সোমবার হাসিনাকে ফাঁসির সাজা দিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের আদেশে অসন্তুষ্ট রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সংগঠন। বাংলাদেশের আদালতের রায়কে ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ বলে ব্যাখ্যা করেও হাসিনাকে দেওয়া ফাঁসির সাজায় আপত্তি জানিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সংগঠন।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল রায় ঘোষণা করার পরেই সোমবার রাতে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সংগঠনের মুখপাত্র রবিনা শামদাসানি। তিনি লিখেছেন, ‘এই রায় বাংলাদেশে গত বছরের বিক্ষোভের সময়ে দমন পীড়নের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।’
Advertisement
বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতি নিয়ে একটি তথ্যানুসন্ধান রিপোর্ট তৈরি করেছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সংগঠন। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক মাপকাঠি অনুসারে জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে বলা হয়েছিল।
Advertisement
অভিযুক্ত হাসিনার অনুপস্থিতিতে বিচার প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে এবং মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে তা মনে করিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সংগঠনের মুখপাত্র রবিনা শামদাসানি। আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগ এবং ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মাপকাঠি যাতে যথাযথ ভাবে পূরণ করা হয়, তা নিয়ে সরব হয়েছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সংগঠন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মুখপাত্র লিখেছেন, ‘মৃত্যুদণ্ডের রায়ের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা সব পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করি।’
রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীও এই রায়ের সমালোচনা করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ বিচারপ্রক্রিয়া ‘সুষ্ঠু এবং ন্যায়সঙ্গত’ হয়নি বলে জানিয়েছে। গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। সাধারণ মানুষের উপর অমানবিক দমন-পীড়ন চালানো হয়েছিল।
দমন-পীড়নে শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহি পাওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছিল অ্যামেনেস্টি। তবে মৃত্যদণ্ডের আদেশে মানবাধিকার আরও বেশি লঙ্ঘিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই আন্তর্জাতিক সংস্থা। ব্রিটেনের ওই সংগঠনের বক্তব্য, ‘অভিযুক্তদের অনুপস্থিতিতে নজিরবিহীন দ্রুততার সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়া এগিয়েছে। ফলে এই মামলার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠে এসেছে।’
বেলজিয়াম মানবাধিকার সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ’-এর মত হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া বিচারপ্রক্রিয়া সমালোচনামুক্ত নয়। অভিযুক্তদের অনুপস্থিতিতে বিচার প্রক্রিয়া চলেছে। এই ধরনের বিচার প্রক্রিয়ায় বিতর্ক থেকেই যায় বলে মনে করছে ওই সংস্থা। হাসিনার মামলায় দ্রুততার সঙ্গে শুনানি হয়েছে। বিবাদী পক্ষের সুযোগ-সুবিধা এবং সুষ্ঠভাবে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে মনে করছে তারা।
গত বছর বাংলাদেশে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে একটি ছাত্র সংগঠন এই আন্দোলন পরিচালনার পুরোভাগে ছিল। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করাই ছিল আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। এই আন্দোলন ‘জুলাই বিপ্লব’ বা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নামে পরিচিত হয়। এই আন্দোলনের জেরেই হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন।
তারপর থেকেই ভারতের আশ্রয়েই রয়েছেন মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা। সেই সময় আন্দোলনের উপর দমন-পীড়ন ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে হাসিনার উপর। সোমবার সহাসিনার বিরুদ্ধে ৪৫৩ পাতার রায় দেয় ট্রাইবুনাল। উস্কানি, হত্যার নির্দেশ এবং দমনপীড়ন আটকানোর ক্ষেত্রে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার অভিযোগে হাসিনাকে ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের আদালত।
Advertisement



