সুন্দরবন ফের বাঁচালাে বাংলাদেশকে

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ একইভাবে সুন্দরবনে বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল।

Written by Basudeb Dhar Dhaka | November 11, 2019 3:54 pm

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল (Photo: IANS/PIB)

প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার ক্ষত কাটতে না কাটতেই আবারও ঝড় ‘বুলবুল’। বরাবরের মতাে এবারও উপকুলীয় এলাকার মানুষ ও সম্পদ রক্ষা করতে বুক চিতিয়ে লড়াই করল সুন্দরবন। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ শেষ পর্যন্ত বাধা পেল সুন্দরবনে। এবারও অপরাজেয় সুন্দরবন।

প্রথমে শনিবার বিকেলে ভারতীয় অংশে সুন্দরবনের সাগরদ্বীপে বুলবুল আঘাত হানে। এরপর রাত সাড়ে দশটার দিকে বাংলাদেশের সুন্দরবনের খুলনা অংশে শরণখােলায় দুবলার চরে ঢুকে পড়ে। দু’দেশের সুন্দরবনের গাছপালায় বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়া বুলবুলের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলােমিটার কমে যায়।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ একইভাবে সুন্দরবনে বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ‘বুলবুল’ যেন বার্তা দিয়ে গেল, সুন্দরবন বাঁচাও।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জেলাগুলিতে শুক্রবার বেলা ১২টার পর থেকেইবৃষ্টিপাত শুরু হয়। শনিবার বিকেলের পর থেকেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সুন্দরবনের দুলার চরে আঘাত হানার পর থেকেই দমকা হওয়ার সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’কে রুখে দিতে সরকারের নানা তোড়জোড়, সর্বাত্মক প্রস্তুতি ছিল। নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল সুন্দরবন উপকুলের ৫ লক্ষাধিক মানুষকে। প্রস্তুত ছিল ১০টি যুদ্ধজাহাজ। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মােকাবিলা, উদ্ধার তৎপরতা ও জরুরি ত্রাণ বিতরণের জন্য প্রস্তুত ছিল সেনাবাহিনী।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মােহাম্মদ এনামুর রহমান বলেছেন, সুন্দরবনকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়ােজন। সুন্দরবন বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করছে। সুন্দরবনের প্রতি কেউ যেন অযত্ন অবহেলা করতে না পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে বলব। আমরা চাই সুন্দরবনের যেন আরও যত্ন নেওয়া হয়, নতুন নতুন গাছ লাগিয়ে বনকে শক্তিশালী করা হয়। আজ সকালে সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

এনামুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে ২১ লক্ষ ৬ হাজার ৯১৮ জন মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হয়। বুলবুল মােকাবিলায় দেশের ১৪টি জেলায় আগেই পাঁচ লক্ষ করে টাকা ও পর্যাপ্ত শুকনাে খাবার পাঠানাে হয়। নৌ বাহিনী ও কোস্ট গার্ড ভালাে কাজ করেছে। পটুয়াখালীতে হারিয়ে যাওয়া ১০০ জেলেকে উদ্ধার করেছে তারা। আগে থেকেই রাসমেলা বাতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী রাত জেগে সার্বক্ষণিক যােগাযােগ রেখেছেন, জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এ কারণে আমরা উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সাহস পেয়েছি।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সাত জেলায় নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়াে হাওয়ায় গাছ চাপায় আটজনের এবং আশ্রয়কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে একজনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে খুলনা, পটুয়াখালি, বরগুনা, মাদারীপুর, বাগেরহাট, গােপালগঞ্জ ও পিরােজপুরে। ‘বুলবুল’ আজ সকালে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অতিক্রম করেছে। তবে এখনও প্রায় সারাদেশে বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ঝড়াে হাওয়া।

রবিবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক চন্ডীদাস কুণ্ডু এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে বাংলাদেশের ১৬ জেলার ২ লক্ষ ৮৯ হাজার হেক্টর জমির ১৮ ধরনের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ১৮ ধরনের ফসলের মধ্যে রােপা আমন বেশি আক্রান্ত হয়েছে। বাতাসের তীব্রতায় ধান সহ অন্যান্য ফসল নুয়ে পড়েছে। তবে, ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নিশ্চিত হতে আরও তিন-চার দিন সময় লাগবে। কৃষকদের এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে দেশের ১৬ জেলার মধ্য বরগুনা, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, পিরােজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নােয়াখালি, ভােলা, চট্টগ্রামে বেশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে।