে দিচ্ছে তাপ।
সে যেন রোদ হয়ে উঠছে…
বনভোজন
কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায়
এসো বোসো, নিজ মাংসে ভোজ হবে
কতদিন আগে যেন জবাই হয়েছি?
আছি ডিপ ফ্রিজে, অম্লে ভেজানো,
মালিকের পছন্দের নানা উপাদানে!
অমৃত জ্ঞানে তবু, সময়ের যানে বিচরণ
না বুঝে পাঁচালী পড়ি, ব্রতের নিদান
মেনে শোক-উৎসব, একমঞ্চে হোক
পোশাকের যত দাগ, সব মুছে নেব!
Advertisement



