বুধবার রাতে বাংলাদেশের সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড। যার জেরে ধ্বংস হয়েছে হাসিনার আমলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন শীর্ষ স্থানীয় এক বিএনপি নেতারা। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ‘সচিবালয়ের আগুন পরিকল্পিত’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি রাজধানীর ডিআরইউতে এক আলোচনা সভায় এই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। সেখানে তিনি বলেন,‘সরকার শেখ হাসিনা আমলের নথি চাওয়ার পরই তা গায়েব করতে দেয়া হয়েছে আগুন। নিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় তদন্তের দাবি জানাই।’
রিজভী বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, গুম, খুন ও ক্রসফায়ার– একের পর এক অপকর্ম যারা করছেন, তাকে সমর্থন দিচ্ছে ভারত। এদিন রিজভী আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (সাবেক) মৃত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের চেয়েও ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন। সব জেনেশুনেই শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। গণমাধ্যম দিয়ে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা। আমরা শুনছি একটা রাজকীয় দল করার চেষ্টা চলছে। কারা কোন রাজনৈতিক দল করবেন, এটা যদি গোয়েন্দারা ঠিক করে দেন, তাহলে হাসিনার সঙ্গে পার্থক্য কী থাকল। এসব কিন্তু দেশের মানুষ মেনে নেবে না। মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন, এরশাদ ও হাসিনার মতো একই সংস্কৃতির যদি পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে কী পরিবর্তন এলো। জাতীয় নিরাপত্তার সংজ্ঞা কী হতে পারে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট আর সাইবার সুরক্ষা আইনের মধ্যে আমি কোনো পার্থক্য দেখি না। সাইবার সুরক্ষা-২০২৪ যদি এদের হাতে থাকে, তা হলে বাকস্বাধীনতা আবারও রুদ্ধ হবে। সংস্কারের যে কী রূপ হবে, কোন দিকে যাবে তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।’
উল্লেখ্য, বুধবার রাতে ১টা ৫০ নাগাদ এই আগুন লাগে। ১টা ৫০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকল বাহিনী। আগুন লাগে ছয় তলায়, পরে তা সাত ও আটতলায় ছড়িয়ে পড়ে। দমকলের ১৯টি ইঞ্জিনের চেষ্টার কয়েক ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে। আগুন নেভাতে গিয়ে এক দমকলকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই থেকে তিনজন।
বিষয়টি নিয়ে সচিবালয়ের কর্মীরা প্রশ্ন তুলে বলছেন, সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জায়গায় কীভাবে আগুন লাগল? কেউ কেউ আগুন লাগার ঘটনাকে ‘নাশকতা’ বলে উল্লেখ করছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সদস্যসংখ্যা ৫ থেকে ১১ জন হতে পারে। আগুনের ঘটনায় নাশকতা থাকতে পারে কি না, তা তদন্তের পর তা বলা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আগুন লাগার পরপরই সচিবালয়ের সব কটি ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালে কর্মীরা কাজে আসতে শুরু করেন। পুলিশ কাউকেই সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দিচ্ছিল না। এর ফলে সচিবালয়ের বাইরে ভিড় জমতে থাকে। এদিন সকাল সোয়া ৯টার দিকে সচিবালয়ের ৫ নম্বর ফটক খুলে দেওয়া হয়। ফটক খুলে দিলে বাইরে অপেক্ষারত আধিকারিক-কর্মচারীরা সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে যান।
এদিকে আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে ট্রাকের চাপায় দমকল বাহিনীর এক কর্মী গুরুতর আহত হন। তাঁর নাম সোহানুজ্জামান নয়ন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এদিন সকাল পৌনে ৭টা নাগাদ ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামাল এই তথ্য জানান।
যদিও আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। এ ছাড়া আগুন লাগার কারণ সম্পর্কেও কিছু বলেনি দমকল। সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রক; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রক; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক; অর্থ মন্ত্রক; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রকের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে।