• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বাতিঘরগুলির পর্যটন সম্ভাবনা উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা সরকারের

ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ লাইটহাউস অ্যান্ড লাইটশিপস (ডিজিএলএল), পরিবেশ রক্ষা করার পাশাপাশি এই প্রকল্পগুলিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নত করতে বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছে।

ফাইল চিত্র

ভারতে বর্তমানে ২০৪টি বাতিঘর রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সামুদ্রিক ঐতিহ্যকে উন্নত করতে, মেরিটাইম ইন্ডিয়া ভিশন (এমআইভি) ২০৩০ এবং অমৃত কাল ভিশন ২০৪৭-এর অংশ হিসাবে লাইটহাউস পর্যটনকে সক্রিয়ভাবে প্রচার করার। ১৭,৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত উপকূলরেখা-সহ, এই সাইটগুলি বিকাশের মাধ্যমে, সরকার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে প্রস্তুত। আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহ দিতে, ভারতের পর্যটনকে হাতিয়ার করতে চায় সরকার।
প্রকৃতপক্ষে, এটি উপকূলে বসবাসকারী সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন করতে এবং বাতিঘরগুলির উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য একটি কাঠামো তৈরির পরিকল্পনা।

ঐতিহ্যগতভাবে, নাবিকদের জন্য তৈরি এই আইকনিক কাঠামোগুলিকে এখন সরকার পর্যটন গন্তব্য হিসাবে প্রচার করতে ইচ্ছুক। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল, বাতিঘরগুলির ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যগত তাৎপর্য সংরক্ষণ করা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থানীয়দের ক্ষমতায়নের জন্য সম্ভাবনা উন্মুক্ত করা।

Advertisement

লাইটহাউস পর্যটনের মধ্যে রয়েছে লাইটহাউস এবং তাদের আশেপাশের এলাকাগুলিকে পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা। বস্তুত বাতিঘরগুলি মনোরম উপকূলীয় বা দ্বীপের পরিবেশে অবস্থিত। তাই এই কাঠামোগুলি দর্শনার্থীদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এবং বিনোদনের সুযোগ করে দেবে।

Advertisement

পর্যটন গন্তব্য হিসাবে তাদের সম্ভাবনা, কৌশলগত অবস্থান, সাংস্কৃতিক গুরুত্ব এবং অর্থনৈতিক প্রসারকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকার লাইটহাউস পর্যটনকে উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকার দিতে চায়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পর্যটন সুবিধা-সহ ৭৫টি বাতিঘর উৎসর্গ করেন। এগুলি ৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি বাতিঘর জাদুঘর, অ্যাম্ফিথিয়েটার, শিশুদের উদ্যান এবং আরও অনেক আধুনিক সুযোগ-সুবিধা-সহ ঐতিহ্য এবং বিনোদন উভয়েরই কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

শুধুমাত্র ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে, এই ৭৫টি বাতিঘর ১৬ লক্ষ পর্যটককে টেনে এনেছে। যেখানে ২০১৪ সালে পর্যটকদের সংখ্যা ছিল ৪ লক্ষ, সেখানে পর্যটন খাতে বর্তমানে ৪০০%-এরও বেশি বৃদ্ধি হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, চলতি আর্থিক বছর অর্থাৎ ২০২৪-২৫, ইতিমধ্যেই ১০ লক্ষেরও বেশি দর্শককে স্বাগত জানিয়েছে।

২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে ৫ লক্ষেরও বেশি পর্যটক এই বাতিঘরগুলি পরিদর্শন করেছেন, যা মোদীর কল্পনা অনুযায়ী এই আইকনিক সামুদ্রিক কাঠামোগুলিকে পর্যটন হটস্পটে রূপান্তরিত করেছে। এই উন্নয়নের ফলে নিকটবর্তী হোটেল, রেস্তোরাঁ, টুর অপারেটর, পরিবহন পরিষেবা এবং স্থানীয় দোকান ও কারিগরদের ১৫০টি প্রত্যক্ষ ও ৫০০টি পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

লাইটহাউস পর্যটনকে উৎসাহিত করতে সরকার যে-পদক্ষেপ নিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, ইন্ডিয়ান লাইটহাউস ফেস্টিভাল সিরিজ এবং স্টেকহোল্ডার্স মিট। লাইটহাউস পর্যটনকে সাগরমালা কর্মসূচির আওতায় এনে বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করেছে সরকার। এটি ভারতের সামুদ্রিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে চালিত করবে। সমন্বিত উন্নয়ন, পরিকাঠামো বৃদ্ধি, স্থায়িত্ব এবং সম্প্রদায় কল্যাণের এটি এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ লাইটহাউস অ্যান্ড লাইটশিপস (ডিজিএলএল), পরিবেশ রক্ষা করার পাশাপাশি এই প্রকল্পগুলিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নত করতে বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছে। ভারতে লাইটহাউস পর্যটনের সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণরূপে গুরুত্ব দিতে, সরকার বেশ কয়েকটি দূরদর্শী কৌশলের রূপরেখা তৈরি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে উন্নয়ন, উপকূলীয় সার্কিটগুলির সংহতিকরণ, সচেতনতা প্রচার এবং দক্ষতার বিকাশ। এই উদ্যোগগুলি মোদীর আত্মনির্ভর ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

সাগরমালা কর্মসূচির আওতায় বেসরকারি অংশীদারদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে, লাইটহাউস পর্যটন ভারতের ক্রমবর্ধমান ভ্রমণ শিল্পের ভিত্তি হয়ে উঠবে। এই স্থানগুলি দর্শনার্থীদের একটি অনন্য অভিজ্ঞতার সুযোগ দেবে, যা একইসঙ্গে ইতিহাস ও উপকূলরেখার সৌন্দর্যকে তুলে ধরবে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৯ লক্ষেরও বেশি পর্যটক, বাতিঘর পরিদর্শন করেছেন। এটা স্পষ্ট যে আগামী দিনে ভ্রমণের হটস্পট হিসাবে বাতিঘরগুলি বিপুলভাবে সমাদৃত হতে চলেছে।

Advertisement