• facebook
  • twitter
Wednesday, 20 August, 2025

দেশে চরম দারিদ্রতার মধ্যেও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধি ২০ শতাংশ

পাকিস্তানের ফেডেরাল বোর্ড অফ রেভিনিউ (এফবিআর)-এর চেয়ারম্যান রশিদ মাহমুদ লাংরিয়াল এবং অর্থসচিব ইমদাদুল্লা বোসালও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এই বৈঠকে হাজির ছিলেন।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

খিদে পেটে বন্দুক নিয়ে দৌড়োনোর গল্প আমরা অনেক শুনেছি। এবার সেই প্রবাদই যেন পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বাস্তব রূপ নিতে চলেছে। সরকারের মাথায় ঋণের বোঝা। দেশের বহু মানুষ অনাহারক্লিষ্ট। তার মধ্যেই পাকিস্তানের শাহবাজ সরকার প্রতিরক্ষা খাতে ২০ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে চলেছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গোল্লায় গেলেও সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। যুদ্ধের প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখতে চান না বর্তমান পাক সরকার। চলতি অর্থবর্ষেই প্রতিরক্ষা খাতে এই ২০ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। মঙ্গলবার পাক সাংসদে পেশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেট। সেখানে দেশের সার্বিক উন্নয়নের খরচ ৭ শতাংশ কমানো হয়েছে। পরিবর্তে প্রতিরক্ষা খাতে ৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।

সম্প্রতি পাকিস্তানকে ৮৫০০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করেছিল আন্তর্জাতিক আর্থিক তহবিল সংস্থা বা আইএমএফ। সেই সময় আইএমএফের পক্ষ থেকে যে শর্ত পাকিস্তানকে দেওয়া হয়েছিল, এই প্রতিরক্ষা বাজেট সেই শর্ত লঙ্ঘন করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে। এদিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করা পাকিস্তানের বাস্তব সত্য সম্প্রতি তুলে ধরেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। তাঁদের রিপোর্ট বলছে, পাকিস্তানে দারিদ্র এখন চরম আকার ধারন করেছে। দেশের ৪৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক জনগণ দরিদ্র। এছাড়া ১৬ শতাংশ মানুষ এতটাই গরিব যে তাঁদের দু’বেলা খাবার জোটে না। বাজেট পেশের আগে সরকারের তরফে দেশের আর্থিক সমীক্ষার রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, কীভাবে গলা পর্যন্ত ঋণে ডুবে রয়েছে পাকিস্তান। মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত পাকিস্তানের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬ ট্রিলিয়ন অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় ২৩ লক্ষ কোটি টাকা। যা পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ইতিহাসে নয়া রেকর্ড। এহেন চরম দুর্দশার মাঝেও পাকিস্তান সরকারের এই প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি প্রশ্ন তুলছে তাদের মানসিকতা নিয়ে।

প্রসঙ্গত পহেলগাম হামলা ও ‘অপারেশন সিঁদুর’কে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভারতের পাল্টা সামরিক প্রত্যাঘাতে নাস্তানাবুদ হয়ে যায় পাকিস্তান। রীতিমতো পাক সেনাবাহিনীর কোমর ভেঙে দেয় ভারত। এরপরই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্যের আশায় বিশ্বের দোরে দোরে ঘুরেছে পাকিস্তান। আর্থিক সাহায্য মিলেছে আইএমএফ ও এডিবি-এর কাছ থেকে। যদিও জঙ্গিদের মদতদাতা পাকিস্তানকে ঋণ দেওয়ার ঘোরতর বিরোধিতা করেছে ভারত। কারণ পাকিস্তানকে দেওয়া ওই অর্থ সাহায্য বা ঋণ ঘুরপথে জঙ্গিদের কাছে পৌঁছে যাবে। ফের ভারত সহ বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বেড়ে যাবে। আর পাক সরকারের প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধির অর্থই হল জঙ্গিদের হাত শক্ত করা। কারণ, এই খাতে বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে যুদ্ধাস্ত্র কেনার পাশাপাশি পরোক্ষে বিভিন্নভাবে জঙ্গিদের মদত দেওয়ার মাধ্যমে নতুন করে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বাড়বাড়ন্ত ঘটাবে পাক সেনাবাহিনী ও আইএসআই।

এদিকে দেশের চরম আর্থিক দুর্দশার মধ্যে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ নিয়ে ঘরে বাইরে সমালোচনা শুরু হলেও ‘তেল ছাড়াই তেলেভাজা’র মতো সাংবাদিক ছাড়াই সাংবাদিক বৈঠক করলেন পাকিস্তান সরকারের অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ ঔরঙ্গজেব। মঙ্গলবার বাজেট পেশ হওয়ার পর বুধবার বাজেট পরবর্তী এই সাংবাদিক বৈঠক করলেন ঔরঙ্গজেব। কারণ তিনি সাংবাদিক বৈঠকে আসতেই অধিকাংশ সাংবাদিক সেই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান। এরপরেও দু-একজন সাংবাদিককে নিয়ে তিনি সেই বৈঠক করেন। পাক সংসদে সদ্য পেশ হওয়া বাজেট সম্পর্কে জানাতেই এই বৈঠক করেছেন সে দেশের অর্থমন্ত্রী। পাকিস্তানের ফেডেরাল বোর্ড অফ রেভিনিউ (এফবিআর)-এর চেয়ারম্যান রশিদ মাহমুদ লাংরিয়াল এবং অর্থসচিব ইমদাদুল্লা বোসালও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এই বৈঠকে হাজির ছিলেন। বুধবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এই তথ্য জানিয়েছে।

সাংবাদিকদের এই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে জানা গিয়েছে, বাজেট পেশ হওয়ার পর মঙ্গলবারই সরকারের তরফে সাংবাদিকদের জন্য বিশদ ও খুঁটিনাটি ব্যাখ্যা (টেকনিক্যাল ব্রিফিং) করার কথা ছিল। তাতে বাজেটে প্রস্তাবিত ব্যবস্থাগুলির আইনি ব্যাখ্যাও থাকার কথা ছিল। কিন্তু এফবিআর তা করেনি। সেজন্য সাংবাদিকরা বেজায় ক্ষুব্ধ হন। ঘটনার প্রতিবাদে তাঁরা বুধবারের সাংবাদিক বৈঠক বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন।

বুধবারের সাংবাদিক বৈঠকে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ঔরঙ্গজেব জাতীয় শুল্কনীতির সংস্কারগুলি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বাজেটের পক্ষ নিয়ে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে যে খাতে জনগণকে যতটা স্বস্তি দেওয়া সম্ভব, তা দেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা খাতে ২০ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধির কথা বাজেটে ঘোষণা করেছে পাক সরকার। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারের (আইএমএফ) শর্তগুলিকে মাথায় রেখে এই বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য, পরিবেশ খাতে বরাদ্দ আগের চেয়ে অনেকটা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।