• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

কারিগরদের জন্য ৩ লক্ষ পর্যন্ত ঋণ, জানুন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনার খুঁটিনাটি

দেশের কোটি কোটি কারিগরদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা চালু করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা কী?

দেশের কোটি কোটি কারিগরদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা চালু করেছে। এটি মিনিস্ট্রি অফ মাইক্রো স্মল অ্যান্ড মিডিয়াল এন্টারপ্রাইজেস–এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই যোজনার আওতায় কারিগরদের জামানত ছাড়াই ঋণ দেওয়া হয়। এছাড়া এই যোজনায় স্কিল ট্রেনিং, আধুনিক টুলস, ডিজিটাল লেনদেনের জন্য ইনসেনটিভ এবং মার্কেট লিঙ্কেজ সাপোর্টের সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। বিশ্বায়নের যুগে এই যোজনার মাধ্যমে কারিগরদের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত করার পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধি করার বিষয়টিতেও জোর দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাঁদের প্রস্তুত সামগ্রী যাতে সহজেই ক্রেতাদের মন জয় করতে পারে, সেদিকেও নজর রাখা হয়।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনার যোগ্যতা

Advertisement

আবেদনকারীকে স্ব-কর্মসংস্থানের ভিত্তিতে অসংগঠিত ক্ষেত্রে ১৮টি নির্দিষ্ট পরিবার-ভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী ব্যবসার (নীচে উল্লিখিত) যে কোনও একটিতে নিযুক্ত একজন কারিগর হতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের তারিখে আবেদনকারীর ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে।

আবেদনকারী বিগত ৫ বছরে স্ব-কর্মসংস্থান বা ব্যবসায়িক উন্নয়নের জন্য অনুরূপ কেন্দ্রীয়/রাজ্য ঋণ-ভিত্তিক প্রকল্পের অধীনে ঋণ (যেমন – প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি, পিএমইজিপি, মুদ্রা) গ্রহণ না করলে, এই প্রকল্পের জন্য বিবেচিত হবেন। তবে মুদ্রা ও স্বনিধির আবেদনকারীরা ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ করার পর প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মার অধীনে ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। ঋণ অনুমোদনের তারিখ থেকে ৫ বছর হিসেব করা হয়। কোনও সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত ব্যক্তি (কেন্দ্রীয়/রাজ্য) এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা (স্বামী বা স্ত্রী এবং তাঁদের অবিবাহিত সন্তান) এই প্রকল্পের জন্য যোগ্য নন। এই প্রকল্পে রেজিস্ট্রেশন এবং সুবিধাগুলি পরিবারের কেবলমাত্র একজন সদস্যই পেতে পারেন।

বর্তমানে মোট ১৮ ধরনের কারিগরদের এই সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে কাঠমিস্ত্রি (ছুতোর), নৌকা প্রস্তুতকারক, কামার, হাতুড়ি এবং টুল কিট মেকার, চর্মকার, কুমোর, মূর্তিকার, রাজমিস্ত্রি, নাপিত, ধোপা, মালাকার, দর্জি, মাছ ধরার জাল প্রস্তুতকারকের মতো বিভিন্ন পেশা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনার সুবিধা

এই যোজনায় কারিগররা দুই ধাপে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। সুদের হার মাত্র ৫ শতাংশ। প্রথম দফায় ১ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। ১৮ মাসের সেই টাকা পরিশোধ করতে হয়। সেই টাকা পরিশোধের পর দ্বিতীয় ধাপের টাকা মিলবে। বাকি দু’লক্ষ টাকা পরবর্তী ৩০ মাসের মধ্যে শোধ করতে হবে। কারিগররা দক্ষতার স্বীকৃতি হিসাবে একটি পিএম বিশ্বকর্মা সার্টিফিকেট পাবেন। এছাড়াও তাঁদের আইডি কার্ড দেওয়া হবে। দক্ষতা যাচাইয়ের পর ১৫০০০ টাকার এককালীন আর্থিক সাহায্য পাবেন কারিগররা। প্রথমে ৫ থেকে ৭ দিনের প্রাথমিক ট্রেনিং দেওয়া হবে আবেদনকারীদের। আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহারের পাশাপাশি ডিজিটাল ও আর্থিক দক্ষতা, ব্র্যান্ডিং, বিপণন, ক্রেডিট সাপোর্ট সহ একাধিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে ভাতা পাবেন তাঁরা। কারিগররা চাইলে ১৫ দিনের অ্যাডভান্সড ট্রেনিংও নিতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনার রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি

যোগ্য প্রার্থীরা পিএম বিশ্বকর্মা রেজিস্ট্রেশন পোর্টালে (pmvishwakarma.gov.in) গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে পারেন। এছাড়া কমন সার্ভিস সেন্টারেও আবেদন করা যেতে পারে। অনলাইনে নাম তোলার জন্য pmvishwakarma.gov.in ওয়েবসাইটে গিয়ে হোম-এ ক্লিক করুন। এরপর হাউ টু রেজিস্টার বিকল্প বেছে নিন। মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন এবং আধার ই-কেওয়াইসি সম্পূর্ণ করুন। রেজিস্ট্রেশন ফ্রমের জন্য অ্যাপ্লাই করুন। পিএম বিশ্বকর্মা ডিজিটাল আইডি এবং সার্টিফিকেট ডাউনলোড করুন। এরপর স্কিমের অধীনে প্রয়োজনীর সুবিধার জন্য আবেদন করুন।

এক্ষেত্রে একটি কথা বলে রাখা ভালো, এই যোজনায় সুবিধাভোগীদের তালিকাভুক্তি মূলত তিন ভাবে যাচাই করা হবে। প্রথমে গ্রাম পঞ্চায়েত বা শহরের স্থানীয় সংস্থার মাধ্যমে আবেদনপত্র যাচাই করা হবে। এরপর ডিস্ট্রিক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির স্তরে বিষয়টি পাঠানো হবে। সবশেষে স্ক্রিনিং কমিটির মাধ্যমে অনুমোদন মিলবে।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনার আবেদনপত্রের মূল্য

রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার জন্য আবেদনকারীর কাছ থেকে কোনও টাকা নেওয়া হয় না। কমন সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন এবং শংসাপত্র বা আইডি কার্ড ইস্যু করার সম্পূর্ণ খরচ সরকার বহন করে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা সংক্রান্ত যে কোনও প্রশ্নের উত্তর জানতে ১৮০০২৬৭৭৭৭৭ নম্বরে যোগাযোগ কিংবা [email protected]–এ মেল করা যেতে পারে।

কী কী নথি লাগবে

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনায় আবেদনের আধার কার্ড, মোবাইল নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য, রেশন কার্ড। যদি আবেদনকারীর রেশন কার্ড না থাকে, তাহলে পরিবারের সমস্ত সদস্যের আধার নম্বর লাগবে। যদি আবেদনকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকে, তাহলে তাঁকে প্রথমে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এক্ষেত্রে কমন সার্ভিস সেন্টারের থেকে যাবতীয় সাহায্য মিলবে।

Advertisement