কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পকে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেননি প্রধানমন্ত্রী মোদি : জয়শংকর

বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর (Photo: Rajya Sabha TV)

কাশ্মীর নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের জেরে সরগরম হয়ে উঠল রাজ্যসভা। প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান জানতে চেয়ে এদিন সংসদ উত্তাল করে তােলেন বিরােধী দলের সাংসদরা। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের বিবৃতির পরও তুমুল হট্টগােলের জেরে শেষ পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি করে দেন চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডু। তাঁর আগে বিরােধীদের বেনজির তােপ দেগে তিনি বলেন, আপনারা কি দেশের প্রধানমন্ত্রী চেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বেশি বিশ্বাস করেন? দয়া করে বিষয়টিকে রাজনৈতিক রং দেবেন না।

সম্প্রতি পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠকের পর সােমবার ট্রাম্প দাবি করেন কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতা চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সাংবাদিকদের সামনে ট্রাম্প দাবি করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ইতিমধ্যে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে তাঁর সাহায্য চেয়েছেন। আর মোদির সেই আরজিতে সাড়া দিয়েই তিনি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

ট্রাম্পের মন্তব্যে কার্যত ঝড় বয়ে যায় দিল্লির অলিন্দে। মোদি সরকারের উপর খগড়গস্ত হয়ে ওঠে বিরােধী দলগুলি। এরপরই ট্রাম্পের মন্তব্য খারিজ করে নজিরবিহীন কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় ভারত সরকার। মঙ্গলবার লােকসভায় সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর সাফ বলেন, আমি স্পষ্ট ভাষায় আপনাদের জানতে চাই, কাশ্মীর নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে মধ্যস্থতার কোনও প্রস্তাব দেননি প্রধানমন্ত্রী।


কাশ্মীর সমস্যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলােচনার বিষয়। শিমলা চুক্তি ও লাহাের ডিক্লারেশনের উপর ভিত্তি করেই আলােচনা হবে। তবে সীমান্তের ওপার থেকে সন্ত্রাস অব্যাহত থাকলে আলােচনা সম্ভব নয়। তবে সংসদে বিদেশমন্ত্রীর বয়ানেও সন্তুষ্ট হননি বিরােধীরা।

প্রধানমন্ত্রীর জবাব চেয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। তারপরই একপ্রকার ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডু। বিক্ষোভকারীদের জাতীয় স্বার্থ নিয়ে রাজনীতি না করার আর্জি জানান তিনি। পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তােলেন, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওপর কি বিরােধীদের বেশি আস্থা রয়েছে? তারপরই অধিবেশন মুলতুবি করে দেন তিনি।

এদিকে শুধু দিল্লি নয়, ট্রাম্পের মন্তব্যে তােলপাড় ওয়াশিংটনও। প্রেসিডেন্টের বোস মন্তব্যের পর ড্যামেজ কন্ট্রোনে নেমে পড়েছেন মার্কিন কূটনীতিকরা। ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তােপ দেগেছেন মার্কিন সেনেটের দুই সদস্য। কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের মধ্যস্থতা, মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে টুইট করে মার্কিন কংগ্রেসের ডেমােক্র্যাট সদস্য ব্র্যাড শেরম্যান ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন।

আমেরিকার ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষ শ্রিংলার কাছে ক্ষমা চেয়ে সাফ জানিয়ে দিলেন আমি ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের কাছে ক্ষমা চাইছি, ট্রাম্পের এই খামখেয়ালি এবং অস্বস্তিকর মন্তব্যের জন্য। টুইটারে শেরম্যান আরও লিখেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি সম্পর্কে যাঁরা এতটুকু জানেন, তাঁদের জানা কথা যে গত সত্তর বছর ধরেই কাশ্মীর সমস্যায় ভারত কাউকে মাথা গলাতে দেয়নি। তাঁরা বরাবরই তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার বিরােধীতা করে এসেছে। এমনকী ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিও এই একই নীতিতে চলেন। তিনি কখনওই এমন একটা প্রস্তাব দিতে পারেন না।

সংসদে বিবৃতি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্পের দাবি খারিজ করে দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর । কাশ্মীরে সমস্যায় কখনােই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে মধ্যস্থতা করার অনুরােধ জানানাে হয়নি বলে বিবৃতি দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, আমি নির্দিষ্ট করে সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই এই বলে যে প্রধানমন্ত্রী কখনােই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এই ধরনের কোনাে অনুরােধ করেননি। পাকিস্তানের সঙ্গে যে কোনও ইস্যুতে শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক স্তরে আলােচনা করার নীতিতে ভারত অনড় আছে।

কাশ্মীর নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্পের বেফাঁস মন্তব্যের পর ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টায় আমেরিকা একজন প্রভাবশালী আইনপ্রণেতা ট্রাম্পের অস্বস্তিকর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছেন অন্যান্য আইনপ্রণেতারাও।

হােয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্প সটান বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে আর্জি জানিয়েছেন।

ট্রাম্পের বক্তব্য, আমাকে দিয়ে যদি সত্যিই হয় তা হলে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে আপত্তি নেই আমার। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথায় কয়েক সপ্তাহ আগেই প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছিল। উনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি মধ্যস্থতা করবেন? আমি জিজ্ঞাসা করি কোন বিষয়ে? তখনই উনি কাশ্মীরের কথা বলেন। ট্রাম্পের এই মন্তব্যে ব্যাপক আলােড়ন সর্বত্র।

ডােনাল্ড ট্রাম্পের দাবির পরে মঙ্গলবার টুইট করলেন রাহুল গান্ধি সেই টুইটে তিনি দাবি করলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেশকে গােপন সত্যিটা জানানাে উচিত। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডােনাল্ড ট্রাম্প সােমবার দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে মোদির বৈঠকের সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে কাশ্মীর সমস্যার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করতে বলেছিলেন।

এরপরই গতমাসে কংগ্রেস, সভাপতির পদ ছেড়ে দেওয়া রাহুল গান্ধি মঙ্গলবার টুইট করেন, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁকে বলেছিলেন, কাশ্মীরের ব্যাপারে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যস্থতা করতে। যদি সত্যি হয় তাহলে মোদি দেশের স্বার্থে এবং ১৯৭২ সিমলা চুক্তির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি দুর্বল প্রত্যাখ্যান কেবল নয়। প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই দেশকে বলতে হবে কোন গােপন কথা হয়েছিল তাঁর এবং ট্রাম্পের মধ্যে।