গাজায় ইজরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে সরাসরি ‘গণহত্যা’র অভিযোগ আনল রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশন। সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কমিশন জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনে গণহত্যার জন্য নির্দিষ্ট পাঁচটি ধাপের মধ্যে অন্তত চারটি ধাপ পূর্ণ করেছে ইজরায়েলি বাহিনী।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ কমিশনের দাবি, ২০২৩ সালে হামাসের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ইজরায়েলি সেনারা যে অভিযান চালিয়েছে, তাতে পালেস্তিনীয় নাগরিকদের হত্যা, গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন, গোটা জনগোষ্ঠী ধ্বংসের মতো পরিস্থিতি তৈরি করা, জন্ম প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া— এই চারটি ধাপ স্পষ্টভাবে কার্যকর হয়েছে। কমিশনের পর্যবেক্ষণ, ইজরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের প্রকাশ্য বক্তব্য এবং টানা আক্রমণের ধরনে গণহত্যার উদ্দেশ্য পরিষ্কার।
Advertisement
কমিশনের চেয়ারপার্সন নাভি পিল্লাই জানিয়েছেন, ‘গাজায় ইজরায়েল যে কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তা গণহত্যা। আমাদের তদন্তে স্পষ্ট হয়েছে, ইজরায়েলের অভিপ্রায় পালেস্তিনীয়দের ধ্বংস করা।’ কমিশনের সদস্যরা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সব রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা রয়েছে গণহত্যা ঠেকানো এবং দায়ীদের শাস্তি দেওয়ার।
Advertisement
অন্যদিকে, ইজরায়েল রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশনের এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। ইজরায়েলের বিদেশ মন্ত্রক এই রিপোর্টকে ‘ভিত্তিহীন, বিকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে খারিজ করে দিয়েছে। তেল আভিভের দাবি, বাস্তব পরিস্থিতির প্রতিফলন এই রিপোর্টে নেই।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় শুরু হওয়া যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। এতদিন ধরে আন্তর্জাতিক মহল থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও রাষ্ট্রসঙ্ঘের তদন্ত কমিশনের সরাসরি ‘গণহত্যা’র অভিযোগ নতুন করে আন্তর্জাতিক বিতর্ক উসকে দিল।
এখন নজর বিশ্বশক্তিগুলির প্রতিক্রিয়ার দিকে। বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব দেশগুলি এই রিপোর্টকে কীভাবে গ্রহণ করে, সেটাই দেখার।
উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহজুড়ে লাগাতার বিমান হামলার পর অবশেষে গাজা নগরীতে স্থল অভিযানের মূল পর্যায়ে প্রবেশ করেছে ইজরায়েলি সেনারা। মঙ্গলবার ভোর থেকে শহরের আকাশজুড়ে ধোঁয়া, আগুন আর বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছে পুরো এলাকা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাতভর প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ হয়েছে, যা চলমান যুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছেন স্থানীয়রা।
ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাৎজ এক্সে লিখেছেন, ‘গাজা জ্বলছে।’ তাঁর দাবি, ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) একযোগে আকাশ, সমুদ্র ও স্থল থেকে হামলা চালাচ্ছে। সেনারা গাজা নগরীর গভীরে প্রবেশ করেছে এবং কেন্দ্রস্থলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে আরও সেনা মোতায়েনের কথা জানানো হয়েছে। আইডিএফ-এর ধারণা, শহরে এখনও প্রায় ৩ হাজার হামাস যোদ্ধা সক্রিয় রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে ইজরায়েলের হামলায় অন্তত ৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশিরভাগই গাজা নগরীর বাসিন্দা। এ ছাড়া বহু আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তবে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালগুলো এখন কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছে।
Advertisement



