ফের ট্রাম্পের দাবি, ভারত ও পাকিস্তানের শান্তি স্থাপনে ভূমিকা ছিল আমেরিকার। দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। গত ১০ মে এই দাবি করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার ফের একই দাবি। এই নিয়ে সপ্তমবার শান্তি স্থাপনের দাবি করলেন তিনি। তিনি বললেন, ‘দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এত রাগারাগি ঠিক নয়। আমরাই তো ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি আনলাম। এটা আমেরিকার বড় জয়।’ যদিও ভারত প্রথম থেকেই ট্রাম্পের সেই দাবি নস্যাৎ করে সাফ জানিয়ে দেয়, অপরারেশনে সিঁদুরে বিপর্যস্ত হয়ে পাকিস্তানই হামলা থামানোর আর্জি জানিয়েছিল। তারপর সংঘর্ষ বিরতির পথে হাঁটে দিল্লি।
বর্তমানে সৌদি সফরে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন, টেসলা প্রধান এলন মাস্ক ও মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও’র উপস্থিতিতে ফের একবার ‘সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ’ থামিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিজের জয়গান করেন। এদিন ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, “এই যুদ্ধ থামাতে আমাদের উপরাষ্ট্রপতি জেডি ভ্যান্স ও বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছেন। আমার মনে হয় তারা (ভারত-পাকিস্তান) শত্রুতা ছেড়ে কাছাকাছি আসছে।” এরপর মার্কো রুবিওকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “এই দু’জনকে একসঙ্গে কোনও ভালো জায়গায় সুন্দর ডিনারে পাঠালে বিষয়টা ভালো হয়। আপনি কী বলেন?” কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকা ‘বন্ধু’ হলেও তাদের এই হস্তক্ষেপ ভারত মেনে নেবে না।
Advertisement
প্রসঙ্গত ২২ এপ্রিল পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের জেরে ৬ মে মাঝরাতে জঙ্গিদের ‘আঁতুড়ঘর’ পাকিস্তানে প্রত্যাঘাত করে ভারতীয় সেনা। পাকিস্তান পালটা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ভারতের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তাদের প্রতিটি ড্রোন হামলা প্রতিহত করে। ভারতের মারে কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে যায় পাক সেনাবাহিনী। এরপরই আক্রমণ থামানোর আর্জি জানায় শাহবাজ সরকারের সেনা কর্তারা। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিতে সাড়া দেয় দিল্লি। ১০ মে, শনিবার সম্মতি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করা হয়।
Advertisement
কিন্তু এই যুদ্ধ বিরতির জন্য সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি নিজের সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে লেখেন, “আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘ কথা বলার পর ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতিতে যেতে রাজি হয়েছে। পরমাণু শক্তিধর দুই দেশকে চাপ দিয়ে সংঘর্ষবিরতি করেছি। যুদ্ধ না থামালে বাণিজ্যেও না, হঁশিয়ারি দিয়েছিলাম। তাতেই কাজ হয়েছে।”
শুক্রবার ফের সেই ভাঙা রেকর্ড বাজান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি দাবি করেন, “আমার সরকারই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি করিয়েছে। যা হয়েছে তার জন্য আমরা খুব খুশি। ভারত আর পাকিস্তান একে অপরের প্রতিবেশী। দু’জনের মধ্যে এত রাগারাগি ঠিক নয়। আপনি যদি দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ দেখেন, আপনারও তাই মনে হবে। এটা আমেরিকার বড় জয়।”
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে আমেরিকান পণ্যের উপর সমস্ত শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। তবে আপাতদৃষ্টিতে সাফল্য সত্ত্বেও বাণিজ্য চুক্তিকে আনুষ্ঠানিক করার ক্ষেত্রে তিনি কোনও তাড়াহুড়ো করতে চান না। তবে ভারত সত্যি সত্যি এই প্রস্তাব দিয়েছে কি না, তা নিয়ে দিল্লি স্পষ্ট ভাবে কিছু বলেনি।
তবে এই নিয়ে মুখ খুলেছেন এস জয়শংকর। ট্রাম্পের ‘শূন্য শুল্ক’ দাবি নিয়ে বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর বলেছেন, ‘ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা চলছে। চলমান এই আলোচনা জটিল। এই আলোচনা চূড়ান্ত হতে এখনও অনেক দেরি। সবকিছু ঠিকঠাক না হওয়া পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্তই নেওয়া হয় না। যে কোনও বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকেই লাভবান হতে হবে। যতক্ষণ না তা করা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে যে কোনও বক্তব্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়।’
প্রসঙ্গত আগে ট্রাম্প ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ভারতে ব্যবসা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায় তাদের শুল্কের জন্যে। তবে আপনি কি জানেন যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তাদের শুল্কের ১০০% কমাতে ইচ্ছুক?’ তবে এরপর তাঁকে চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘চুক্তি শীঘ্রই হবে। আমার কোনও তাড়াহুড়ো নেই। দেখুন, সবাই আমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে চায়। তবে সবার সঙ্গে চুক্তি করার পরিকল্পনা করছি না।’
Advertisement



