পূর্ব প্রকাশিতর পর
ছবিটির বাঁ দিকে ঢাকী ও লোহার শিক হতে একটি বালক, ডান দিকে দুইজন সঙ, তাহাদের মধ্যে একজন স্ত্রী-বেশে।
অষ্টম চিত্রে দাসীগণ পরিবৃতা উচ্চবংশের মহিলার গঙ্গাস্নানের দৃশ্য। নবম চিত্রে একটি অধুনা-লুপ্ত নিষ্ঠুর প্রথার দৃশ্য। গ্রন্থকর্ত্রীর মতে, উত্তর-বঙ্গে এই প্রথা ছিল. শিশু যদি মাতৃস্তন্য পান না করিত, তাহা হইলে তাহাকে হইলে তাহাকে ভূতে পাইয়াছে মনে করিয়া শিশুর পিতামাতা একটি ঝুড়িতে রাখিয়া একটি গাছের ডালে টাঙ্গাইয়া দিয়া আসিত, এবং তিন দিন পরে গিয়া এইরূপে পরিত্যক্ত শিশুর খোঁজ করিত। শিশু সাধারণতঃ অনাহারে বা হিংস্র পশুপক্ষীর আক্রমণে মারা যাইত; কিন্তু যদি দৈবযোগে বাঁচিয়া থাকিত তাহা হইলে অপদেবতা ছাড়িয়া গিয়াছে মনে করিয়া শিশুকে ঘরে লইয়া যাওয়া হইত। এই ছবিতে মাতা শিশুকে গাছের ডালে ঝুলাইয়া দিতেছে, পিতা নিকটে বসিয়া আছে—এই দৃশ্য অঙ্কিত আছে।
Advertisement
দশম চিত্র—পল্লীগ্রামের কৃষক-শ্রেণীর দুইজন ব্যক্তি পোঁটলা-পুঁটুলি বাঁধিয়া দূর প্রবাসে যাইবার পূর্বে গ্রামের ব্রাহ্মণকে প্রণাম করিয়া পদধূলি লইতেছে।
Advertisement
একাদশ চিত্র—ইহাতে কলিকাতার রাস্তায় হোলি বা দোল-যাত্রা উপলক্ষে পশ্চিমা বেহারারা যন্ত্রযোগে নাচগান করিতেছে।
দ্বাদশ চিত্রে পল্লীরমণীগণের মজলিসের দৃশ্য। নানা শ্রেণীর পল্লীস্ত্রী পল্লী-জীবনোচিত কার্য্যে ও গল্প-গুজবে নিযুক্ত। এই চিত্রে, ছোটো খাটিয়ার উপরে একটি পশ্চিমা মুসলমান স্ত্রীলোক বসিয়া; একজন চরখায় সূতা গুটাইয়া লইতেছে; এক দিকে এক জন বাটনা বাটিতেছে। দুই একটি মূর্তির ভঙ্গি বেশ সুন্দর হইয়াছে। (বর্তমান প্রবন্ধে মুদ্রিত চিত্র ৪)
ত্রয়োদশ চিত্র— এদেশের ইংরেজদের জীবনের এক দিক। সাহেব সকালবেলায় তাঁহার বিশাল হাতাওয়ালা স্তম্ভমালা-ভূষিত প্রাসাদোপম বাড়িতে বসিয়া সওদা করিতেছেন—ব্বাজারের দুই জন পশ্চিমা দোকানদার ঢাকাই ও শান্তিপুরিয়া মলমল, কাশীর কিংখাব প্রভৃতি উৎকৃষ্ট দেশী বস্ত্র আনিয়াছে, মেম-সাহেব দুই-এক থান কাপড় বাছিয়া লইয়াছেন, সাহেব দর কষাকষি করিয়া দুই তিনটি সোনার মোহর দিয়া দাম দিতেছেন। সাহেবের গড়গড়া ও পিছনে আড়ানিপাখা বা বড়ো হাত-পাখা লইয়া খালি-গায়ে দাঁড়াইয়া বেহারা লক্ষণীয়। (বর্তমান প্রবন্ধে মুদ্রিত চিত্র ৫)
চতুর্দশ চিত্রটিতে বাঙ্গালার (কলিকাতাস্থ) একটি কুটিরের আভ্যন্তর দৃশ্য (বর্তমান প্রবন্ধ মুদ্রিত চিত্র ৬)। বাঁখারির উপর মাটির লেপ দেওয়া দেওয়াল, দেওয়ালের মাথায় একটি গোল পাতার ছাতি। উপরের কাঠের বাতায় একখানি চাদর। দেওয়ালে কাগজের উপরে হাতে আঁকা রামরাজার ছবি আঁটিয়া দেওয়া। তৈজসপত্রের মধ্যে একটি কাঠের সিন্দুক, একটি খাটিয়া ও তৎসংশ্লিষ্ট বিছানা, একটি চরখা, শিকায় টাঙ্গানোহাঁড়ি-কলসি,কতকগুলি ঝোলাঝুলি; একটি পাখা, ও দড়ি দিয়া টাঙ্গানো এক ছড়া কলাও দেখা যাইতেছে। সম্মুখে গৃহস্থ-বধূ-রন্ধন-নিরতা, দুইটি শিশু চাউলের ধামায় হাত দিয়া ক্রীড়ায় ব্যস্ত। চাউল মাপার পালি ও কুনিকা এবং চাউল ঝাড়িবার কূলাও রহিয়াছে। চিত্রটি গরীব শ্রেণীর গৃহস্থের; সাধারণ ঘরের ভিতরের ছবিটি বেশ দরদ দিয়া আঁকা হইয়াছে—সব জিনিসটিতে বেশ একটি শান্তি শৃঙ্খলা ও আনন্দের ভাব যেন ফুটিয়া উঠিয়াছে।
পঞ্চদশ হইতে অষ্টাদশ, এই চারিখানি ছবি সে-যুগের প্রধান আমোদ, বাই-নাচের ছবি। এগুলির মধ্যে দুইখানি পুনরমুদ্রিত হইল।
(ক্রমশ)
Advertisement



