গাজায় গণহত্যা রুখতে অবিলম্বে যাবতীয় পদক্ষেপ করতে হবে ইজ়রায়েল সরকারকে, জানাল আন্তর্জাতিক আদালত 

Written by SNS January 27, 2024 7:04 pm

গাজা, ২৭ জানুয়ারি – গাজ়া ভূখণ্ডে গত কয়েক মাস ধরে লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে আসছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। যে ধরণের সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে, তা গণহত্যার সমান— এই মর্মে দ্য হেগ-এর আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তারা বলেছিল, অবিলম্বে যেন গাজ়া ভূখণ্ডে সংঘর্ষ-বিরতির নির্দেশ দেয় আন্তর্জাতিক আদালত। রাষ্ট্রপুঞ্জের সর্বোচ্চ এই আদালতের ১৫ জন বিচারপতি তাঁদের অন্তর্বর্তী রায়ে জানিয়েছেন, গণহত্যা রুখতে অবিলম্বে যাবতীয় পদক্ষেপ করতে হবে ইজ়রায়েল সরকারকে। গণহত্যায় ইন্ধনের কোনও ঘটনা ঘটলে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। 

গাজ়ায় বর্তমানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি। গাজ়ার সাধারণ মানুষদের প্রয়োজন মানবিক সাহায্য ও ত্রাণ । এর পাশাপাশি, গণহত্যার কোনও প্রমাণ পাওয়া গেলে তা সংরক্ষণ করে ইজ়রায়েলকে এক মাসের মধ্যে আদালতকে রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে, তারা নির্দেশ মেনেছে। কিন্তু আপাতত গাজ়া ভূখণ্ডে সামরিক অভিযান বন্ধ করা বা সংঘর্ষ-বিরতির কোনও নির্দেশ দেননি বিচারপতিরা। এই রায় নিয়ে তাই তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা দুনিয়ায়। তাই গণহত্যা আটকানোর কথা বললেও সংঘর্ষ-বিরতি বা অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের কথা শোনা গেল না আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারপতিদের মুখে।

দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার যদিও এই রায়কে তাদেরই নৈতিক এবং কূটনৈতিক জয় বলে আখ্যা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, গাজ়ায় যে ইজ়রায়েলি বাহিনী গণহত্যা চালাচ্ছে, এদিনের রায়ে তা কার্যত মেনে নিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত। এই রায় আসলে ‘মানবিকতা এবং আন্তর্জাতিক আইনের জয়’ বলে মনে করছেন প্যালেস্টাইনের বিদেশমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি। আইসিজে-র রায় যাতে ইজ়রায়েল মেনে চলে, সেই পরামর্শ দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও।

আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অবশ্য কোনও সার্বভৌম দেশের উপরেই বাধ্যতামূলক নয় । এ ক্ষেত্রে ইজ়রায়েল সরকারও এই রায় কতটা মেনে চলবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এর আগে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ সামরিক অভিযান বন্ধের যে নির্দেশ আন্তর্জাতিক আদালত দিয়েছিল, তা-ও মানেনি পুতিন সরকার। এখনও অব্যাহত ইউক্রেন-রাশিয়া সামরিক যুদ্ধ।

ইজ়রায়েল সরকারও খোলাখুলি আজ দাবি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে কার্যত পরাজয় হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার। গণহত্যার অভিযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করে এসেছে ইজ়রায়েল। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক আদালতের এই রায়ের পরেও জানিয়ে দিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি নিকেশ না করা পর্যন্ত গাজ়া ভূখণ্ড-সহ প্যালেস্টাইনের বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের বাহিনী সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ইজরায়েল-হামাস সংঘাতের ইস্যু আন্তর্জাতিক আদালতের নিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। গত তিন মাসে প্যালেস্টাইনে ২৬০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগ জানিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করার আর্জি জানিয়ে আদালতে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আবেদনে বলা হয়েছে, হামাস ইজরায়েলের অন্তত ১২০০ নাগরিককে হত্যা করেছে, ২৪০ জনকে পণবন্দি করেছে। তারপরই শুরু হয় যুদ্ধ। একদিকে গাজায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন অন্যত্র। প্যালেস্টাইনের অভিযোগ তাদের দেশের হাসপাতালগুলি পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছে ইজরায়েল, যাতে কোনওভাবেই আহতদের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না।

আদালত নির্দেশ দিয়েছে, কোনওভাবেই যাতে গণহত্যা না হয়, তেমন নির্দেশ দিতে হবে সেনাবাহিনীকে। এক মাসের মধ্যে কী কী পদক্ষেপ করা হল, তা জানাতে হবে আদালতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা আশা করছে যে আদালতের নির্দেশ অমান্য করতে না ইজরায়েল।