• facebook
  • twitter
Saturday, 19 July, 2025

৩৭ ঘণ্টা উড়ে ইরানের তিন পরমাণু কেন্দ্রে হামলা মার্কিন বোমারু বিমানের

মিসৌরি থেকে যাত্রা শুরু করে টানা ৩৭ ঘণ্টা ধরে উড়ে গিয়ে ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালায় আমেরিকার বি-২ স্পিরিট বোমারু বিমান।

তেহরান– ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষে হস্তক্ষেপ করল আমেরিকা। ভারতীয় সময় রবিবার ভোরে আকাশপথে ইরানে হামলা চালাল মার্কিন সেনা। সামাজিক মাধ্যমে এই হামলার বিষয়ে জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকা ইরানের তিনটে নিউক্লিয়ার সাইট বোম মেরে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।’ ইরানের নাতানজ, ইসফাহান এবং ফোরদো নিউক্লিয়ার কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ফোরদো।

হোয়াইট হাউস থেকে মাত্র তিন মিনিটের এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান, যাকে পশ্চিম এশিয়ার দাদা বলা যায়, তারা এখনই শান্তি স্থাপনের ঘোষণা করুক। যদি তারা না করে, ভবিষ্যতের হামলা আরও ভয়াবহ হবে এবং তা আমাদের পক্ষে অনেক সহজ হবে। মনে রাখবেন, আরও অনেক লক্ষ্যবস্তু বাকি আছে। আজ, রাতের লক্ষ্য ছিল সবচেয়ে কঠিন এবং সম্ভবত সবচেয়ে প্রাণঘাতী।’

মিসৌরি থেকে যাত্রা শুরু করে টানা ৩৭ ঘণ্টা ধরে উড়ে গিয়ে ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালায় আমেরিকার বি-২ স্পিরিট বোমারু বিমান। মাঝ-আকাশেই ভরে নেয় জ্বালানি। এই অভিযানে ব্যবহার করা হয় ‘বাঙ্কার বাস্টার’ নামের বিশেষ ধরনের শক্তিশালী বোমা, যা ভূগর্ভস্থ ঘাঁটিতে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটায়। ‘জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ (এমওপি) নামেও পরিচিত এই বোমা।

ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, ফোরদোতে ছ’টি ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ফেলা হয়েছে। শুধু ‘বাঙ্কার বাস্টার’ই নয়, আমেরিকার নৌবাহিনীও টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানের দু’টি পরমাণুকেন্দ্র নাতানজ এবং ইসফাহানে হামলা চালায়।

আমেরিকার নর্থরোপ গ্রুমম্যানের তৈরি বি-২ স্পিরিট স্টিলথ বোমারু বিমান। এটির ফ্লাইং উইং ডিজাইন এবং রাডার ফাঁকি দেওয়ার প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য পরিচিত। আকাশে বি-২ স্পিরিট একবার মাত্র জ্বালানি ভরে ১০ হাজার নটিক্যাল মাইল উড়তে পারে। সমতলে এটি প্রায় ১৯ হাজার কিলোমিটারের সমান। ঘণ্টায় ১০০০ কিমি গতিতে, দূরপাল্লার ভারী বোমারু বিমান কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিশ্বের যে কোনও জায়গায় পৌঁছতে পারে।

সামাজিক মাধ্যম ট্রুথে ট্রাম্প এই হামলার বিষয়ে লিখেছেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে অত্যন্ত সফল ভাবে আক্রমণ চালিয়েছি। যার মধ্যে রয়েছে ফোরডো, নাতানজ এবং ইসফাহান। ইরানের ফোরডোতে বোমার একটি পূর্ণ পেলোড নিক্ষেপ করা হয়েছে। অন্য কোনও দেশের সেনাবাহিনী এখনও পর্যন্ত এই ধরনের অভিযান চালাতে পারেনি।’ মার্কিন সেনাকে তাঁদের এই অভূতপূর্ব অভিযান ও সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

প্রসঙ্গত, ১৩ জুন ইরানের পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইজরায়েল। মোট ন’জন পরমাণু বিজ্ঞানী প্রাণ হারান সেই হামলায়। সামরিক কর্তাদেরও প্রাণ যায়। পাল্টা ইজরায়েলে হামলা শুরু করে ইরান। গত বৃহস্পতিবার, হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালানো হবে কী না সেই বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু দুই সপ্তাহ তো দূর, ঘোষণার দু’দিন কাটতে না কাটতেই সরাসরি ইরানে ঢুকে আক্রমণ শানাল আমেরিকা।

মার্কিন হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ইরান। তারা জানিয়েছে, তাদের পরমাণুকেন্দ্রগুলি থেকে কোনও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের খবর পাওয়া যায়নি। ফলে ওই এলাকার মানুষ সুরক্ষিত। ইরানের অ্যাটমিক এনার্জি অর্গানাইজেশন একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘শত্রুদের সব ষড়যন্ত্রের মাঝেও আমরা ইরানি জাতিকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, হাজার হাজার বিপ্লবী ও উৎসাহী বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞের প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা এই কর্মসূচীর অগ্রগতিকে থামানো যাবে না। আমাদের পরমাণু কর্মসূচি অনেক শহিদের রক্তে গড়া, তা এগিয়ে যাবে।’