• facebook
  • twitter
Wednesday, 17 December, 2025

স্বাভাবিক সম্পর্কেই উন্নতি

পূর্ব লাদাখ সহ দেশের বিভিন্ন সীমান্তে পরম্পরা মেনে এবারও দেওয়ালিতে মিষ্টি বিনিময় হয়েছে ভারত ও চিনা বাহিনীর মধ্যে।

চিত্র: এএনআই।

পূর্ব লাদাখ সহ দেশের বিভিন্ন সীমান্তে পরম্পরা মেনে এবারও দেওয়ালিতে মিষ্টি বিনিময় হয়েছে ভারত ও চিনা বাহিনীর মধ্যে। লাদাখের ডেমকক ও ডেমসাংয়ে সংঘাত কাটিয়ে দু’দেশের সেনা প্রত্যাহারের পরপরই দেওয়ালিতে এই বার্তা নিশ্চিতভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ। মিষ্টি বিনিময় হয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা পাঁচটি বর্ডার পার্সোলেন মিটিং (বিপিএম) পয়েন্টে। এগুলি হল অরুণাচল প্রদেশের বাম লা ও ওয়াচা (কিবিথু), লাদাখের চুশুল-মোলদো ও দৌলত বেগ ওল্ডি এবং সিকিমের নাথুলা। এছাড়া মিষ্টি বিনিময় হয়েছে পূর্ব লাদাখের কোঙ্গ লা, কেকে পাস ও হট স্প্রিংয়েও।

রাশিয়ার কাজান শহরে ষোড়শতম ‘ব্রিকস’ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত হবার ঠিক আগের দিন ভারতের বিদেশ সচিব জানিয়ে দিলেন পূর্ব লাদাখে চিনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সমস্যা নিয়ে চার বছরের বেশি সময় ধরে চলা অচলাবস্থা সমাধানে দু’দেশের মধ্যে চুক্তি হয়ে গেছে। এই চুক্তির ফলে দু’দেশের সেনারা আগের মতোই গালওয়ান উপত্যকা, প্যাঙগঙ লেক, হট-স্প্রিং, গোগরা, ডেপসঙ ও ডেমলক, এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর টহল দিতে পারবে। তবে চুক্তিতে ঠিক কী কী আছে তা খোলসা করেননি বিদেশ সচিব। এমন কী এতবড় একটা ইতিবাচক ঘটনা নিয়ে বিদেশমন্ত্রী কোনও উচ্চবাচ্য করেননি।

Advertisement

তবে ভারতের পক্ষ থেকে এমন একটি স্বস্তির ও খুশির খবর জানানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিনের বিদেশ মন্ত্রকও চুক্তিটির কথা স্বীকার করেছে। পূর্ব লাদাখের এই অংশে চিনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সমস্যা বহুকালের। কখনো দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে, কখনো বা তা শিথিল হয়ে পড়ে। কিছু কাল আপাত শান্ত থাকার পর ২০২০ সালে গালওয়ানে দু’দেশের সেনারা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষও হয়। তাতে দু’পক্ষের বহু সেনা নিহত হন। তারপর থেকে সম্পর্কের তিক্ততা চরমে ওঠে। দফায় দফায় সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছিল। মোদীর রুশ সফর ও ব্রিকস সম্মেলনের মাঝে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগেই জান গেল সমস্যা মিটে গেছে।

Advertisement

এর থেকে আনন্দদায়ক খবর আর কিছু হতে পারে না। উন্নয়নশীল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দু’টি দেশ তথা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং হতে যাওয়া তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির সঙ্গে সীমান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে যদি চরম অবিশ্বাস, অসহযোগিতা এমনকি শত্রুতার সম্পর্ক তৈরি হয় সেটা দু’দেশের পক্ষেই ক্ষতিকারক। দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা সহজ হলে, কূটনৈতিক সম্পর্ক মধুর হলে দু’দেশের অগ্রগতির পথও মসৃণ হবে। বিশ্বে নিজের যোগ্য জায়গা করে নেবার যে প্রত্যাশা ভারতের, তাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে চিনের সঙ্গে শত্রুতার সম্পর্ক রাখা চলে না।

দুর্ভাগ্যের হলেও এটা সত্য যে মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। কট্টর দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদের ঘেরাটোপে মোদী যে সরকার চালাচ্ছেন সেটা মতাদর্শগতভাবে ভয়ঙ্কর কমিউনিস্ট-বিরোধী। সেই অবস্থান থেকেই ক্ষমতায় এসে চিনের সঙ্গে সম্পর্ককে জটিল করা হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে ভারতকে উন্নত করতে হলে চিনকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। চিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্কই ভারতের কাম্য।

Advertisement